মিডনাইট লাইফ
নৈরাশ্যকে বলি ঘিরে থাকো। বসাতে বা দাঁড়াতে, শোয়াতে বা ঘুমাতেও ছেড়ে যেও না থৈ-থৈ উম্মুল প্রলোভনে। সিঁথি বরাবর ফিরোজা রঙের টিপ পরে নিও, অলস কোনো নদীর ধারে শুয়ে-বসে এক বেলার নির্জনতা রেখে এসো গোপনে।
স্বপ্নের কোনো উদগ্র বাসনা নাই। চিরহরিৎ এর বনে শুকনো পাতাদের রেখাচিত্র থাকতে নেই। স্বপ্নে একবার হাইনরিখ হাইনে এই সত্য বলে গেলেন! বললেন, বৎস জন্মসূত্রের প্রথম ভ্রুণটা জমা করে রেখো, সুযোগ বুঝে ফিরিয়ে দিও পিতার গৃহে!
হাইনের পরামর্শে স্বপ্নে সেদিন আবুল হাসান, রুদ্র মুহম্মদ ও শামীম কবীর’কে দেখে নিলাম!
সু-শীতল কাচের ফার্নিচারে আটকে থাকে মোহনীয় বনফুলের সুবাস, তিন-তিনটা লিকার শপ পার হয়ে রোজ আধ-মাইল দূরের ঘরে ফিরে যাই।
.
মিডনাইট লাইফ-২
[মেরিল্যান্ডের বারে একজনকে কাঁদতে দেখে যাকে মনে পড়লো; রুদ্র অনির্বাণ এখন কেমন আছে?]
মদের সঙ্গে ভালোবাসাবাসির সম্পর্কটা আর হলোই না। কে জানে মদ হয়তো ভালোবাসতেই জানে না।! যেকেউ একজন সুনাগরিকের মদ্যপানের সঙ্গী হতে দ্বিধা করিনি কোনো দিন! তবু চারুকলার শুকনো পুকুর কিংবা ছবিরহাটের দূর্বা-গন্ধা ঘাসেই ডুবে র’লো মন….
পিজি হসপিটাল—আজিজ সুপারের মাঝ বরাবর গলিপথের মধ্যরাতে কারা মুখরিত হতো? পিককের আবছা আলোয় মিহি সুরে কেউ গাইতো না বৃষ্টির গান। তবু কাচপাত্র উপচে ঘনসবুজ বরফগলা বর্ষা নামাতো কারা? টেবিল ভাগাভাগিতে সিনিয়র কবিরা বরাবরই আপস দেখিয়েছেন। বরফকুঁচি হাতে ফিফটি+ বড় ভাই একদিন কানের কাছে ঝুঁকে এসে বললেন, সব শালা কবিতা লেখে অথচ একটাও কবি না। কবি হলে পকেট ভরতি টাকা পাশ কোথায় শালা কবির দল! শালারা সব চাকুরীজীবী নয়তো ব্যবসায়ী, কবি না মোটেই।
বরফের ভগ্নাংশ বেয়ে নেমে আসতো বেসামাল রাত। উবু হয়ে বসে থাকা কবিতারা দূরের কোনো একাকী দ্বীপে খুঁজে নিতো পাখি ও পাতাদের যৌথ স্বরলিপি। সোডিয়াম বাতির মতো নিভতে নিভতে জ্বলে উঠতো নীল আগুন— জ্বলে ওঠা নীলের পেয়ালা হাতে এক রাতে বন্ধুকে খুব কাঁদতে দেখেছিলাম!
এই যে নির্ঘুম রাত আর চেরি-ম্যাপলের বনসারি পার হয়ে রোজ,
কারা যেন আনমনা স্যোনাটার সুরে দলবেঁধে গান গেয়ে যায়—
A Midnight Moon at my Eye’s…A Peaceful Death on my Mind!
