সবুজ বসন্তের খোঁজে
একদিন সবুজ পাতার দিন আমাদেরও ছিল
কল্পনায় ছিল ভরা মৌসুম, ছিল বসন্ত রাত কোকিলের গানে,
নদীর স্রোতে ছিল নাব্যতা ভাটিয়ালি সন্ধ্যার চিত্রকল্পে।
আকাশের জ্যোৎস্নার প্রতিচ্ছবি ছিল জলের স্বচ্ছ মায়ায়
হৃদয়ের চেনাজানা ছিল শেকড়ে জড়ানো হৃদয়ের টানে,
সবুজ সবুজ ছিল দু’টি হাত ব্যবধান ভুলে।
এখন পৃথিবী যৌবন হারিয়েছে, বেড়েছে বয়স
অনাদরে, অবহেলায় উষ্ণতাহীন ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে,
তলিয়ে যাচ্ছে লবণাক্ত জলে তার ম্যানগ্রোভ হৃদয় ভীষণ দহনে।
অন্ধকারে ওঁৎ পেতে থাকা ক্ষুধার্ত পশুরা আজও খুঁজে
এক টুকরো মাংসের স্বাদ, খুঁজে বেঁচে থাকার অধিকার তবু,
তাই বুঝি নীলপদ্মের বুকের বৃষ্টিতে স্নাত হয় আজও লোকালয়।
এখনো বহুদিন জড়িয়ে থাকা শিকড় মরেনি স্বপ্নহীন হয়ে
অন্ধকারের মায়ায় নিঃসংকোচে বীজ বোনে মাটির ঘ্রাণে
নতুন ফসল ফলে, নতুন স্বপ্ন শোকে কাতর মন রোজ ফিরে আসে।
চুপিসারে তার প্রেমিকের দীর্ঘশ্বাস শোনে প্রতীক্ষিত এক টুকরো স্বপ্নের অনুভবে
তখনো ভেজা রোদ উঠোনজুড়ে কেবলই মায়ায় বেঁধে রাখে।
নীলপদ্মের কল্পনার রাজ্যে রিমঝিম বৃষ্টি অবিরাম, স্যাঁতসেঁতে উঠোন
কুয়াশায় ভেজা চোখের ভাষা, আসক্ত চুলের ঘ্রাণ কিংবা শাড়ির আঁচল,
লবণাক্ত চোখের জলে ভেসে যায় প্রেমিকের বুক বার বার।
নিঃশ্বাসে বিশ্বাস খুঁজে সবুজ সবুজ সুখের বসত ভিটা
কেঁপে ওঠে আজো রোজ কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদ মধ্যরাতে
নীলপদ্ম ব্যবধান ভুলে খুঁজতে থাকে সেই পুরানো শেকড়ের টান।
অভিলাষ
এবার আমি রৌদ্র হবো, তিলক কামোদ সাদা পাতায় মরণসীমা-ঘেঁষে
একলা আমি ভাঙা বাড়ির মেঘ মেদুরে একলা যাবো ভেসে।
এবার আমি আকাশ হবো নিরুদ্দেশে তারার মেলার ভিড়ে
আজ বহুদিন একলা থাকার এই শহরের নির্জনতা ছেড়ে।
বাতাস হবো, দেহের পরে গোপন ধুলো মাখিয়ে কিছু উড়বো ইচ্ছে মতো
আজ বহুদিন মন ভালো নেই, মন ভাসাবো যেদিকে চায় যতো।
সাগর হবো ঢেউ খেলানো ঊর্মি মেলায় দোদুল দোলায় দুলে
একলা আমার তরীখানি যাক ভেসে যাক চেনা পথটি ভুলে।
এবার আমি উড়বো ভীষণ এই শহরের অন্ধকারের বন্দি খাঁচা ছেড়ে
মাঝে মাঝে বিদ্রোহী মন, ঘর ছেড়ে দেয়, পর করে দেয় বসত বাড়িটিরে।
এবার আমি একলা হবো ডানা মেলে উড়বো একাই পুরো আকাশ জুড়ে
এই শহরের যান্ত্রিকতা, মেকি স্বভাব, এসব থেকে, এই খানিকটা দূরে।