[২৬ আগস্ট বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ও ছড়াকার আতাউল করিমের জন্মদিন। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ ‘চন্দ্রাবতীর খোঁজে’, ‘অদিতিদের গ্রাম্যখেলা’, ‘দীপালী মিত্রের প্রত্যাবর্তন’, ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’; ছড়াগ্রন্থ ‘আমেরিকায়’, ‘হবু রাজার রাজ্যটাতে’, ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’, ‘দু’হাত ভরে সোনার আলো’। এই লেখককের জন্মদিনে তাঁর একটি গল্পগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করেছেন কবি-সমালোচক ফকির ইলিয়াস ]
চন্দ্রাবতী আমাদের অতি পরিচিত মধ্যযুগের একজন মহিলা কবি অথবা আমাদের জানামতে বাংলা সাহিত্যর প্রথম মহিলা কবি। চন্দ্রাবতী হচ্ছেন মৈমনসিংহ গীতিকার একটি বিখ্যাত মহাকাব্য ‘মলুয়া’র লেখক, বাংলাভাষায় রামায়নের লেখক। চন্দ্রাবতী মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাসের মেয়ে। সেই অন্ধকার যুগেই তিনি গ্রাম-গ্রামান্তরে কবিগানের আসরে যেতেন বাবার সঙ্গে, সেই অন্ধকার যুগেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবিতা পড়তেন। চন্দ্রাবতী সেই অন্ধকার যুগের আলেকিত মানুষ। আর ‘চন্দ্রাবতীর খোঁজে’ কথাসাহিত্যক আতাউল করিমের ছোটগল্প সংকলন। লেখকের কাছে চন্দ্রাবতী কি একটি প্রতীকী চরিত্র, একজন আলোকিত মানুষের প্রতীক? প্রতীকী অর্থে ব্যবহৃত ‘চন্দ্রাবতীর খোঁজে’ কি প্রকৃত অর্থে আলোকিত মানুষের খোঁজে?
লেখকের নামগল্প ‘চন্দ্রাবতীর খোঁজে’র নায়ক নিয়াজ মাহমুদ একজন পাগল। সে কেবলই খুঁজে বেড়ায় চন্দ্রাবতীকে। নিয়াজ মাহমুদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, খ্যাতিমান লেখক। চাকরিসূত্রে মফস্বল শহর ময়মনসিংহে এসে পরিচয় হয় কেয়া নামের একটি মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটি তাকে দিয়েছিল ভালোবাসা।
মেয়েটি তাকে নিয়ে যেত ইতিহাসের কাছে, ঐতিহ্যের কাছে। নিয়াজের কাছে কেয়া ছিল চন্দ্রাবতীর মতো একজন আলোকিত মানুষ, সেই চন্দ্রাবতী, যিনি ভালবাসার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের অন্ধকার আচ্ছন্ন সমাজে এ রকম আলোকিত মানুষের অস্তিত্ব আসলেই দুষ্কর। কেয়া নিয়াজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, আর নিয়াজ সে আঘাত সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু তার স্মৃতিতে শুধু আছে মানসিক ভারসাম্য হারানোর পূর্বের সেই আলোকিত মানুষ চন্দ্রাবতী। তাই সে এখনো অহর্নিশ ঘুরে বেড়ায় চন্দ্রাবতীর খোঁজে।
চন্দ্রাবতীর খোঁজে গ্রন্থের প্রথম গল্প ‘কুশপুত্তলিকা’। গল্পটি ডেনমার্কের পটভূমিতে রচিত। গল্পের নায়ক বাংলাদেশের ছেলে শুভ হ্যাল ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের দেশ ডেনমার্কে যায় পড়াশুনার জন্য। সেখানেই তার অন্তরঙ্গতা ভারতের উড়িষ্যার মেয়ে সহপাঠিনী সরোজিনীর সঙ্গে। তাদের শিক্ষক প্রফেসর নেইলস এই যুগলকে খুব পছন্দ করতেন। প্রফেসর নেইলস তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন রূপকথার যাদুকর হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের জম্মভূমি ওডেন্সের একটি গ্রীষ্মমেলায়। মেলায় একটি কুশপুওলিকা পোড়ানো হচ্ছিল। যে কুশপুত্তলিকাটি পোড়ানো হচ্ছে সেটি রূপকথার ডাইনির কুশপুত্তলিকা। এই ডাইনি হচ্ছে সবরকম অশুভের প্রতীক। সবাই মিলে সবার সামনে এই কুশপুত্তলিকাটি দাহ করে মনে করা হয়, সমাজের সব রকম অশুভকে পুড়িয়ে ফেলে সমাজকে পুত-পবিত্র করা হলো। ডেনিশরা যদিও ধর্মের দিক থেকে খ্রিস্টান, পুত্তলিকায় বিশ্বাসের কোনো প্রশ্নই আসে না, কিন্তু অশুভের কুশপুত্তলিকা দাহ করার লৌকিক প্রথাটি তবু তারা ধরে রেখেছে। একজন একটি মশাল এনে কুশপুত্তলিকার মুখে ছুইয়ে দিল, জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠলো আগুনের কুণ্ডুলি। কুশপুত্তলিকাটি পুড়ছে। উপস্থিত দর্শকরা ডেনিশ ভাষায় সমবেত কণ্ঠে একটি মন্ত্র উচ্চারণ করছে। চমৎকার, বিষয়টি চমৎকার! কুশপুত্তলিকাটি পুড়ে ছাই হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। আর সঙ্গে সঙ্গে সমাজ থেকে, জীবন থেকে, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে সব পাপ, সব অশুভ। নিজের মনকে এবং পুরো সমাজকে সবাই মিলে পুত-পবিত্র করে ফেললো।
‘…সরোজিনি বললো নাগরদোলায় চড়ব। প্রচণ্ড ভিড়, অপেক্ষা করতে হবে। একটি ভারতীয় ছেলেকে দেখে সরোজিনী হ্যালো বলে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি ভারতীয়?
