প্রশ্ন
খুব ভোরে প্রতিদিনকার মতো আজও তুমি একরাশ ফুল নিয়ে মণ্ডপে যাচ্ছিলে, আমি ভাবলাম, সারা রাত ধরে তুমি একমুঠো নক্ষত্র কুড়িয়ে এনেছ। সাধারণত, এত ভোরে পশ্চিমের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ানো হয় না আজকাল। দাঁড়ালে, গৌরীদের পোড়ো বাড়িটা বুকের ওপর সারা দিন ভর করে থাকে।
ঘাটের মসজিদে ফজরের আজান শেষ হলে, দত্ত বাড়ির বেণু কাকুর রেওয়াজ শুরু হয়। আর, ভোরের প্রশান্ত বাতাসে উড়তে শুরু করে হলুদ প্রজাপতির মতো অসংখ্য এসরাজ। কিছুদিন হলো তিনি সংগীতে মনোনিবেশ করেছেন।
তোমার প্রার্থনা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকি। তুমি মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে আসার পথে তরল অন্ধকারে একটা প্রশ্নের নৌকা ভাসিয়ে দাও। আর জানতে চাও—প্রতিদিন সকালে তোমার স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভাঙে কিনা।
হৃদসংক্রান্তি
আমার হৃদপিণ্ড ঠোঁটে করে উড়ে যাচ্ছে যে পাখি, তার জন্য এই উলুধ্বনিময় সন্ধ্যা। ভাবছি, কে হবে আজ এই হৃদ্সংক্রান্তির যোগ্য পুরোহিত। ও পাখি বলো, কোন পুরাণে তোমার বসবাস? আর কোন সর্গে তোমার স্নানদৃশ্যের ললিত শোলোক? আমি ফেটে-পড়া ডালিমের বিচ্যুত দানার মতো এই জীবন পুরোটা বন্ধক রেখে তোমাকে একফোঁটা পবিত্র জল এনে দেব।
পাতা আছে মঙ্গলঘট; এখনই বেজে উঠবে করুণ পাঞ্চজন্য। আতপ হলুদ আর শিলনোড়া নিয়ে ওই তো বসে গেছে গ্রাম্য বধূরা। বাটা হবে হরিতকী নিম সুগন্ধি চন্দন। এই মাহেন্দ্র-মুহূর্তে দূর্বা আর তিল-তুলসীভরা বরণ-কূলা নিয়ে কীভাবে দাঁড়াই— আমি তো সেই অবিমৃশ্যকারী, যে এক নিষিদ্ধ নদীর আহ্বান উপেক্ষা করতে না পেরে বেছে নিয়েছে অন্ত্যজ—অচ্ছুৎ জীবন…
সমুদ্রসঙ্গম
ছুটে আসছে ফণাতোলা ঢেউ—এত নাচমুদ্রা ধরে আছো পৃথুল শরীরে… সমুদ্র, সাঁতার জানি বলে তোমার মাহাত্ম্য এতটা বিশদ—
এই তো দিয়েছি ঝাঁপ। কে জানে তোমার কতটা গভীরে আমার গন্তব্য স্থির হয়ে আছে—মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, না কি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড? বলো, বিষতির বিদ্ধ করে কত দূর গেলে শোনা যাবে শিস—শাঁখের নিনাদ?
প্রবালমহল আর ঝিনুক-অরণ্য ঘুরে আজ কোনো মুক্তা কুড়াব না। বরং ল্যাবরাডার, পেরুভিয়ান স্রোত কেটে কেটে একদিন অন্তরীপবাসী হব। কেননা প্রশান্ত, পীত, বঙ্গোপসাগর আর শৈবালসমুদ্র ঘুরে আমি আজ জলমুগ্ধ জীব।
একদিন তোমাকেও মুগ্ধ করে দেব। আর জানি, সেদিন লোনা ঢেউয়ের গর্জন ছাপিয়ে তুমিও বলে উঠবে—সহসা শরীরে বর্শা গেঁথে দিল এ কোন মাছকুমার…