সন্দ্বীপের চাঁদ
চলো, আজ সারারাত জেগে দেখি সন্দ্বীপের চাঁদ
উঠোনে নারকেল পাতার চিরল বাহারে
পাটিপাতার বিছানা পেতে শুয়ে পড়ব আকাশের দিকে চেয়ে
অনেক তারার জলসায় মধ্যমণি চাঁদ, বাঁশবনে নিশাচর পাখি
প্রহর ঘোষণা দেবে, স্বপ্নের ডিঙ্গার মতো ভেসে যাবে চাঁদ
আমাদের নিঘুম চোখের পাতায় ঝরিয়ে বৃষ্টি আলোক ফোঁটায়।
হাজার বছর ধরে এমনি উঠোনে শুয়ে আমাদের পূর্বমানব-মানবী
চাঁদ দেখে আলোকের ঘোরে নিজেদের একান্ত অন্ধকারে
ঘুমহীন রাত জেগেছিল।
অথবা বেঘোর লাগা রাত, শীতের একাকী বিল
মুরলি বাঁশির সুরে ভিজে ভিজে যায়, চন্দ্রাহত যুবকেরা
ঘুমহীন কোনো এক সুন্দর কষ্টের কাঁথা হৃদয়ে জড়িয়ে
আনমনে চাঁদ দেখে, সন্দ্বীপের চাঁদ
গাছপালা ঘুম, প্রদীপ নেভানো ঘর-গ্রাম, জোনাকিরা জলে নেভে
এমন চাঁদের আলোয় সয়ফল মুল্লুক আর বদিউজ্জমাল পরী
মগ্নতার সুতো বোনে নিজেদের।
মুরলি বাঁশিতে কাঁপে গোলেস্তা এরোম, কোকাফ পাহাড়ে দেও দৈত্য।
চলো, চাঁদ দেখি সন্দ্বীপের চরে
দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, মেঘনা পশ্চিমে আর উত্তরে বামনী
চাঁদের দিঘির জল উপুড় হয়েছে আচম্বিত পূর্ণিমার রাতে
বাউরি বাতাস, সাগরের গান, ঢেউয়ের দোলায় ভাসে আলোকিত অন্ধকার
আমাদের একান্ত নির্জন মন, চাঁদ দেখা, চন্দ্রাবতী সন্দ্বীপের
নরম পলির চরে পাললিক মানুষের চিরায়ত চাঁদ।
সমুদ্র ফুঁসেছে খুব নদীতে জোয়ার
আয় দোস্ত, পরাইন্যা জাইল্যার পোলে যাই
সেখানে দুদিকে খাল তুই পূর্বে আর আমি পশ্চিমে তাকাই।
উদয় ভানুর খেল দেখে হেসে ওঠ তুই,
আর আমি পশ্চিমে তাকিয়ে দেখি অস্তায়মান নৌকার গলুই।
সমুদ্র ফুঁসেছে খুব নদীতে জোয়ার খলখলাইয়া হাসে
আমাদের শিশুকাল থেকে এ-পর্যন্ত আঁকা জলরঙে
স্মৃতির ক্যানভাসে।
তারপরে হিন্দুপাড়ার ভেতর দিয়ে পানের বরজ
সেখানে পানের বোঁটা ছিঁড়ে নেয় লক্ষ্মীরানী অম্বালিকা শেফালিকা দেবী
আমাদের ইস্কুল জীবনের সে মাটির কইন্যাগুলো…
কোথায় রে আজ তারা?
জীবনের জীর্ণ খাল বেয়ে কতটা এগোলো?
তিরিশ বচ্ছর পরে এ যে আমি পেছনের কথা ভাবলাম
তারাও কি তাই? সাঁঝবাতি জ্বেলে ইষ্টনাম জপতে জপতে
ভাবে নাকি, একদিন আমরাও বইখাতা নিয়ে ইস্কুলে যেতাম!
আয় দোস্ত, এই নাগরিক জীবনে বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে
একদিন মন খারাপের হাইনজা বেলায়
হিসাবের খাতাটা খুইল্যা বসি পিদিম বাতি জ্বেলে
কানে আধপোড়া আধেক বিড়ি, কাঠপেন্সিলে নাকের আগা
চুলকাতে চুলকাতে, আমরাও বসি সে কিপ্টা ভোতা সিংয়ের মতো
ক’পয়সা জমল সিন্দুকে আঁক লিখে দেখি
ক’ পয়সা খরচ হলো সুখ কিনতে আর কতটা লোকসান হলো দুঃখে
সমুদ্র ফুঁসেছে খুব নদীতে জোয়ার খলখলাইয়া হাসে
দোস্ত, আমাদের শিশুকাল থেকে এ পর্যন্ত আঁকা জলরঙে
মলিন স্মৃতির ক্যানভাসে।