মানুষ
কাউকে কখনো মানুষের মতো হাসতে দেখিনি। অথবা এমন কিছু দেখিনি যাকে মানুষ ভেবে নিজেকে মেপে দেখা যায়—কতটুকু মানুষ হলাম!
আগামী স্বপ্নে একটা বিড়াল কিনবো;
হলুদ মেখে—নাম রাখবো মানুষ!
নিকটবর্তী কোনো ডোবায় নাচতে দিয়ে—দেখতে থাকবো ভেতরের নাচগুলো কত মুহূর্ত বাঁচতে পারে।
…আর বিড়াল থেকে সেই নাচগুলো
কিভাবে মানুষ হয়!
করপোরেট
এমন নুইয়ে গেছি
জ্বলছে ছিন্ন পারাপার, শুয়ে গেছি ঘাসে…
অথচ নিষ্পাপ,
প্রখর জেল্লায়
গেয়ে যাচ্ছিলাম নদী।
বর্ণে স্বৈরিতা ছিল
পথের পতাকায় উঁচু ছিল সন্ধ্যের ধূপ
বিছানাবন্দি অক্ষরে স্নান শেষে
পুড়ে উঠতো পরান, ইচ্ছে হতো যদি—
আহারে—এমন ভেঙে যাচ্ছি
ফুলেল গৌরবে ভাসিয়ে নিচ্ছি বৈরিতা।
অন্য সময় চশমা ছিল
বুদ্বুদ ফুটতো চোখে
না বলে চলে যেতো হাওয়ায়…
নাব্যতা ফুরিয়ে স্রোত উঠছে হাতে
পায়ে পায়ে সরে যাচ্ছে মুখ
এই তো এখন কুকড়ে এমন
মিশে যাচ্ছি চাওয়ায়—
কানাকানি
ফুরায় না কিছুই
প্রাপ্তিও রয়ে যায় বিশ্বাসের ঘরে;
না যাওয়ার মতো এসেছিল যে
সেও থেকে যায় মুগ্ধ স্বাদের ঘোরে…
বিচ্ছিন্ন হয়ে ওঠা স্বদেশ কখনো
লেপ্টে থাকে চোখের সীমানায়;
গন্ধের লোভে—
কিছু তো এমন ভিন বাহাসে রটে যায় বেঘোর
সমাপ্তি টানে না কোথাও;
স্পর্শ মুখর ঠিকানা থেকে ফিরে এলেও
জটিল করে না দৌড়,
অস্ত্রের ঠোঁট তাক করে থাকে
না হওয়া খবরের শার্টে; তবু
স্তব্ধতা এলে ঘুম ভেঙে যায়
বৃক্ষের গোপনে লুট হয় দিন—
অথচ কোথাও থেকে যায় দূরে যাওয়া রাত
সরে যাওয়া মাটি!
কারবার
আমি চুরি করার সময় তুমি দেখে
ফেলেছ ভেবে হাসো—কানাকানি করো। বদনাম
ছড়াও। আমার বুদ্ধিমত্তা ও মূর্খতা
নিয়েও নানান কথা বলো। তন্দ্রার ঘোরে প্রচণ্ড
তৃপ্ততে ভুগতে থাকো—তুমি আমার
চুরিবিদ্যার একমাত্র সাক্ষী আছ জেনে। ভেবেও
রাখো ব্লাকমেইল করবে আমাকে।
আমিও হাসি। তোমার মূর্খতা দেখে আমার ভালো
লাগে। ভাবতে ভালো লাগে আমিও কারও
মূর্খতা নিয়ে হাসতে পারি। কিন্তু তোমার উড়তে
থাকা পাখায় আগুন লেগে যেতে পারে,
তবু তোমার মনের গোপন সুখ ধরে রাখো।
ছুরিযুদ্ধ শেষ হলে জেনে যাবে তুমি;
সব চুরিতেই আমি সাক্ষী রাখতে পছন্দ করি।
নীল শহরের সংগীত
দীর্ঘ লাইনের মাঝে আফসোস লুকিয়ে রাখি। যতিচিহ্ন মুক্ত জীবনে ইশারামুক্ত হতে চাই, নির্মোহ কফিনে ভরে দিতে চাই অনাগত পুণ্য। শিথান ছুঁয়ে দেওয়া অধ্যায় বাদে সবটাই ঠোঁট বরাবর রেখে দেই বিনিময়যোগ্য করে। গ্রহণের অক্ষমতা ছবিঘরে গুম হয়ে কাঁদে আর শতাব্দীর কর্নারে আমি গোলপোস্ট হয়ে যাই।
তুমুল আশাধ্বনিতে মেতে আছে বৈষ্ণব নিকেতন। অপরিচিত ছায়ারা উৎসবঘোরে আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে একলিসের মায়াঘরে! আমলনামার পাতায়-পাতায় হৃদয়খেলার স্থিরচিত্র নিয়ে একাই কেবল দাঁড়িয়ে আছি একুশ শতকের ট্রয়!