ছেলেটি বলল, না ।
তুমি কি বাংলাদেশি? ছেলেটি না সূচক উত্তর না দিয়ে বলল আমি ড্যানিশ। বলেই কোন ভদ্রতার তোয়াক্কা না করেই হনহন করে চলে গেল।
সাধারণত পাশ্চাত্যে এসে কেউ এ ধরনের অভদ্র আচরণ করে না। শুভর সন্দেহ হলো। অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশি পরিচয়টা দিতে চায় না। আমেরিকায় একবার শুভ দেখেছিল ওদের অ্যাপার্টমেন্টের একটি স্যুটে একজন বাংলাদেশি ছেলে ওর আমেরিকান বান্ধবীকে নিয়ে থাকতো। লিফটে করিডোরে কখনো দেখা হলে শুভ আলাপ করতে চাইলেও ছেলেটি এড়িয়ে যেতো। ডেনমার্কে এসে এখানকার অধিবাসী এক বাঙালির মুখে শুভ শুনেছে রাজশাহীর নীহার বানু হত্যা মামলার আসামি বাবু নাকি রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ডেনমার্কেই শেকড় গেড়েছে। কোনো বাঙালি দেখলে সে এড়িয়ে চলে। আরেক জন বাঙালির কাছে জানলো বাহাত্তর সনে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার সাহায্যে বেশ কিছু অনাথ বাঙালি শিশুকে সত্তাবিহীন অনেক ডেনিশ দম্পত্তি দত্তক নিয়েছিলেন। এসব শিশুরা ডেনিশ কালচারেই বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু চেহারায় বাঙালির ছাপটাতো মুছে ফেলা যাবে না।
প্রফেসর নেইলস এরপর ওদের নিয়ে গিয়েছিল নিজের খামার দেখাতে। পয়ত্রিশ হেক্টরের বিশাল খামার। নেইলস-এর মেয়ে লুসি এবং ওর একজন ছেলে বন্ধু মিলে খামারটি চালায়। লুসির বন্ধুটি মেলায় দেখা সেই ভারতীয় চেহারার ডেনিশ ছেলেটি। ওর নাম পল। এখানেও ছেলেটি ওদের এড়িয়ে চলল। নেইলস নিজেও ছেলেটি সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। এরপর শুভ এবং সরোজিনী একদিন নেইলসের সঙ্গে দাওয়াত পেল হলসব্রো শহরের ধর্মযাজক ফাদার জনের বাড়িতে। ফাদার জন এবং তার স্ত্রী আনা বাংলাদেশে একটি গির্জায় কাজ করতেন। তাদের মেয়ে লরেনের জন্ম সেখানেই। আনা বাংলাদেশে শেখা মসলার রান্না দিয়ে ওদের আপ্যায়ন করল। ফাদার জন বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে ওদের কৌতূহলের সেই মানুষ পলের বৃত্তান্ত বললো। পল বাংলাদেশের ছেলে। ফাদার জন জানালেন, তাদের মিশনারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই পলকে ডেনমার্কে দত্তক আনা হয়েছিল। যাদের যুদ্ধশিশু বলা হয়, সে অর্থে পল কোনো যুদ্ধশিশু নয়। তবে যুদ্ধে পলের পিতামাতা সবাই মারা গেলে পল যখন অনাথ হয়ে যায়, তখন মিশনারী সংস্থাটি অসহায় অনাথ শিশু হিসেবে পলকে আনার ব্যবস্থা করেছিল। এখানে এসে বড় হওয়া অবধি পল বাংলাদেশ সম্পর্কে শুনেছে কেবল দুর্ঘটনা আর দুর্যোগের খবর। সব মিলিয়ে পল বাংলাদেশকে ঘৃণা করে এবং নিজের জন্মের পরিচয়টি কখনো দিতে চায় না।
এরপর শুভর পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফেরার পালা। এ সময়ে ওদের অবাক করে দিয়ে পল একদিন শুভর সাথে দেখা করতে এলো। ওর হাতে একটি খবরের কাগজ। পল মেলে ধরলো কোপেনহেগেন থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিকের আন্তর্জাতিক খবরের পাতাটি। বাংলাদেশের রাজধানী থাকায় একটি কুশপুত্তলিকা দাহ করার ছবি। এর সঙ্গে ছোট একটি খবর। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী নেতা, যিনি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল স্থপতি, তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে বাংলাদেশের মানুষ নরপশুদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছে। শুভ পত্রিকার পাতার ছবিটা দেখে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনের সেই দৃশ্যটা অনুভব করার চেষ্টা করলো। বিরাট জনসমাবেশের সামনে পুশপুত্তলিকাটি দাহ করা হচ্ছে। ‘কত অশুভর বিরুদ্ধে শুভর সূচনা এই কুশপুত্তলিকা দাহ অনুষ্ঠানটি। আর কিছু না হোক, হাজার হাজার মাইল দূরের একজন মানুষ পলের চিত্তে সুখতো ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।’
