লিটলম্যাগ কেবল সাহিত্য আন্দোলনের প্রবাহকে জিইয়ে রাখে না, পাশাপাশি এটি প্রথাকে তোয়াক্কা না করে নবীন লেখকদের সাহিত্যচর্চার আঁতুরঘর হিসেবেও ভূমিকা রাখে। অন্যান্য জেলা শহরের ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর থেকে মৃত্তিকা, উছল, বাঁক, চাষারু, অনপেক্ষ-এর মতো উল্লেখযোগ্য ছোটকাগজ প্রকাশিত হয়।এসব ছোটকাগজের উত্তরাধিকার বহন করে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবিতার কাগজ ‘তরী’র চতুর্থ সংখ্যা।
এ সংখ্যায় কেবল সারাদেশের লেখকরা লেখেননি, বাংলা ভাষার আরেক চর্চাকেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন ভাষাভাষী কবিদের উপস্থিতিও রয়েছে। এর ফলে ‘তরী’ পাঠপূর্বক পাঠকরা বিশ্বসাহিত্য, বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের কাব্যচর্চার বিষয়, শব্দ প্রয়োগ ও উপস্থাপনের মধ্যে সামঞ্জস্য ও প্রার্থক্য ন্যূনতম হলেও বিশ্লেষণের সুযোগ পাবেন।
আশিক বিন রহিম সম্পাদিত ‘তরী’র সূচিপত্রের গণ্ডিত পেরিয়ে কবিতাগুলোয় চোখ রাখলে বিশেষভাবে দৃষ্টি ও মনোযোগ কাড়ে রেজাউদ্দিন স্টালিন, পরিতোষ হালদার, ইসহাক সিদ্দিকী, মনসুর আজিজ, ইকবাল পারভেজ, মুজিব ইরম, মোস্তফা হামেদী, শাহ বুলবুল, সৌম্য সালেক, মাহফুজ রিপন, মৃন্ময় চক্রবর্তী প্রমুখের কবিতা। এ কবিতাগুলোয় ভাব ও শব্দচয়ন, উপমা ও চিত্রকল্পের বহুমুখী প্রয়োগ ঘটেছে। এছাড়া এ কে শেরাম অনূদিত মণিপুরী কবিতা, জব্বার আল নাঈমের নেওয়া রফিক আজাদের সাক্ষাৎকার, তপন বাগচীর তিনটি গীতি কবিতা আলোচ্য সংখ্যার শ্রীবৃদ্ধি করতে ভূমিকা রেখেছে। ‘তরী’ আলোচ্য সংখ্যায় দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আমিনুল ইসলাম স্বল্প পরিসরে বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ ও মাইনুল ইসলাম মানিক আমেরিকান ও আফ্রিকান সমকালীন কবিতা নিয়ে আলোকপাত করেছেন।
‘তরী’তে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কবি জুনান নাশিত। কবিতা ভাবনা ও এলিজি লিখেছেন যথাক্রমে পিয়াস মজিদ ও পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। ডেবিড ব্রুকস-এর কবিতা অনুবাদ করেছেন রনক জামান। অন্যান্যের মধ্যে কবিতা লিখেছেন সৈয়দ তারিক, তমিজ উদ্দীন লোদী, ফকির ইলিয়াস, মাসুদ মোস্তাফিজ, তছলিম হোসেন হাওলাদার, মাহতাব সুমন, আশরাফ জুয়েল, মুহাম্মাদ আমানুল্লাহ, রাসেল রায়হান, জিনাত জাহান খান, পলিয়ার ওয়াহিদ, ইমরান মাহফুজ, লতিফ জোয়ার্দার, কামরুল বাহার আরিফ, সারাজাত সৌম, প্রত্যয় হামিদ, রিয়া চক্রবর্তী, শামশাম তাজিল, সাম্মি ইসলাম নীলা, দুখাই মুহাম্মাদ প্রমুখ।
এর বাইরে চাঁদপুরের কৃতীসন্তান সাগরময় ঘোষকে নিয়ে একটি গদ্য ও ‘তরী’ আয়োজিত সৌম্য সালেকের ‘আত্মখুনের স্কেচ’ গ্রন্থের পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের সংবাদ ছোটকাগজটির আলোচ্য সংখ্যায় বিশেষভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে।
‘তরী’র ৪র্থ সংখ্যার অধিকাংশ লেখা মানসম্মত হলেও কিছু কিছু কবিতা সে-মানকে ক্ষুণ্ণ করেছে। ‘তরী’র অভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জা এবং বানান ভুল কবিতা পাঠের অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে। পুনর্পাঠে সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরানের গহীন ভেতর’ কবিতাটির বানান বিভ্রাট এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। এসব বিচ্ছিন্নতা এড়ানো গেলে নিঃসন্দেহে কাগজটি আরও সমৃদ্ধ হতো বলে আমরা মনে করি। এরপরও ‘তরী’ ৪র্থ সংখ্যা প্রশংসার দাবি রাখে। তাই লিটলম্যাগটির আলোচ্য সংখ্যা পাঠ শেষে পাঠক নতুন আরেকটি সংখ্যা পাঠের প্রত্যাশায় থাকবেন, এমনটাই স্বাভাবিক। ‘তরী’র কারিগরগণ আগামী দিনে লেখা নির্বাচনে সযত্ন হবেন, আমরা এমনই প্রত্যাশা রাখছি।
তরী
সম্পাদক: আশিক বিন রহিম
প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত
৬৪ পৃষ্ঠা,
মূল্য: ৫১ টাকা।