এক.
সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে আকাশের আলোতে অনেক
পাখিদের দেখি, আর ক্রমাগত মনে হতে থাকে
আমার সমস্ত দেহ তাদের পাখনা ঝাপটাচ্ছে।
অথচ সারা-শরীর পাথরে খোদাই করা ছিল,
অনিচ্ছুক এক স্বরে বেদখল দীর্ঘশ্বাস গেঁথে ছিল
বহুকাল কোনো সাদা এক মুকুরিত সান্ত্বনায়।
পুরনো লোকেরা বলে: তরতরিয়ে গড়িয়ে পড়া
অন্ধকারে সারাক্ষণ উপত্যকার সুরেলা গান
কিংবা অতীতের ক্লান্তি মখমলের মতো লেগে থাকে।
দেয়ালেই মুক্তি—যেন হলুদ মশালে আবছায়া,
ছায়াহীন মখমলে ফর্সা হাওয়ায় কখনো কখনো
মগজের এক কোণে শুয়ে থাকে ঠান্ডা আওয়াজে।
দুই.
ভরা স্বরে বৃষ্টি, রাতে অনিচ্ছুক কাঁপে
শুকনো বাতাস ঝরে অবিরল, যেন
ঘুম-ঘুম গন্ধ, ঘন শব্দ করে আর
প্রমোদের শব্দে চোখ গলে যায় দ্রুত।
তখনই অতিকায় ঘোর ভেঙে পড়ে,
ধারালো আতুর সাদা গায়ে স্থির দৃশ্য
হই, বাবলা-হলুদ মতো কুহকের
ভারে রাত জমে থাকে সমস্ত প্রবেশে।
নির্ভার-সবুজ করোটিতে শুধু ঢেউতোলা চিত্র:
পাহাড়ি পাখির দল মোলায়েম মাছের মতন।
তিন.
নেশা হলে কিছু কালো বেঁকে যায় ছায়ার কিনারে
কোমল ত্বকের নিচে নুয়ে পড়ে লুকোচুরি সন্ধ্যা
প্রবল জ্যোৎস্না যেন মনে হয় লাল জ্বরের দুপুর।
মদ খেয়ে নেশা হলে করোটির দেহ থেকে সব
মাগীবাজী নেমে যায়। আসমান জুড়ে ঢেউ তুলে
গাভীর মতন চরে পাহাড়ি পাখির সাদা দল।
নিঃশ্বাসের ঘন শব্দ বলকানো দুধের মতন
তিরতির স্বরে কাঁপে। মগজের কোণে ফর্সা শব্দ
নির্ভার নড়তে থাকে পিছলানো নক্ষত্রের মতো।
চার.
তোমাকে ভাবছি শুধু গাছ থেকে ঝরে পড়া এই হিম-দিনে
নীরব মাকড়সার মতো বুনে গেছ যেন শীত পরিপূর্ণ।
যখন তোমার ঘুম বাকলের গন্ধ নিয়ে শব্দহীন নড়ে
সন্ধ্যাকালে সাদাপাখার তারকা ফেটে পড়ে আগুনসমেত।
রাত দেখি জানালায়: বিড়ালের গায়ে হলুদাভ কণ্ঠস্বর
রহস্য রেখেছে যেন, কুসুমিত রাত্রির শরীরে অন্তহীন।
রাস্তার গরম দেহ, গাড় কুয়াশায় তবু স্পষ্ট হয়ে আছে,
সব উধাও হবার আগে শুধু তোমার শ্বাসের শব্দ শুনি।