সুঠাম কটিদেশে পুরুষালী বুক
কথা দিলে মেঘ হবো পলকা
হাওয়ারা জড়ালো আচমকা—
এত কাছে যে মুখ দেখা যায় না
এত কাছে যে শ্বাস নেওয়া যায় না
পৃথিবীর বাসিন্দা প্রেম খুঁজে পায় না।
খোলা পিঠে আলুলায়িত চুল
ঘর্ষণের উন্মাদনা জ্বলে আকুল
এত ঝলক যে আলো দেখা যায় না
এত ঝলক যে নেভানো তো যায় না
প্রেমিক তবু প্রেমিকা খুঁজে পায় না।
সুঠাম কটিদেশে পুরুষালী বুক
পথের বাঁকে বাঁকে খুঁজে পাওয়া সুখ
এত যে আনন্দ চোখ মেলা যায় না
এত যে আনন্দ ঠোঁটে ঠোঁট রয় না
আমাদের মুখ কোনো কথা কয় না।
গন্ধরাজ খোঁপায়, হাতজুড়ে বেলি
শামুকে ঝিনুকে উন্মত্ত জলকেলি
এত যে মুদ্রা তবু নৃত্যকলা হয় না
এত যে মুদ্রা তবু সুখ কেনা যায় না
তোমাকে কাছে পেতে আর তর সয় না।
কৃষ্ণচূড়ামাখা সেই হাসি
কণ্ঠে নেওয়া কৃষ্ণের বাঁশি
এত যে মধুর চোখ ফেরানো যায় না
এত যে মধুর আবেশ সরানো হয় না
পৃথিবীর বাসিন্দা হয়েও প্রেম করা হয় না।
চন্দ্র ছড়ায় চন্দ্রমল্লিকার ঘ্রাণ
রামধনু-রঙে ঢেলে দেয় প্রাণ
এত যে জল তার তল পাওয়া যায় না
এত যে জল তাতে নাও বাওয়া যায় না
প্রেমিক-প্রেমিকার নিঃশেষ হওয়া হয় না।
জিয়নের কাঠি থাকে পুরুষের হাতে
নারীর মরণ বুঝি থাকে সেই সাথে
এত যে জীবন তাতে মরণ থাকে না
এত যে মরণ তাকে জীবন রাখে না
জীবনের মাঝে তবু মরণ ঢাকে না।
অমোঘ বুদবুদে কাটে রাতদিন
রক্তিম বেদনায় অমার বিলীন
এত যে অমূল্য সে বিষাদ গ্রহণ
এত যে অদৃশ্য সে নিষাদ হরণ
প্রাঞ্জল ব্যঞ্জনায় চলে ভাষাবরণ।
কিচিরমিচির নামে বাগান-বিলাসে
সুখায়ু ফুরিয়ে যায় তারই তালাশে
এত যে মহিমা তার হৃদয় আরণ্যক
এত যে মহিমা তার বিমূঢ় সমার্থক
ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলে রাত্রি অনর্থক।
যাদুর রহস্য মেলে দেবো খুলে
নিরাভরণ গয়না গায়ে দিয়ো তুলে
এত যে সুধা তবু প্রাণে সয় না
এত যে সুধা যেন যেচে রয় না
মদিরা বিহীন প্রাণে বাঁচা যায় না।
দরোজা দিয়েছি খুলে জানালার পানে
দূর থেকে ভেসে আসা সুমধুর গানে
এত যে বিবশতা চোখ সরে না
এত যে বিবশতা ফুল ঝরে না
সোমত্ত মন না-হলে মত্ততা হয় না।
নিশ্চিহ্নের কিছু চিহ্ন রাখা ভালো
প্রদীপের তলে থাকা ঘুটঘুটে কালো
এত যে আলো তবু দেখা হয় না
এত যে আলো তবু চিহ্ন রয় না
গ্রীবাজুড়ে চিহ্নরেখা মুছে দেয় না।
আমি আর সে ভিন্ন তবু অভিন্ন
আমাদের চাওয়াপাওয়া বিভিন্ন
এত যে অভিন্ন তবু কাছে পাই না
এত যে বিভিন্ন তবু পাছে যাই না
দূরে থেকে হৃদয়ের দূরে যাই না
সুগন্ধের সাথে সাথে প্রজাপতি ওড়ে
পাপড়িগুলো শুধু যায় ঝরে পড়ে
এত যে ঘ্রাণ সে তো বিলীন হয় না
এত যে ঘ্রাণ সে তো ঝরে যায় না
ঝরাফুলে মালা হয় পুজো হয় না
কপট দেখাবো বেখবর আছি
আসলে রয়েছি খুব কাছাকাছি
এতটা লুটপাট পঙ্খীরাজ সওয়ার
এতটা লুটপাট হয়ে যাও হুঁশিয়ার
হবেই হবে, হয়, যা আছে হওয়ার।
আমি তো মহীয়ান তোমার প্রেমে
রুমালে তুলে রাখা কারুকাজ হেমে
এত যে সুন্দরতা করেছে বিজন
এত যে সুন্দরতা লুটেছে সুজন
আমাদের প্রেম তাকে করেছে সৃজন।
হীরকে কাটা কাচ হয়ে অপরূপ
খুলে খুলে দেখাবো চুনিরঙা রূপ
এত যে রূপ তাতে ধর্ম থাকে না
এত যে রূপ তাতে আগুন ঢাকে না
মন না জাগলে তো শরীর জাগে না।
প্রতিস্থাপিত হয়ে বিভা হয়েছি
নারী হওয়া তাই ছেড়ে দিয়েছি
এত যে বিভা তার বাসনায়
এত যে বিভা ভরা আঙিনায়
মোহ নয় মুগ্ধের কামনায়।
প্রকাশিত হয় যত গোপনের কথা
মুছিয়ে দিয়ে একে অপরের ব্যথা
এত যে ক্লান্তি তোমাকে দেখে বাঁচি
এত যে যাতনা তোমার কাছে যাচি
তীরে ফেলে নোঙর দূরে বাঁধি কাছি।
অনন্তের প্রেম নেবে এসো
আমায় শুধু একটু ভালোবেসো
এত যে অনন্ত কেউ শান্ত হয় না
এত যে অনন্ত কেউ বিরান সয় না
দেহমন ছাপিয়ে লীন হয় না।
আরও পড়ুন: মন, আয়না ও জঙ্গলে ॥ মাসুদুল হক