বিভিন্ন ঘটনার আর্কাইভ ফুটেজ দিয়ে নির্মিত কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জার টু লেনিন’। প্রগতিশীল আন্দোলনের এক যুগান্তকারী রেকর্ড হিসেবে আখ্যায়িত চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন হ্যারমান অ্যাক্সেলব্যাংক। সিনেমাটি লাখো মানুষকে ছুঁয়ে গেছে। বদলে দিয়েছে ইতিহাসের ধারাকেও । ম্যাক্স ইস্টম্যানের ধারাভাষ্যে আবেগ ও মানবতার মধ্য দিয়ে বিপ্লবের নাটকীয়তা ও উদ্দীপনাকে এই চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৩৭ সালে প্রথম মুক্তি পায় সিনেমাটি। বলা হয়ে থাকে, এই চলচ্চিত্র বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সিনেমা। ১৯১৭ সালে সমাজতন্ত্রীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত হয় শত বছর পুরনো জার শাসন। এরপর ভ্লাদিমির লেনিনের বলশেভিক পার্টির নেতৃত্বে হয় রুশ বিপ্লব। বলশেভিকদের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পর্যায়ে ১৯২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর প্রতিবিপ্লবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয় সমাজতান্ত্রিক রাশিয়াকে। সিনেমাটিতে ১৯১৭ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
১৯২০ সালে চলচ্চিত্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ১১ বছরের চেষ্টার পর ১৯৩১ সালে নির্মিত হয় পুরো সিনেমা। চলচ্চিত্রটির নির্মাণ শেষে অনেক বোদ্ধা এর প্রশংসা করেছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন চার্লি চ্যাপলিন।
সিনেমাটি ১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দর্শকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অন্যদিকে রুশ সরকার ও স্ট্যালিনপন্থী মার্কিন কমিউনিস্ট পার্টি ছবিটি বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপক প্রচারভিযান শুরু করে। ওই সময় স্ট্যালিনপন্থী নেতাদের চোখে ছবিটি তাদের স্বার্থসিদ্ধির পথে বিশাল এক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের দাবি সিনেমাটিতে ইতিহাসকে ভুলভাবে প্রচার করার চেষ্টা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর ১৯৭০ সালে সিনেমাটির মালিকানা হস্তান্তর হয় শ্রমিক লীগের হাতে। অ্যাক্সেলব্যাংক ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। শ্রমিক লীগ পরে সোস্যালিস্ট ইক্যুয়ালিটি পার্টি হিসেবে রূপ নেয়। পরবর্তী সময়ে তারা সিনেমাটির অসংখ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
মুক্তি পাওয়ার প্রায় ৮ দশক পরও ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে চলচ্চিত্রটির। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়ার পরপরই ইতিহাসের যে মিথ্যাচার ফের শুরু হয়, যা আজও চলছে, তার প্রেক্ষাপটেও সিনেমাটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
নতুন যুগের পুঁজিবাদী সংকট, অর্থনৈতিক ভাঙন, সামাজিক অসামাঞ্জস্যতা ও সামরিকতন্ত্রের ভয়াবহতার সময় ‘জার টু লেনিন’ ইতিহাসের সেই অধ্যায়ের প্রমাণ আমাদের সামনে তুলে ধরে– যখন সমাজতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিপ্লবে মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছিল।
পূর্ণাঙ্গ সিনেমা
https://www.youtube.com/watch?v=YAUAgjo_fCo
ট্রেলার
https://www.youtube.com/watch?v=DPJFvl4i8eQ