সায়মা হক
সায়মা হক। আমাদের অগ্রজ ছিলেন। সাদামাটা। আটপৌরে।
আমরা তখন ১৮ দিকে যাচ্ছিলাম। তিনি ২৫ অতিক্রম করছিলেন।
আর দূরে, চট্টগ্রামে, একজন সদ্য বিদায় দিলেন ৩১টি বসন্ত।
এভাবে কিছুদিন।…আমরা পার করে যাচ্ছিলাম ১৮, ১৯…
এভাবে অনেকদিন। আমাদের কুড়ি তখোন।
সায়মা হক আগেই থেমে গেলেন ২৬-এ।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে যিনি আছেন, তিনি পঁয়ত্রিশতম
বসন্ত উদযাপন করছিলেন অন্য ২৫ কে নিয়ে।
কোথায় পাবো তারে
কোথাও মিশ খাওয়াতে পারছি না। যেখানেই দৃষ্টি ফেরাই মুমূর্ষু লাগে।
গীর্জার ঘণ্টাধ্বনি সেই কবে শুনেছিলাম, ওদের মেয়ের নাম ছিল
সেলিনা ডি কস্ট্রা; কেমন কোকড়ানো চুল ছিল, ঠোঁট ভরা অযুত আঙুর
আমাকে বলেছিল-নেবে? হৃদয়ের দুর্লঙ্ঘ্য আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে ফিরিয়ে
দিয়েছিলাম ওই ছলোছলো রৌদ্রে;
শূন্য লাগে; শূন্য লাগে।। পার্সিরা এ দেশ ছেড়ে চলে গ্যাছে। কবেই।
বুঝিনি, আমার যৌবন: শূন্য থালায় ফুটে আছো অসম আকাঙ্ক্ষা।
যেখানেই দৃষ্টি ফেরাই মুমূর্ষু লাগে।। মৃতমানুষের হাড়ে জাহাজ ভাসে অবোধ্য আশ্রয়ে।
পদাবলি
এখন বিকেল চারটা। সাপেরা সেতারের শব্দের দিকে
এঁকেবেঁকে চলেছিল রাস্তাটা
এখন আমার দুপর। নিভে গ্যাছে সব ক’টি বাতি
ভাঙতি দিনের উচ্ছ্বিষ্টে রোজ রাত্রি
বেঞ্চিতে বসে থাকো বাদাম বিক্রেতা। এখন হন্টন
লণ্ঠন হাতে কতবার গিয়েছি শ্মশানের কাছ ঘেঁষে
পাতার জ্বালানি। ভেতরে ধোঁয়ার বালখিল্য
আমাদের গোলায় ধানের বদলে শঙ্খিনীর দাম্পত্য
ধমনীর গভীরে
রক্তের প্রতিটি কণাই আত্মা; আমি ভালোবেসে
সেই প্রবাহের মধ্যে অরণ্যবাস করছি।
সন্ধ্যায়, সকালে, দুপুরে প্রতিটি নিদ্রায় কোলাহলে
শীতের তীব্র উত্থান টের পাই, মৃদু মৃদু শারীরিক শব্দ
আর ঝর্ণার গর্জনের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে সাপলতা
কেউ জানতে চাইলো না লাল রাত্রিবাস শেষে
দেবতারা কার পদ্মনাভীতে দীর্ঘশ্বাস রেখে যেতো
আমি কোন মহত্ব বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়িনি,
ইস্কুলে হাওয়া এসে
তবু ডেকে নিয়ে গেছে ধমনীর গভীরে।