স্যোনাটা: পশ্চিমা সঙ্গীতের এক ধরনের লোকজ সুরধারা।
আমরা তখন ঢেউ
পাড়ার সবুজ মাঠ, আমরা তখন ওয়ালজাম্পার
স্কুলব্যাগে ফুটবল নিয়ে যাই
মাঠের পরে অট্টালিকা, বিকেল হলেই সন্ধ্যাতারা
আমরা তখন দেশলাই হয়ে যাই
ঠোঁটের ভাঁজে গোল্ডলিফ, বুকপকেটে দশটাকা নোট
আমরা তখন ডাবল শো’তে যাই
আমরা তখন আজিমপুরে, সে যখন ষোলো পেরিয়ে…
বুকের মধ্যে বুড়িগঙ্গা—
আমরা তখন এপার ওপার ঢেউ খেলিয়া যাই !
.
স্ট্রিট ম্যাডনেস
ধরো—ওইদূরের কাশবনে ফাটা বাঁশের বাঁশি হাতে উপুড় করে ধরে থাকা কদমগাছটাকে নিয়ে যাচ্ছি মঙ্গলে…চিৎ-কাৎ-সোজা-বাঁকা, যেদিক দিয়ে গতায়ত সহজ হয়; যাচ্ছি! মঙ্গলের মাটিতে অমঙ্গল—এই সত্য অগ্রাহ্য করে তবু যাচ্ছি।
বকুলের সেন্স ও সুগন্ধ ভারি তীব্র আর দীর্ঘ, ফলে এ যাত্রায় তাকে বিরত রাখতে হলো। লালসব গ্রহে সবুজ-সবুজ অক্সিজেন হাতে ধরে আছি বুননকলার যাবতীয় আলোকলতা। হারিকেনই সাক্ষী,কেননা ঐ বিদ্যুৎবিহীন সন্ধ্যা কার না মনে থাকে? ডোবা-নালা,শ্যাওলা ধরা পুকুর না, তারেতো আমি কোমল সরোবরের নদীটাই দিতে চাইছি! নৌকা-বৈঠা, স্বর্ণলতার ছোপ আরো কতো কি! অথচ সে কিনা মাঝপথে পেণ্ডুলাম হারিকেন রেখে মিলিয়ে গেলো ঘন কুয়াশার চৌরাস্তায়…
তুষারমগ্ন তুন্দ্রাঅঞ্চলেও শৌখিন বাঁশঝাড়ের দেখা মেলে— গ্রাম্য খ্যাপাটে প্রবচণের কথা তো সকলেরই জানা!
সুঁচ ও সুতার মতো গাঁথাগাঁথি জীবন চেয়েছি—
কখনওতো বলিনি কবিতার নহরে ভাসবো-ভাসাবো কোনো বে-খেয়ালের চূর্ণ জীবন!
.
শ্যানেনডোয়াহ’র স্কাইলাইন, ঘাসফুল!
ফুটে আছো ঘাসফুল, একাকী গহীন পথে
তোমাকেই লেখা হবে প্রভূত বিন্যাসে, আবার তোমাকেই হবে না—
তুমি এক অপরাজিতা বিয়াত্রিচে!
এই যে রোদ,পাতা আর পাখিদের স্বরলিপি ঠোঁটে
তোমাকেই আঁকা হবে সুলতানের ক্যানভাসে, আবার তোমাকেই হবে না—
তুমি এক বিষণ্ণ খরস্রোতা দূরগামী ছায়াপথে!
ফুটে আছো ঘাসফুল, চোখে ও চোখের চারদিকে
রোদমিছিলের মলাট হয়ে একদিন, ঘুরে আসো দিগ্বিদিক
ছুঁয়ে আসো ভাটিয়ারী অথবা শ্যানেনডোয়াহ, যেদিকে খুশি
লুরে কাভার্নের জলপাথরে একবার কান পেতে শুনে নিও
চিরহরিৎ ম্যান্ডারিনের সুর, ব্যাথাতুর অর্কেস্ট্রা!
আলপথ খুঁজে পাবে অশ্বারোহীর দল, রোদ ঝড় বৃষ্টিতে তুমি কেবল থেকো অবিচল।
তুমি বন্ধু একাকী গহীন পথে—
সব ব্যাথা কলিতে ধরে ফুটে উঠে ঝরে যেও নিভৃতে, গোপনে!