গ্রন্থের দ্বিতীয় গল্প একটি এঁড়ে বাছুরের জন্য। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার একটি গল্প। গল্পটি দরিদ্র দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে আর হতাশা নয়, পাঠকের মধ্যে দেশটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি আত্মপ্রত্যয়ের জন্ম দেবে। আলোকিত মানুষ তৈরির স্টাডি সার্কেলের দু’জন তরুণ-তরুণীর হৃদয়ের রক্তক্ষরণের মধ্যে দিয়ে অনেক সুন্দর উন্মোচিত হয়ে ওঠে গল্পটিতে।
তৃতীয় গল্প ‘আদিম মানুষ’। সভ্যতার আড়ালে মানুষের যে আদিম সত্তা বর্বরতা তা ক্রমশ সমাজকে আঁকড়ে ধরেছে। একজন সন্ত্রাসীর চরিত্র চিত্রণ করতে গিয়ে লেখক আতঙ্কিত হয়ে উঠছেন, মানুষ কি হেরে যাচ্ছে রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের মোগলীর মা সেই পশুর কাছে, অথবা মানুষ কি হেরে যাচ্ছে এডগার রাইস বরোজের টারজানের মা পশুর কাছে? অবশ্য লেখক শেষ পর্যন্ত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ‘এটা কোনো আদিম পাহাড়ের গুহা নয়; কিংবা আফ্রিকার জঙ্গল নয়। এখানে লালিত হয়ে কোনও বর্বর আদিম মানুষ তৈরি হবে না। এখানে নির্মল পরিবেশে বেড়ে উঠবে পরিপূর্ণ মানুষ।’
‘অন্তর্গত ভালোবাসা এবং অবিনশ্বর নন্দনতত্ব’ গ্রন্থটির চতুর্থ গল্প। একজন শিল্পীর চিত্রকর্মের সম্পূর্ণ সংগ্রহটি বর্বর মানুষেরা ধ্বংস করে দেয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি পাক-ভারত যুদ্ধের প্রাক্কালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ে। শিল্পী আবার ছবি আঁকলেন। একাত্তর সনে হালাকু খানেরা আবার ধ্বংস করে দেয় তার সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্ম। অভিমানে শিল্পী ছবি আঁকা ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে যান এক প্রত্যন্ত গ্রামে। কিন্তু শিল্পী চাইলেও তার শিল্পসত্তাকে ধ্বংস করতে পারেনি। যমুনার চরে একটি নার্সারি স্থাপন করে মরুময় চরটিকে বৃক্ষ দিয়ে সাজিয়ে তুললেন। প্রকৃতির মধ্যে নিজের অজান্তেই গড়ে তুললেন এক বিশাল শিল্পকর্ম।
পঞ্চম গল্প ‘দেহান্তর’। একজন আদর্শবান মানুষ আবুল হাশেমের নৈতিক অবক্ষয়ের কাহিনি। সমাজতন্ত্রী আবুল হাশেম নীতিকে বিসর্জন দিয়ে রাজনীতি ছেড়ে একজন বিত্তবান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আবুল হাশেমের বন্ধু প্রাণেশ চক্রবর্তী আজীবন আঁকড়ে ছিলেন নিজের সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে। প্রাণেশ চক্রবর্তী দলের কাজের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন এবং আবুল হাশেমের কাছে চাঁদা আনতে গেলেন। আবুল হাশেম দলের জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদা দিয়ে নিজের বিবেককে শান্ত করতে চাইলেন, ভাবলেন ভালো কাজ করেছেন। ‘কিন্তু আবুল হাশেম বা প্রাণেশ চক্রবর্তী কেউই অনুভব করতে পারছিলেন না যে পরিণতিতে একটা বড় ধরনের ভুল থেকে গেল। যেখানে থাকবার কথা