আমাদের বিষণ্ন বৃষ্টিরা
[ মহাশ্বেতা দেবী -কে মনে রেখে ]
তুষারকাল পেরিয়ে এলেই শেষ হয় না শীত
কিংবা হাত ধরলেই বলা হয় না—’ভালোবাসি’
অথচ এই মাটির গহীনে জমা আছে যে জল
তার বিশুদ্ধ পরাণ দেখে
. আমরা মিটাতে চেয়েছিলাম আমাদের তৃষ্ণা।
বৃষ্টিশিশুরাও তৃষ্ণাকাতরতায় ভুলে গিয়েছিল
সকল বিষণ্নতার গান। এই নগরে—
অনাহারী পাখিরা মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে
মিলিয়েছিল সুর,
আবার দেখা না—ও হতে পারে, জেনে
জলেই মিলিয়ে গিয়েছিল সকল বর্ষাকাল।
একটি বৃক্ষমিছিলের স্মৃতি
ভাঁজ করা কথাগুলো উড়ে যায় জানালার শিকল ছুঁয়ে
এই আলো যখন নিভে যায়, কথাগুলো ডানা মেলে—
কয়েকটি বৃক্ষ তাদের নিজস্ব গরিমা নিয়ে,
কানে কানে বলে
একদিন আমরাও যাব মিছিলে-মানুষের সাথে।
ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় আমরা এখনও যে
বৃক্ষছবি দেখি,মুলত তা মানুষের হাত ধরার দৃশ্যের।
যে মানুষেরা এখন আর আয়ুময় নয়—
তাদের জন্যই কেবল অপেক্ষা করে
চিরকালের পত্রকপাট।
বাজনার বসন
তুমি আমার খোলাচুলে হাত রাখতে চাইছো
অথচ জানতে চাইছো না,
আমার হাতের বাজনা, কি বসন পরেছিল
কাল সারারাত-
জানতে চাইছ না,
কেমন ঢেউ এসে ধুয়ে দিয়েছিল
আমার চারপাশে মৃত, রক্তাক্ত পৃথিবীর হাত।
সেতুসমগ্র
সেতু আর সাঁকো’র পার্থক্য খুঁজে আমার
রাত কেটে যায়। পার হতে পারবো কী না-
অথবা পৌঁছুতে পারব কি না গন্তব্যে
তা থেকে যায় অনির্ধারিত ।
ওপারে যাওয়ার জন্য সেতুই আমার বাহন
হতে হবে—এমন কোনও কথা নেই
যদিও,
তবু অতিক্রমের অন্য নামই উত্থান—
এই কথাটিই জানি যুগে যুগে বড় জনপ্রিয়।
শোকের শোরুম
আগুনকে রক্তের সাথে মেশালে কেমন দৃশ্য তৈরি হয় !
কিংবা শোক-কে শো’কেসে সাজিয়ে কেউ যদি দেখতে
চায় নিজের মুখমণ্ডল!
গণনাতীত সুখের পাপড়ি সায়রে ভাসিয়ে যারা ছেড়ে যাচ্ছে
ঘর- আমি তাদের জন্যই লিখে যাচ্ছি এই কবিতা।
যারা মানুষ খুন করছে
যারা উপাসনার খাতা রাঙাচ্ছে রক্তে
না—তাদের জন্য আমি কোনও শোক রেখে যেতে চাইছি না।
পুনর্মুদ্রিত ভোরকে কেবল শান্তিসংকেতের সাক্ষী রেখে যাচ্ছি।