এ কী কাণ্ড ঘটে পরবাসে! এ কী মায়া!
সাকুরা গাছের তলে শিরিষের ছায়া।
১.
সাকুরা গাছের নিচে বসে তোমায় ভাবি—
কেন বৃষ্টিহারা হয়ে আছে মনোভূমি,
জারুলের দেশ? এখানে যোজন দূরে
এনোশিমা দ্বিপে—দেখতে তোমারই মতো
জল—এক বুড়ো এসে দাঁড়ায় সামনে,
বলে তোর দেশ কই হতচ্ছাড়া, কোন
বিরহের স্থানে তোর নিখিল প্রবেশ।
আমি বলি বুড়ো, সে তো নিঠুরিয়া, স্বপ্ন,
বড় কাল্পনিক তার রূপ, সে তো কোনও
দেশ নয়, তার কোনও নাম নেই, তার
শুধু ভবিতব্য আছে, আমি তারে মায়া
বলে ডাকি। সে বড় নিষ্ফলা তপোবন।
২.
সায়োনারা বলিও না। বলো আসি। ফের
দেখা হবে সাকুরা গাছের তলে, যদি
চেরিফোটা বসন্তে দুঃখের জন্ম হয়
বাঙালিহৃদয়ে, চোরাকান্না জাগে যদি
কোনোদিন, পাতায়-পাতায় হন্টনের স্মৃতি
যদি মনে পড়ে, তবে সাকুরা গাছের নিচে
দেখা হবে, নির্দ্বিধায় হবে, জেনে রাখো।
চেরি-ব্লসম তখন সাদা ও গোলাপি
চাদর বিছিয়ে দেবে চোখের ওপর।
কনিচিওয়া বলবে তুমি মৃদু হেসে,
আমি বলব, কেমন আছ, ধন্যবাদ।
৩.
সামুরাই! সামুরাই! কাকে দেখো? নারী?
প্রেম মানে লাল ফুল, তুমুল যুদ্ধের
পর প্রান্তর ও অম্বরের খেলা, আর
প্রেম মানে উঁচুনিচু পাহাড়ের গায়ে
সাদা কালো মেঘের পালক। যদি দেখো
কোনো অসম যুদ্ধের পর বিজিতরা
ঘুরে দাঁড়িয়েছে গোলাপের কাঁটা হাতে,
ভেবে নিও হৃদয় লুণ্ঠিত হবে লালে
আর পাহাড়ের সানুদেশে। সামুরাই!
সবুজ চায়ের জলে এ কী সন্তরণ!
৪.
ঘুমন্ত মাউন্ট ফুজি, আকাশের দিকে
গলা বাড়িয়ে হৃদয় ছুঁতে চাও কার?
কখনো কি শ্যামবর্ণ রমণী দেখেছ?
অন্তরে আগুন, তবু তুমি স্বপ্ন দেখো
কী প্রকারে? যুগে যুগে জাগিয়েছ কত
প্রণয়ীর মন, অথচ পুড়েছ নিজে।
অশেষ হাইকু তুমি। মনোলোভা নীল।
নিজেকে ঘুমন্ত রেখে জাগাতে চেয়েছ
শুধুই তোমার লাভাগ্রস্ত মন। আহা!
কোনো এক শ্যামলা পাখির দৃষ্টিপথে
বিষাদ-স্তম্ভের মতো রয়েছ দাঁড়িয়ে।
৫.
সুমিদা নদীর জলে তামাটে যুবার
অথৈ সন্তরণ দেখে ফেলে নীল এক
মেকারেল মাছ। সেই থেকে শান্ত জলে
উথালপাথাল ঢেউ ওঠে, সেই থেকে
নদীতীরে আরও রক্তিম গোলাপি হয়ে
চেরি ফুল ফোটে। আর এক ছোট্ট পাখি
বলে ওঠে; জানো? এখানেও ফাগুন আসে
বাংলার বনের মতো, বাউরি বাতাস
সুদুর জাপানেও গান করে একতারা
হাতে, আর সেই মেকারেল মাছ দেখো
খেলা করে সরপুঁটি মাছের জগতে।
৬.
নিঝুম নিশিতে দেখি নিশিহারা স্ট্রিট
তার মায়াবী বিন্যাস নিয়ে চলে গেছে
অনন্তের দিকে, হেলেদুলে, মৃদুলয়ে।
অনেকটা এলিফ্যান্ট রোডের মতন,
গণজাগরণ সঙ্গে নিয়ে মিশে গেছে
যেন তৃষিত নয়নে, বত্রিশ নম্বরে।
- সায়োনারা—বিদায়, কনিচিওয়া—স্বাগতম। শব্দগুলো জাপানি