জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেবল স্বতন্ত্র বা খণ্ড কবিতা নয় গোটা কবিতাগ্রন্থ লিখেছেন আমাদের দেশের খ্যাতিমান কবিরা। মহাদেব সাহা, নির্মলেন্দু গুণ, মুহম্মদ নূরুল হুদা, অসীম সাহা, কাজী রোজী, কামাল চৌধুরী, বিমল গুহ, রবীন্দ্র গোপ, আসলাম সানী, আসাদ মান্নান, মিনার মনসুর, তারিক সুজাতের মতো খ্যাতিমান কবিরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কবিতাগ্রন্থ রচনা করেছেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও আজ বঙ্গবন্ধুর প্রতিরূপ সাহসী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তাকে নিয়েও রচিত হয়েছে কবিতার, ছড়া ও গানের পঙ্ক্তি। সেই সব রচনার সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু বিশিষ্ট কবির একক কবিতাগ্রন্থ এবার প্রকাশিত হলো জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিনে। ‘শেখ হাসিনার মানবসময়’ নামের এই কবিতাগ্রন্থ কোনো আরোপিত ও আয়োজিত প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নয়, একজন স্বনামধন্য কবির হৃদয়োৎসারিত অমোঘ পঙক্তিমালা। একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার মতো শীর্ষস্থানীয় কবি রচনা করেছেন এই কাব্য, যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জীবনের ৭৫টি অনুষঙ্গ ধারণ করে আছে। অভিনব এই গ্রন্থের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে শুভেচ্ছা জানানোর এই উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে উপায় নেই।
কারাবন্দি পিতা আর বক্ষবন্দি মাতার কথা অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুননেসা রেণুর কথা বলেছেন। তিন ভাই আর দুই বোনকে বলেছেন ‘স্নেহপুষ্পলতা’ আর শেখ হাসিনাকে ডেকেছেন ‘সুকন্যা সুজাতা’ অভিধায়
প্রথম কবিতায় মুহম্মদ নূরুল হদা পাখি প্রতীকে উপস্থাপন করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। সেই পাখি অনন্তের পাখি, লালসবুজের নীড়ে যে পরিধান করে আছে অনঙ্গের রাখি। লালসবুজের নীড় মানে এই স্বাধীন বাংলাদেশ, আর তাতে চিরায়ত বন্ধনে একীভূত হয়ে আছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার অবস্থানকে চিহ্নিত করেছেন প্রকৃতির পরিমণ্ডলে। নদীর দুপাশে তাল-তমালের সারি, উজান-ভাটির স্রোতে মাঝির গান, পাখির কাকলিতে শানাই-সুর, পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যিক নৌকার সোয়ারি হয়ে চিরায়ত বাঙলার যেন ফোটা ফুল আমাদের শেখ হাসিনা। এই অভূতপূর্ব বর্ণনা মুহম্মদ নূরুল হুদার স্বীকৃতি কবিপ্রতিভারই বিচ্ছুরণ। আবার এই কবিই শেখ হাসিনাকে উদ্দেষে করে বলে ওঠেন—
শাপল-শালুক দেশে
তোমার উপমা শুধু তুমি,
তোমার তো ভিন্ন কোনো
উপমেয় নাই।
এর মানে সর্ববিধ বিচারে শেখ হাসিনাই এই বঙ্গদেশে তুলনারহিত। শেখ হাসিনার বেড়ে-ওঠা প্রতিবেশ বর্ণনা দিতে গিয়ে কবি দাদাদাদি-ভাইবোনের মমতার কথা উল্লেখ করেছেন। কারাবন্দি পিতা আর বক্ষবন্দি মাতার কথা অর্থাৎ শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুননেসা রেণুর কথা বলেছেন। তিন ভাই আর দুই বোনকে বলেছেন ‘স্নেহপুষ্পলতা’ আর শেখ হাসিনাকে ডেকেছেন ‘সুকন্যা সুজাতা’ অভিধায়। শেখ হাসিনার পরিবারিক বন্ধনকে তিনি এঁকেছেন এভাবে—
কামাল-জামাল-শেখ রেহানা-রাসেল
বুকেপিঠে স্নেসুধা দিয়েছো অঢেল
সে সুধু সতত চিত্তে প্রবাহিত বঙ্গপরিবারে
হাজার ডানার বাঁকে, নদীস্রোতে, উড়াল সাঁতারে।
মানুষের জন্মকে কবি মৃত্যুময় বলেছেন। ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ এই সত্যের চেয়ে অগ্রসর হয়ে কবি মৃত্যুকে পুনর্জন্মময় বলে আখ্যা দিয়েছেন। দার্শনিক প্রজ্ঞায় কবি গোত্রযাত্রা-জাতিযাত্রাকে অনন্তের অঙ্গে লীন হওয়ার কথা বলেছেন।
আর একথা বলাই বাহুল্য যে দেশের শীর্ষস্থানীয় কবির কণ্ঠ যেন সমগ্র বাঙালির কণ্ঠ হয়ে বেজে উঠেছে। এরকম একটি গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার পাশাপাশি কবি তারিক সুজাতকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়।
আর এর মাঝখানে শুদ্ধস্বর মানবতা, রথচক্রে মাঙ্গলিক মানবসময়’ বলে শনাক্ত করেছেন। শেখ হাসিনার শুদ্ধ জীবনকেই তিনি বলতে চেয়েছেন ‘মানবসময়’। তাই মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতাগ্রন্থের নাম হয়ে ওঠে ‘শেখ হাসিনার মানবসময়’। মানবসময়ে অধিকৃত হয়ে শেখ হাসিনা তো থেমে থাকেন না।
জনকের জন্মশতবর্ষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মিলে জাঙালি জাতির ‘সংশপ্তক মানবসময়’ শুরু হয়, যা ‘সর্বমানবের হিতকর মানবসময়’ হয়ে ওঠে। কবি মনে করছেন এই কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। কবি তাই জাতির পিতার জয় ঘোষণা করেছেন, শোণিতের উত্তরাধিকারের জয় ঘোষণা করেছেন, শেখ হাসিনার মানবসময়ের জয় ঘোষণা করেছেন। ৭৫তম কবিতায় ৭৫ বছরের শেখ হাসিনার জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ‘বিশ্বমানবের মানবসময়’-এর জয় কামনা করেছেন।
একজন রাষ্ট্রনায়কের জন্মদিনে ৭৫টি কবিতার শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা সমগ্র বাঙালির পাশাপাশি বিশ্বমানবতার জয় প্রার্থনা করেছেন। এর চেয়ে ভাল উপহার আর কী হতে পারে! আর একথা বলাই বাহুল্য যে দেশের শীর্ষস্থানীয় কবির কণ্ঠ যেন সমগ্র বাঙালির কণ্ঠ হয়ে বেজে উঠেছে। এরকম একটি গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার পাশাপাশি কবি তারিক সুজাতকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমরা তাই শেখ হাসিনার জন্মদিনের (২৮ সেপ্টেম্বর) দুদিন পরে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার জন্মদিনও (২৮ সেপ্টেম্বর) উদযাপন করতে পারি ‘শেখ হাসিনার মানবসময়’ গ্রন্থের জয় ঘোষণা করে।