কাঁটাতার বৃত্তান্ত
তোমাকে ভালোবাসা আমার নতুন প্রার্থনাসূত্র। কাব্যিক অলঙ্করণে তোমাকে সাজিয়ে তুলছি রোজ। চর্যার আঁতুড়ঘরে তোমার জন্ম আর কৃষ্ণকীর্তনে বেড়ে ওঠা। সেই তুমি শরৎ বাবুর নায়িকা অভিধায় দিন দিন সত্যিকারের মা হয়ে উঠছ আর আমি তোমাকে না ছুঁয়েও বাবা! অথচ প্রৌঢ় ছায়া আর রৌদ্রের মতোন তোমার আমার ব্যবধান।
হয়তো এই কাঁটাতারের যন্ত্রণা বুকে নিয়েই সারাজীবন একটা দুঃখ বয়ে বেড়াবো। কবিতার মার্জিনে লুকায়িত ছিল কত রোদমুখা হাসি; তুমি জানবে না কোনো দিন…
মা
সেবার বাড়াবাড়ি রকম ভুল হয়ে গেলো। মা বললেন—দেখিস সামনের বার; একটু দূরে থাকার কারণে অতি সাধারণ ভুলগুলো মায়ের চোখ এড়িয়ে যায়। আর আমি ভুল করতেই থাকি খেয়ালে বেখেয়ালে।
শুদ্ধতার চিমটিতে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি মা—সিথানের ওয়ালম্যাট হয়ে বাতলে দিচ্ছেন নিকষ কালো অন্ধকারে সাদা পথের ঠিকানা। জলে ভেজা চোখ আমার দেখছে আর হাঁটছে মায়ের পিছু পিছু।
অতিদ্রুত বদলে যাচ্ছে সব। রঙহীন দেয়ালে বেড়ে উঠছে হরেক রঙের আল্পনা। অধরা কুঠুরী আমার—অন্ধকার লেপ্টে আছে পুরো শরীরে। কী করে বলি—ভুল থেকে যারা শিক্ষা নেয় আমি তাদের পেছনে। শখের বশেও ভুল করি আমি।
কারও কারও জীবনে ভুলগুলোই বড় সত্য!
ইদানীং ঘুম
ইদানীং ঘুমালেই একটা স্বপ্ন দেখি
একটা স্বপ্নই বারবার দেখি—
খোলা মাঠে ঘোড়ার পেছনে দৌড়াচ্ছি
চারদিকে হাজার মানুষ
আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কেউ কেউ আনন্দে হাততালি দিচ্ছে
মনে হচ্ছে, জয় করে ফেলেছি রাজা-রাজ্য-রানি…
বাস্তবে আমি কখনো ঘোড়ায় উঠতে পারিনি
অবলীলায় মেনে নিয়েছি বিলাইয়ের জীবন।
তাই স্বপ্নটা আমার খুব পছন্দ
খারাপ লাগলেই ঘুমিয়ে পড়ি,
খুব ঘুমাই—আর ঘুম থেকে উঠেই
আয়নার নিজের হাসি মুখটা বারবার দেখি।
মিহি আলোর রি-রাইট ভার্সন
পাগড়ির ভাঁজে ভাঁজে মৌমাছির হরফ পুষে ভোরের জামায় গড়াগড়ি খাই। উদোম চিন্তার চেহারায় তুরুপের জোস ঝিলিক মারে। আষাঢ়ের তাশাহুদে ম্রিয়মাণ হয়ে আছে রহস্যের দোলক। মদ্যপ জ্যোতিষীর হাতে স্রোতবিদ্যা—
রতিকলার কর্মশালায় আমি ও আমি নাবালক শব্দযুগল। তুমি বরং কামকলার ইশকুল খোলো। আমি রোজ ক্লাস নেবো। উত্থিত শিশ্নের কপাল ছুঁয়ে আসা রক্ষিত যোনির অভ্যন্তরীণ হাওয়াকে অর্গাজমের মন্ত্রে দীক্ষা দেবো।
অভ্যন্তরীণ
পায়ের ছাপ মুছে যাচ্ছে ক্রমশই। ফিনফিনে রোদ্দুর আর ভাওয়াইয়ার রুমালে জড়ানো গ্রাম—চৈতালি হাওয়ায় চেপে দূর থেকে দূরে পৌঁছে দেয়। অগোছালো শুয়ে থাক সুরহীন রাফখাতা।
বিশ্বাসের ছাতা মাথায় ঘুরি দশদিক। অভাবের বাদ্য নিয়ে ভেসে থাকি দোলাচলের পানসিতে। রূপজীবীদের ইশারায় কতকাল মাতাল ছিলাম—ভেবে ভেবে স্থির বৃক্ষ হয়ে যাচ্ছি। আর পাগলা সময়ের উত্তাপে গলে যাচ্ছি—
তুমি কাঁদছ―বছরগুলো চলে যাচ্ছে সাজানো সুটকেস বিলানের মতোন। বয়সও কমে যাচ্ছে অতিদ্রুত। ইদানীং প্রতি রাতেই ভীষণ কান্না পায়…
কোনো কোনো কথা কাউকেই বলা যায় না—কখনোই না।