সমর্পণ
এমনি কি আর পাক ধরেছে চুলে?
ভুল করেছি মানতে আমি নারাজ,
গেঁথেছি মালা অভিজ্ঞতার ফুলে।
ফুলের সুবাস নিচ্ছি অবিরাম,
আশেপাশে জীবনের নির্যাস
নতুন করে পাওয়া একটি গ্রাম।
মর্ত্যলোকে সবাই মিলে মিশে,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাপের সাথে থেকে
অবলীলায় চুমুক দিচ্ছি বিষে।
সঙ্গে আছে অভিযোগের ঝুলি,
কালিদহ সাগর আমার জীবন
নির্ভাবনায় ঢেউয়ের পাহাড় তুলি।
ছলাকলায় চলছি বীরের বেশে,
ভরে উঠে সর্ষে দানার সময়
ফোঁটা ফোঁটা জীবন চলে হেসে।
আরও হয়তো কিছু সময় আছে,
পূর্ণ হয়ে আবার আগের মতো
মরণ কালে যাবো তোমার কাছে।
চিঠি
পত্রপাঠে ত্রুটিটুকু ক্ষমা করে দিস,
মন খারাপের দোলাচলে
আমার নামটি নিস।
শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকিস নিজের গভীরে,
এক জীবনের গল্প হবে
দিন যদি আর ফিরে।
কী রে?
কেমন আছিস বললি না যে
দেশে দেশে লকডাউনের ভিড়ে?
আমি আছি আগের মতোই,
আটকে গেছি তোর ভেতরে
চেষ্টা করি যতোই।
অনেক আগে চিঠি হতো লেখা,
এই জীবনে পাই না যে আর
ডাক পিয়নের দেখা।
পত্রপাঠে ত্রুটিটুকু ক্ষমা করে দিস,
মন খারাপের দোলাচলে
আমার নামটি নিস।
ইজ্জত
স্বামী পরিত্যাক্তা একজন নারী
সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন
পরিচিত একজনের কাছে।
সেখানে দুজনকে একসাথে পেয়ে
চার জন পুরুষ তাকে ইজ্জতের ভয় দেখিয়ে
আটকে রেখে সারারাত ধর্ষণ করেছেন।
নারীর ইজ্জতের দাম অনিচ্ছাকৃত সঙ্গম।
একজন নিরীহ মধ্যবিত্ত গিয়েছিলেন
গোপনে মেথর পট্টিতে বাংলা মদ খেতে।
বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে
ইজ্জত মারার ভয় দেখিয়ে
নিয়ে গেছে সাড়ে সতেরো শ টাকা।
হাজতে নিলে বিচারক হয়তো
দুই শ টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিতেন তাকে।
মধ্যবিত্তের ইজ্জতের দাম সাড়ে সতেরো শ টাকা।
একজন মাওলানা নারীসঙ্গ করতে গিয়ে
ধরা খাইলেন পুলিশ আর জনতার হাতে,
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতেছেন
তাদের কাবিননামা আছে কি না।
হুজুরের ইজ্জত রক্ত দিয়ে কেনা তাই
অনুসারীরা তাকে উদ্ধার করলেন বেপরোয়া হয়ে।
কিছু লোকজন ভাবতেছেন
এখন থেকে বউ নিয়ে ঘুরতে গেলে
কাবিননামা রাখবেন সাথে।
কেউ কেউ ভুয়া কাবিননামা
বানানোর ধান্দায় নেমে
ইতোমধ্যেই বানিয়েও ফেলেছেন।
অনেকেই মদের লাইসেন্স বানিয়ে
ঢুকে যাচ্ছেন কাছাকাছি দোকানে।
সবাই নিজ নিজ ইজ্জত বাঁচানোর
ধান্দায় কোনোভাবে দিন পার করছেন।
ইজ্জত বাঁচানোর জন্য এত এত
ঘটনা আমাদের ইজ্জত নিয়ে পালিয়েছে।
সবাই বলাবলি করতেছিল,
এই কালে ইজ্জত নিয়ে চলাটা দায় হয়ে গেছে।
আমাকে নিতে আসবে কেউ
সহস্র জীবন ধরে আমি যাযাবর
পাহাড়ী ঢলের মাঝে ভেসে থাকা খড়।
কাউনাই নদী হয়ে ছুটেছি ভ্রমণে
আয়ু খেয়ে বেড়ে উঠা সহজ জীবনে।
নিশ্চিন্তে কিছুকাল কংস নদের তীরে
তারপর ডুবেছিলাম ব্রহ্মপুত্রের গভীরে।
পীর হতে আসিনি চেয়েছিলাম সুফির জীবন
জীবনের ধ্যান জ্ঞান এক টুকরো কাফন।
কুপি বাতি জীবনের ফুরিয়ে আসা তেলে
দফ করে নিভে যাব কোন এক কালে।
খুব বেশিদূর ছড়ানো হয়নি আবছায়া আলো
পদতলে মারিয়ে রেখেছি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো।
দুপুরের ভাতঘুমের নিরবতায় আতকা অন্ধ হবো
মাটির সামান্য শীতল ঘরে আক্ষেপে ঘুমাবো।
আমাকে স্মরণ করে রাত জাগবেনা কেউ
প্রবল গর্জনে জন্মেই মরে যাবে হাওরের ঢেউ।
কবি হতেও আসিনি অথচ কবিতায় হয়েছে শেষ
কানপোনা জীবন নিয়ে পুকুরে হয়েছি নিরুদ্দেশ।
তোমাদের পুকুর আমার এক সমুদ্র বিলাশ
এই মাটি এই দেহকাণ্ড আমার একান্ত নিবাস।
জীবনের ভেতরে থেকেই খুঁজি জীবনের তৃষা
ডুবন্ত মায়ের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে ফেলেছি দিশা।
এখনো প্রবল গর্জনে জন্মেই মরে যায় হাওরের ঢেউ
অনন্ত প্রতীক্ষায় আছি আমাকে নিতে আসবে কেউ।
ভাটির দেশে হেজা শিকারির বেশে
নয়া নয়া সার্কাস ভাটির দেশে,
আমদানি হইছে অবশেষে।
সার্কাসের হস্তিটা বসে থাকে চেয়ারে,
ক্লাউনের দল ঘিরে রাখতেছে তারে।
উপপত্নীর দল হেলিয়া দুলিয়া
হস্তির সেবা করে তুলু তুলু করিয়া।
হস্তির কান বড় পেছনে দেখে না,
মোটা মাথা হস্তিরা কারো ধার-ধারে না।
হস্তির আইনে অস্থির জরিনা,
কোনো কিছু আমরা তাতে মনে করি না।
সার্কাসের বাইরেও চলাচল তার আছে,
অত্যাচার অত্যাচার ভাটির কলাগাছে।
আমরা মুচার হয়া দলে দলে ঘুরাঘুরি করি,
কলম অলংগা লইয়া নিরীহ হেজাদের ধরি।
ভাটির দেশে হেজা মারা হামেশাই চলে,
দূর থেকে হস্তিরা হেজাকে সজারু বলে।
ভাটির দেশে আছি হেজা শিকারির বেশে,
হাতির পায়ের তলায় মরে যাবো শেষে।