কারণ
আমিই সেই রাক্ষস, যে নিজেকে খেয়ে খেয়ে বেঁচে থাকি, নিজের কবরে বসে করি গোরখোদকের গান আর হেসে ওঠি পৃথিবীর মানুষের মতো, কখনো কাঁদি ইচ্ছে করেই।
আমিই সেই ভয়াল, নিজের মধ্যেই বাস করে যার মৃত্যু, যার নিজের বিষের দংশনে নিজেই জর্জরিত হয় আর মৃত পালকের মতো উড়ে যায় অচীন এক অদৃশ্যের দিকে।
তবু আমাকেই আমি আমার সহস্র হাতে জাপটে ধরে রাখি, সময় যেভাবে নিজেই বেঁধে রাখে সময়কে।
দূর অসম্পর্ক
ছুটন্ত ঘোড়ায় বসে যারা স্থিরতার কথা বলে, যারা বলে দূর বলে কিছু নেই, আমি হয়তো তাদেরই কেউ; কেননা আমার কাছে যা দূর, তোমার কাছে হয়তো ততই নিকট।
যারা সূর্যকেও দেখে নিতে জানে পুড়িয়ে আঁধারে—আমি হয়তো তাদেরও কেউ; কেননা আমিই অনেক গ্রীষ্মে পুড়েও জল হতে পারি, ঠোঁটে তুলতে জানি বরফের গান।
আমি জানি কিভাবে নিজের ভেতর নিজেকে ঢুকিয়ে বেলুন সাজতে হয়, কিভাবে ভাবনার বিস্ফোরণে ধমনীর ভেতর চালিয়ে দিতে হয় বোধের নৌকো।
দূর বলে কিছু নেই, তোমার ভেতর বসে ধ্যান করছি যখন।
সর্বাংশ
তোমরা যাকে সূর্য বলো চাঁদ বলো—আমিই তাদের জন্মদাতা; এবং তোমাদের এই পৃথিবীকে আমিই জন্ম দিয়েছি।
আমার হাতের মুঠোয় সহস্র মহাকাশ খেলা করে, একেকটা মাছের মতো শূন্যে ঘোরে ছায়াপথ।
এইসব সবকিছুর মধ্যেই আমি আছি; আমার অংশই বিস্তার করে আছে পরম পর্যন্ত।
তোমরা ভাবছো আমার জন্ম হলো কিভাবে? মৃত্যুর জন্যই জন্ম হয়েছে আমার। আর মৃত্যুর জন্ম হয়েছে আমার মধ্য দিয়ে।
তুমি কি জানো, তোমার মধ্যেও যে আমি আছি! এবং তোমাদের ভেতর ঢুকে আছি অজস্র অজস্র আমি।
তুমি আমি মিলে যে অজস্র এক আমি, সেই আমিটাই জন্মদাতা। সেই আমিটাই সূর্যকে জন্ম দিয়েছি, পৃথিবীকে জন্ম দিয়েছি; সমস্ত কিছু আমারই মধ্যে অন্তর্লীন।
তুমি দিয়ে তৈরি
ভাবতেই ভালো লাগে একটা ট্রেন পুরোটা আমার। সব বগি, সময়, পুরোটা আমার। ভাবতেই ভালো লাগে ট্রেনের সব বগিতে শুধু তুমি আর আমিতে ভরা।
একটা স্টেশন চাঁদরাতে পুরোটা আমার। আমি স্রেফ একটা স্টেশন, সেখানে শুধু তুমিতে তুমিতে ভরা।
কিংবা মনের উঠোন ভরা তোমার পায়ের ছাপ। ভাবতেই ভালো লাগে এই আল্পনা মানেই তুমি, মানেই আমার মনের শস্যক্ষেত। আজও সাজ মানে তুমি। একটা শিল্পের শস্য তোমার দিকে চেয়ে হাসলে আমার কী করার থাকে! কী থাকে বলো! আহা, এই যে আমি কত কত তুমি দিয়ে তৈরি!
পরিমাপ
জীবনের শেষ চুম্বনটুকু তুমি কার জন্য গচ্ছিত রেখেছ? কোন অধরের থোকা থোকা ঝুলন্ত আঙুরের পূর্ণ নীরবতা কেড়ে নিতে দৃষ্টি বাড়িয়েছ প্রকৃত উৎসের দিকে?
নীল পাথরের ফুল দিয়ে ভরে ওঠা নদী কোনো দিন চুম্বনের ভাষা বোঝে না; আবেগের দ্রাঘিমা মুছে এবার পৃথিবীর যথার্থ পরিধি মাপো।
দেখো, জীবন একজন মানুষেরই সমান; তথাপি একটি চুম্বনের মুহূর্ত থেকেও অসংখ্য জীবন কত ছোট!