জলযজ্ঞের হোম
কোথাও জলের নিচে কুমির, কোথাও শুয়ে আছে সাপ
মানুষেরা তবুও জলে কেটে যাচ্ছে সাঁতার—অবিরাম।
জলে
ডুবে যাচ্ছে শরীর, জলে ভেসে যাচ্ছে মানুষ, জল ভরা
মানুষের চোখ—জলে জ্বলে যাচ্ছে হাওয়ার খোলসেরা,
জলের ছায়ায় পুড়ে যাচ্ছে বেয়াড়া রোদ্দুর দল—পাপে!
আমাদের পাপ আছে, আমাদের প্রেম আছে—আগুন
উঠেছে জ্বলে।—রক্ষা করো জল—রক্ষা করো জলে।
মানুষের জল
গোপন ব্যাথা নিয়ে নেমেছি জলে, জলে পদ্ম ফুল
বাতাসে—বাতাসে দোলে, মেলে দিয়ে কালো চুল।
শিকড়ে জড়ায়ে পা মুঠো ভরে তুলি কাদা—কাঁদা
তবুও মেশে না প্রলেপে, চোখের মণিতে সে বাঁধা।
গোপন ব্যথা নিয়ে নেমেছি জলে, জলে কচি রুই
হৃদয় নিচ্ছে খেয়ে ঠোকরে ঠোকরে। ব্যথারে থুই।
জলজ
ছায়া হয়ে, এসেছো কাছে, তাই জানো নাই
সামান্য বাতাসেও কতখানি ভেঙেচুরে যায়
সমস্ত অবয়ব! জলের হৃদয়ের—
ছায়ারা জানে না কিছু, ছায়ারা পায় না টের
কতখানি আছে ডুবে তারা জলের গভীরের।
প্রেমের পানাপুকুরে
হাসি মুখে চলে গেছে যে, চোখ মুছে যে বলেছে বিদায়
কাজলে এঁকেছে যে বৃষ্টির জল, বুকে করে নিয়ে গেছে
যারা আগুনের আঁচ—তাদের সমস্ত মুখ ভালোবাসায়
এক হয়ে রয়। অথচ কী ভীষণ দূরবর্তী তারা পরস্পর।
পৃথক পৃথিবীর মতো শরীরের ভাষায় লুকানো যে মন,
হৃদয় বলে যারে অনুভব করি!—প্রেম বলে যার পাশে
মরে যেতে সাধ, তারেও পুরনো লাগে বহুদিন পরপর,
তবুও প্রেম—ভালোবাসাময় প্রত্যেকের পুরনো মায়ায়।
আমাদের পুরনো প্রতারণায় ফিরে ফিরে—প্রেম আসে,
ভালোবাসায় অবিশ্বাস ভরে নিয়ে, বিশ্বাসের কথা কয়
পৃথিবীর সমস্ত মুখে—তুমি ও তোমাদের মায়াবী চোখ।
জলের অক্ষরে
যে কথা লিখে রাখে নাই কেউ যে কথা কেবল জল
চোখে চোখে রয় পুরনো হৃদয়, যেইখানে জমা ছল।
উত্তরে মেঘ—দক্ষিণে নদী
দুনিয়ার বুকে বয় নিরবধি।
মানুষের ঘরে বিষন্ন রোদ, উঠোনে ছড়ানো দিনে
হেঁটে হেঁটে দুখ, ফেরী করে সুখ
জীবনেরই প্রয়োজনে।
মরে মরে মৃত, স্মৃতি গাঁথে মালা
স্বপ্নের আগে—আগুনের জ্বালা,
উড়ে উড়ে মন, উইপোকাদের মতো, ফুরায় সমস্ত,
প্রিয় সন্ধ্যাবেলা। প্রিয় সন্ধ্যাবেলা। প্রিয় সন্ধ্যাবেলা।