ছিল কিংবদন্তীর পুরুষ নিজামুদ্দিনের ছেলে আবুল হাশেমের, সেখানে এখন অন্য কেউ, যেখানে থাকার কথা ছিল আদর্শবান মানুষের প্রতীক ত্যাগী রাজনৈতিক কর্মী প্রণেশ চক্রবর্তীর, সেখানে এখন অন্য কেউ। যেখানে একটি ফলবান বৃক্ষ বেড়ে ওঠার কথা ছিল সেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছে একটা অকাষ্ঠল নিষ্ফলা মান্দার গাছ। ওরা এটুকু অনুধাবন করতে না পারলেও খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ানো জাঙ্গালীয়া, মঠখোলা কিংবা গোবিন্দপুরের মতো গ্রামের কৃষকেরা কিন্তু ওদের দেহাস্তর যথার্থই প্রত্যক্ষ করলো।’
গ্রন্থের ষষ্ঠ গল্পের শিরোনাম ‘বুনো মানুষের গল্প’। গল্পটিতে চিত্রিত হয়েছে সামন্তবাদের বিবর্তন। এক সময় জমিদারী ব্যবস্থা ছিল সামন্তবাদের প্রতীক। একজন সামস্ত প্রভুর মধ্যে বাস করা অন্য মানুষটি একজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যন থেকে নতুন ব্যবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে কেমন করে হয়ে উঠলো মহা ক্ষমতাধর।
সপ্তম গল্প ‘চন্দ্রকান্তের সরু গলি এবং জনৈকের অন্তেষ্টিক্রিয়া’। একজন আদর্শবান মানুষ সারাজীবন চাইতেন জনতাকে সংগঠিত করে ক্ষয়িষ্ণু ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিল্পবের আগুন জ্বালিয়ে তুলবেন, নেতৃত্ব দিবেন জনতার বিশাল মিছিলে। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নিজের শব মিছিলে এবং নিজেকে চিতার আগুনে পুড়িয়ে জ্বালিয়েছিলেন বিশাল আগ্নিকাণ্ড। সবশেষে গল্পগ্রন্থের নামগল্প ‘চন্দ্রাবতীর খোঁজে’ এবং এর আগের গল্পটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘পিলসুজ’। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটি ক্রমে ক্রমে হারিয়ে গেলেও একজন মাঠের যোদ্ধা পিলসুজের আগুনের মতো হলেও নিজের হৃদয়ে জালিয়ে রেখেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটি।
গ্রন্থটি পাঠ করার সময় আমরা দেখি গল্পগুলোর ভাষা প্রকাশভঙ্গি; ইত্যাদিতে রয়েছে নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা। লেখক প্রতিটি গল্পেই উপস্থাপনার কৌশলে নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করার চেষ্টা করেছেন। যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো ফুল মিলিয়ে একটি গুচ্ছফুল হয়ে সৌন্দর্য এবং সুঘ্রাণ ছড়ায়, সেরকম লেখক কয়েকটি গল্পে চেষ্টা করেছেন প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা শিরোনাম দিয়ে প্রতিটি অধ্যায়কে একটি মিনি গল্প হিসাবে উপস্থাপন করতে। আবার সব গল্প মিলিয়ে একটি সম্পূর্ণ গল্প গুচ্ছফুলের মতো সাফল্যের দাবীদার। সব গল্প মিলিয়ে পুরো গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে হিউম্যানিজমের পক্ষে। সামাজিক ত্রুটিগুলো উঠে আসলেও কোনো হতাশা নয়, বরং গ্রন্থটি পাঠকের কাছে যে ম্যাসেজটি পৌঁছে দিতে চেয়েছে, তা অবশ্যই আশাবাদ। গ্রন্থের উৎসর্গটিও একটি অনুগল্প। এর শিরোনাম গল্পের ভিতরের গল্প। ‘মেয়েটি প্রতিদিন জাপান সাগরে/পৃথিবীর প্রথম সূর্যোদয় দেখতো/দিন কাটতো তার/মানব মস্তিষ্কের জটিল গবেষণায়/এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদে।/ছেলেটি খুঁজতো পূণ্যবতী হৃদয়/মহুয়া মলুয়া চন্দ্রাবতীর মতো।’ এরপর উৎসর্গ ‘আমার দেখা পুণ্যবতী হৃদয় রেখাকে’। সাহিত্য তো হিতের সাথে বর্তমান। হয়তো এটা কোনো জীবনেরই গল্প।