তিরশুল-২
১
জীবাণু অস্ত্র জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না
২
মৃত্যু-জরিপে নির্ভর করে করোনা এসে জানিয়ে গেলো
ঈশ্বর এখন আর ভদ্রপল্লিতে থাকে না
সে থাকে বস্তিতে, পথের ধারে, পলিথিনের ছাদনাতলায়
৩
জয়, প্রযুক্তির জয়
এখানে শর্তসাপেক্ষে মিনিট বিক্রি হয়
বসন্তসংক্রান্তি
জানো স্বর্ণ, কিভাবে বেঁচে আছে মানুষ এখন?
কাঁদলেই মিথ্যাবাদী, হাসলে মনে হয় বিজ্ঞাপন
বসন্ত এসে ফিরে যায়, মোহময় সৌরভ মিলিয়ে যায় বাতাসে
কেউ তার কিছুই ধরে রাখে না, এমনকী কবিতা—যাকে তুমি
‘অনুভূতি’ নামে ডাকো—সে এখন রূপচর্চার বদলে
পরচর্চা আর নকল পারফিউম মেখে ঘোরে
এখানে ভালোবাসাই একমাত্র বসন্ত, যেখানে কোনও ফাল্গুন নেই, বরং
মাথার ওপর করপোরেট চোখের মতো তপ্ত সূর্য স্থির হয়ে থাকে, যেনবা
পাহাড়ে ঝুলন্ত নিঃসঙ্গ শেরপা, দড়িছেঁড়া ভয় যার সারাক্ষণ ঝুলিয়ে রাখে
ভালোবাসা এমনই এখানে, রূপের বদলে যার রুপিয়ার মূল্য বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদন
১
যাকে সাষ্টাঙ্গ দিয়ে মনে রাখি
তাকে করি ভুলে থাকার অভিনয়
আমি কি আর দক্ষ অত
লোকের চোখে ধূলো দিয়ে
পালিয়ে বেড়াবো?
সুশোভিত ফুলের স্তবক হাতে
পেরিয়ে যাবো অনাগত কাল?
অ্যামেচার চোখ শুধু জানে
নোনতা জলের থেকে
কীভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয়;
সে কথা বলতে বারণ—
কেউ যদি ভুল করে বলে তার নাম
মুখে তাচ্ছিল্য, অন্তরে হাজার প্রণাম
২
বিশ্বাস করুন, আক্ষরিক অর্থেই
পায়ের নিচে মাটি নেই আমার
আছে চটি, জুতার শুকতলি আর
বড়জোর খালি পায়ে টাইল্সের মসৃণতা
মূলত, শূন্যে ঝুলে আছি—
শূন্যতার আবাসন প্রকল্পে
পোড়ামাটির বাক্সে ভরে বিক্রি হচ্ছে আকাশ;
এইসব বিপণন ব্যবস্থায় ‘মাটি ও নোট’ দুটোতেই
মহান ব্যর্থ আমি ঝুলে আছি শূন্যে
মাটিই ভূতল, এই ভেবে খালি পায়ে হাঁটি
দেখি, পায়ের নিচে মাটি নেই আমার;
মদ খেয়ে নয়, প্রকৃত অর্থে
একটি মাতাল ভূমিকম্পের
অপেক্ষা করছি এখন
অন্তরালে
এই যে শুয়োপোকা
যাকে দেখে ভয়ে ও ঘেন্নায়
কুঁকড়ে যাচ্ছ তুমি
হয়তো একদিন এখান থেকেই
সৃষ্টি হবে বর্ণিল প্রজাপতি;
যার চিত্রল ডানায় ভর করে
তুমি স্বর্গে যেতে পারো
সহজ সমীকরণ
সহজে কি সহজ হতে পারো?
আমি যদি সহজ না হই আরো।
আমি যদি সহজ না হই আরো
তুমি কি আর হাত বাড়াতে পারো?
অভিমানের দেয়াল তুলে দিয়ে
ঠোঁটের মায়া—স্পর্শ দু’একবারও।
আমি যদি সহজ না হই আরো
আমি যদি সহজ না হই আরো
যুদ্ধে তুমি ক্ষান্ত দিতে পারো?
গ্রেনেড বোমের দম্ভ ঝেড়ে ফেলে
ভালোবাসার আলোক-উৎসারও
কৃষ্ণ প্রেমের মানব অবতারে
চৈতন্যের যোগ্য সমঝদারও
আমি যদি সহজ না হই আরো
সহজে কি সহজ হবে তারও?
