জন্ম
জন্মের পর থেকেই দেখছি বাবার চোখ লাল
জন্মের পর থেকেই দেখছি মায়ের হাড় কালো
লাল চোখ, কালো হাড়, জন্মেছি এ নিয়ে, বিশ্বাস করো।
দেহ
কোমরের নিচে গান
. ঘুঘুডাক
. ভাসমান মেঘ
সংখ্যাপতনের আর্তরবে
আমি মীন এঁকে যাই দেহে
দ্বিধা
কী করে বলি দারুচিনি লেগে আছে ঠোঁটে অথচ হৃৎপিণ্ডের রঙ সবুজ ছিল বলে কত ভবঘুরে সুনু খেয়ে যেত এই গালে আর আমাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে বসিয়ে রেখে উড়ে যেত পাখি এখনো আমি যাদের ছায়া খুঁজি পথে পথে শোনো রবাহুত নানান কৌশলে আমি খোদাই করেছি একুশটি আয়ুরেখা আর সেই ক্রম অনুসারে তোমার মুখে ফুটে উঠছে শোকাহত আরব সাগর এমন বেদনাবিধুর দিনে কী করে বলি দারুচিনি লেগে আছে ঠোঁটে
চাঁদ, সৃজনমুহূর্ত
মা’র সঙ্গে দ্বিরালাপ
. শেষে
. আমি
সৃষ্টি ধরে ঝুলে থাকা
. চাঁদ
মা’কে ঘিরে জেগে ওঠে পার্শ্বরেখা
আর চন্দ্রাহত জল
ফুটোপুকুরে এবার যাব সাঁতার কাটতে
রাত্রি ওহে জোনাকপ্রহর
সূর্যাস্তসংগ্রহের পর ঘুম পাচ্ছে খুব
মায়ের দৃষ্টিতে ডুবে যাচ্ছি
. শেষ দৃশ্যে
ভেঙে ভেঙে অন্য কারো অন্তরাল
শব্দের সন্ত্রাস
‘এলাহি ভরসা’ শিরোনামে খানিকটা দ্বিধা এলো হাতে।
আমিও মহান লিপিকার
লিপির কৌশলে ছুড়ে দেই শব্দের সন্ত্রাস; বলি,
প্রতিউত্তরে যদি না লেখো মুগ্ধতা
তবে শুনে রাখো প্রিয়প্রাণ
আমি আরও বেশি লুব্ধ হব ইন্দ্রজালে
তোমাদের আকাশে ছেড়ে দেব কিছু আবাবিল পাখি
ভালো-না-বাসা এ গুরুতর অপরাধে
তোমার কারণে শুধু ধ্বংস হবে এক মুখরিত জনপদ।
সুষুপ্তি
বেদনা-বিভাগ খুলে বসো, দুঃখ করুক ছাত্ররা ছাইগাছতলে
আরো যত মেঘ-বিষাদের দল অণুস্মৃতির নামে ঘুরে বসুক,
জ্ঞানখন্ডের ফল প্রকাশিত হলে আমি ছাত্র ভালো খুব,
বাল্যে বিভোর ছিলাম, মনে হলো এলোচুল, বেরিয়ে এলাম
গোল সুষুপ্তির নিচে।
অধরা যোনির নিচে রহস্যের নাচ দেখলাম সারারাত
. আমি ছাত্র ভালো খুব।
পাখি
যে-পাখিটা রোজ রোজ আমাদের ছাদে আসে তার নাম শ্রাবণী সেন।
ক্ষুদ্রকণ্ঠে বলে; আমাদের সরলতার আবীরছোঁয়া দিয়ে
. কখনো মনুষ্যহৃদয় জানবে না দাদা।
আমি সবক’টি চন্দ্রঘুঘু তার চোখে তুলে দেই
আর বলি; চাঁদটাকে গুলি করে নামা তো শ্রাবণী
. মানুষ প্রস্তরযুগে ফিরে যাচ্ছে
. অথচ আমরা আজও
. উদাসীন খোকা হয়ে বেঁচে আছি।
মৃত্যু
আনোয়ার আহমেদ
আপনাকে দেখা হলো না কোনোদিন
বাতাসের মৃত্যু থেকে জন্ম নেয় আগুন
ভালোবাসার মৃত্যু থেকে জন্ম নেয় পাথর।
কোনো কবির মৃত্যু হলে
সবার অলক্ষে বেড়ে ওঠে বৃষ্টিগাছ।
আর মৃত্যু?
সে তো কারো মেয়ে ছিল অন্য গ্রহে।
কোনো এক শীতের রাতে
নিচু ক্লাসের প্রেমিকের হাত ধরে
পালিয়ে এসেছিল আমাদের পৃথিবীতে।
উর্দু শহর
তার মুখ দেখেছি—উর্দু শহর। ওষুধ ও আহার্যের সঙ্গে
আহত নিদ্রার পাশে বসেছিল সেও। বলেছিল ভালোবাসি—
কবে যেন বলেছিল! আহা কত যুগ আগে!
আজ চোখ যায় জন্মান্ধকারে;
অতিদ্রুত
. শিশুর আড়ালে
. গহনা রেখেছে খুলে।
না-বিহঙ্গের আকাশ
বন্ধুদের কাছাকাছি পৌঁছে দেখি
এতদিন নিঃশ্বাস নিয়েছি জলে।
প্রিয়জনদের ছায়া কুড়িয়ে কুড়িয়ে নিদ্রা যাই,
জেগে উঠে দেখি
চিরচেনা ঝাউগাছ রক্তে ভিজে গেছে।
তবে বলুন তো জগদীশ
আমি কোন হাত দিয়ে স্পর্শ করি বৃক্ষদের প্রাণ।
কবি পরিচিতি:
জাকির জাফরান
জন্ম ৪ আগস্ট ১৯৭৫।
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ:
সমুদ্রপৃষ্ঠা (২০০৭),
নদী এক জন্মান্ধ আয়না (২০১৪),
অপহৃত সূর্যাস্তমণ্ডলী (২০১৫)