দেয়ালে বেড়ে উঠে নোনতাধরা মাটি
পাবে না।
আমাকে আর পাবে না।
আলতো ছুঁয়ে দিয়ে লুকিয়ে পড়ে যেমন-
মৃদু বাতাস।
আমি কোনো অজানা চোখে লুকিয়ে যাব তেমন।
কোনো অচেনা পুকুরঘাটে বসে রব।
মস্ত একা।
দুপুর গড়াবে।
সন্ধ্যা নেমে আসবে দেয়ালের গা-ঘেঁষে।
রাতের অন্ধকার কেঁদে উঠবে একলা জনপথে।
পাবে না।
আমাকে এ রকম পাবে না।
চায়ের দোকানে পাবে না।
বুকস্টলে পাবে না।
সমন জারি করে ছবির হাঁটের মতো বন্ধ হয়ে যাবো একদিন।
তারপর দোয়াত কলমের অপেক্ষায়-
খালি পড়ে থাকবে খাতা।
হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মুখে পুড়তেই গলে যাবে শব্দ।
কিছুতেই মনে করতে পারবে না।
কোনো নাম।
একটা প্রেমিক ছিল।
একটা সকাল।
একটা প্রেমিক ছিল।
একটা বিকাল।
দুপুর গড়াবে।
সন্ধ্যা নামবে।
মাগরিবের আজানে মতো।
এক-একটি দেয়ালে বেড়ে উঠবে নোনতাধরা মাটি।
প্রেম ও প্রেষণার ইতিহাস
ধারণা করা হতো ভালোবাসলে হাতে হাত রেখে সংগ্রামী হওয়া যায়
রাজপথে ঝরে পড়ে অসংখ্য শিউলি ফুল
অথচ জনতা ভালোবাসতে গিয়ে দু’বেলা শুধু নোনতাজল গিলেছে।
আমিও জনতার কাতারেই সর্বনাম নিয়েছি
সামান্য আশ্বাসেই ভুলে যাই যাবতীয় প্রতারণা।
এই যে প্রেম এবং প্রেষণার ইতিহাস,
কে দেখেছে পুরাতত্ত্ব তার?
মহাস্থানগড়ের চেয়েও মহাপুরনো!
আসলে প্রেমের ইশতেহার মনে রাখে না কোনো প্রেমিক।
পোড়ামুখো ভবিষ্যতে নেই সংগ্রামের কোনো আভাস।
শুধু গাভীর দুধের মতো সাদা আর্তনাদ-
হটিয়ে দিয়েছে প্রেম সম্পর্কিত দুঃখগুলো।
এভাবে দুঃখের পরেই গান গাইতে গিয়ে রক্তবমি হয়েছে অনেকবার
তারপর থেকে আর প্রেমে পড়িনি।
আমি কি আগন্তুক সেজেই কাটিয়ে দেব বাকিটা জীবন?
গাভীর দুধের মতো সাদা আর্তনাদে, সংগ্রামের অপেক্ষায়!
সশব্দ ফাঁকা রোড
দু’টি নগর দেখেছি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।
ফাঁকা রাস্তায় বিলিয়ে পড়েছে উচ্ছলিত বেদনা তার।
প্রাচীর-ঘেঁষে উঁকি মেরেছি আমিও
নগরের বাসিন্দা। একপাশে বয়ে গেছে হাঁটুভাঙা জল
অন্যপাশে অহঙ্কার
কোনো এক দৃষ্টি যেন পড়েছিল সুস্পষ্ট বুকের ভেতর,
আমি দেখছিলাম নগর
আঁচল বিদীর্ণ করে বেরিয়ে এসেছে দুঃখকাতর সৌন্দর্য তার।
এই নগর। বাক-বাকুম ডাকতো কত গিয়েছে পেছনে
ছুটে আসেনি কেউ
চিমনির আলোয় ভেঙে পড়েছে যাবতীয় ঐতিহ্য
আমি দৌড়ে এলিয়ে পড়েছি রক্তের গালিচায়।
প্রার্থনাও চলছিল পুরোদমে
অগণিত নোনাজলে মরে গেছিল পলিমাটি
তখনো অনেকে পূর্বপুরুষের দোহাই দিয়েছে, রাত নামার লোভে।
কেউ বলেছে, দুঃখ করিস কেন!
সামনেই বুলন্দ দুয়ারে অপার আকাশ ছড়িয়ে গেছে।
সেদিন আমি জলে ভিজিয়েছি শৈশব মাত্র
শ্যাওলা পুকুরে ষোড়শীর কোমল পা যেমন
কতকাল, এই দুপুরের ক্লান্তি সেরে ডুবে আছে!
যদিও নগরগুলো দেখেনি জ্যোৎস্না শোভিত রাত, অনেক বছর।
এখন রাত নেমে আসুক, তারপর তুমিও নেমে এসো
শহরের বুকে।
খুব নীরবে।
এখানে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে চেতনা, অসহ্য ফাঁকা রোড
আর মরা মানুষের ভিড়ে আদমশুমারি নৃত্য।