সসঙ্কোচের পর্দা ছিঁড়ে ফেলা
ভেঙে ফেলা কঠিন সিংহদ্বারও
ছিঁড়ে ফেলা সীমান্ত-কাঁটাতারও
আমি যদি সহজ না হই আরো
আমি যদি সহজ না হই আরো
সহজে কি বলতে তুমি পারো
সহজ করে বলার মত কথা
সহজ যদি সহজ না হয় আরো?
বৃষ্টি বিষয়ক সহজপাঠ
এই যে লাগাতার ঝরে পড়ছে
তুমি তাকে আদর করে মিষ্টিধারা বলছ
জানলা দিয়ে আঁজলা ভরে গায়-গতরে মাখছ
শুধু কি তাই, কাব্য করে ঠোঁট নাড়িয়ে
. গুনগুনিয়ে গাইছ
আরো ঝরুক—ঝরেই পড়ুক হয়তো মনে চাইছ!
তুমি শুধু নয়, আরো কতিপয়—উঁচুতে যারা থাকে
তারা কি খোঁজ রাখে? কাকে বলে বানের জল?
মাটির কাছে ঘর, যারা থাকে নিচের দিকে—
বৃষ্টিযোগে তাদের ফলাফল?
শ্বাসকষ্ট
ধরো, এরকম হলো—
দীর্ঘশ্বাসের ওপরেও বিধিনিষেধ আরোপ করলো সরকার
কারণ, তাতে অতিরিক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরিত হয়
তখন কী করবো আমরা?
কথারা বাধাপ্রাপ্ত হলে
বিষবাষ্পের মতো বুক ভেঙে বেড়িয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস
বলতে না পারার শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে
ওইটুকুই যে আমাদের শেষ ভরসা!
নিঃসঙ্গতা
পুকুরবেলায় সন্ধ্যা হয়ে বসে আছি ঘাটে
আমার ছায়ার ওপর দিয়ে সূর্য নামে পাটে
পাতার নৌকো উল্টো হয়ে—উল্টো হয়ে ভেসে
জলের ওপর থেকে আমার ছায়ার ওপর আসে
এই তো ছিল হঠাৎ উধাও সন্ধ্যার ক্ষীণ আলো
স্থলে ছায়া ধূসর কিন্তু জলের ভেতর কালো
জল কাঁপলে ছায়া কাঁপে ছায়া কাঁপলে জল
জলের ভেতর ছায়ার চোখে জলের টলমল্
ওয়েব সিরিজ
আমিও একটা নাটক বানাবো
সবার সামনে ক্যামেরা শানাবো
যারা বলছে—‘গেলো গেলো…এ জঘন্য শ্লীলতাহানি
. ওয়েবে রাখা নাটকখানি!’
তাদের জন্যই বানাবো
তারা যা জানে না, জানতে চায় না—
. আওয়াজ তুলে তা জানাবো
রাজার যে অনাচার—জনতা ধুন্ধুমার
প্রকাশ্যে দিবালোকে চলছে,
ওয়াজি হিংস্রতা, ইমামী বলাৎকার
ধর্মকে ভীতি করে তুলছে
এর চেয়েও অশ্লীল আছে কি বেশি আর?
কালো টাকা শাদা হয়, সততা মুর্ছা যায়
অনাহারে মরে যারা ফসল ফলায়!
এর চেয়ে কী অশ্লীল আছে আর?
নিঃসঙ্গতা-২
গভীর রাতে কোনো কোনো বাড়ির দরজা খুলে যায়
শুয়ে শুয়ে শুনতে পাই আমি
মনে হয়—কে যেন বাইরে বেরোবে
অথচ দরজা মানে শুধু বাইরে বেরিয়ে যাওয়া নয়
বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকাও
এই গভীর রাতে কে কাকে ঢুকতে দেবে ঘরে!
নাকি বেরিয়েই যাবে কেউ
এই অন্ধকারের ঢেউ—পেরিয়ে
চলে যাবে দূরে—ব্যথার সমুদ্দুরে…
ভালোবাসা বিষয়ক মন্ত্রণালয়
ধরো, দুঃখ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হলো
ভালোবেসে দুঃখ পাওয়া মানুষের
পুনর্বাসন প্রকল্পে পাস হলো বাজেট
মনোরঞ্জনের জন্য গঠিত হলো কমিটি
তারা শারীরীক পুলক বিষয়েও ব্যবস্থা নিলো এমনকী
স্মৃতিযন্ত্রণা নিরসনে স্থাপন করা হলো পানশালা
এরপর একে একে তৈরি হলো অনুভূতি, প্রেম
সুখ ও ভালোবাসা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধরো
আরো অনেককিছু হলো, অনেকরকম ব্যবস্থা কিন্তু
আমি জানি, ওরা কোনোভাবেই ভুল করেও
তোমার কথা বলবে না কেউ—
যতই উঠুক ঝড়, যতই উঠুক ঢেউ