সত্যের ভাষ্যধারা
শেষমেশ অবিভক্ত এ কাহিনি থেকে
উদ্ভূত, সুবর্ণ সত্য এক
উঠে এলো হাই-ফাই বৃষ্টির ফলায়,
রামায়নে সীতা উঠে এসেছে যেমন
ভূমির কর্ষণে,
জনক রাজার
লাঙলের সুতীক্ষ্ণ ফলায়,
মহাকাব্যময় এক যুগ ছিল বটে
অধরা সে পাখি এক
সত্যাগ্রহ বনে…
ডিজিটাল যুগে আমি
অ্যানালগ এক প্রত্নচারী
গ্লোবাল ভিলেজে থাকি
কোণঠাসা বেড়াল যেমন;
কবিতাই লিখি তবে, নিজস্ব ইজমে….
পরাবাস্তব, বাস্তব অথবা ম্যাজিক
রিয়্যালিজমে নেই তো আমি,
অথবা ব্রায়ান জিসিনের কাট-আপ
শৈলীতেও নেই, আচার্য ভরত, দণ্ডী,
পাণিনি, বামন—ভারতের কাব্যগুরু
এমনকি অভিনবগুপ্ত,
বেয়াদবি নেবেন না প্লিজ,
আপনার ও আপনাদের
রীতিত্মা কাব্যস্য, কিংবা অলঙ্কৃত
বাক্যই যে কাব্য, আমি সে মীমাংসায়ও নেই,
কারও সঙ্গে নেই যে আমি;
কেননা, নিরলঙ্কৃত পঙ্ক্তিও কবিতা
হয়েছে ভূষণ ছাড়া;
কাঠকয়লার মতো জীবন পুড়িয়ে
সেই অগ্নিমাখন থেকে তুলে আনি
নিজস্ব এ পঙ্ক্তিমালা,
হোক না চপল ছন্দ কিংবা ছন্দস্পন্দে
অথবা ফ্রিভার্সে
তবু সে এক অদ্ভুত মায়ার জগৎ…
অমৃত সৃষ্টির এক লাবণ্যের হাসি;
বাজিকর তার কাঁধে অথবা বাহুতে
যেমন সুদৃশ্য পাখি রেখে
নাচায়-কাঁদায়
পর্যটকি-মন;
আমাকে চমকে দিয়ে সেদিন সে সত্য
অগ্রবাহু ছেড়ে উঠে এসেছিল
আমারই ডানহাতে, বাজুবন্ধে
বাম-হাতে, ঘরদোর, রোদমাখা
উঠোন-দেউড়ি-বেড়া,
জানতে পারেনি কেউ
সংবাদের এ শুভতা,
মধ্যেখানে আঁধার গড়িয়ে
পা-পিছল পথে হারিয়েছে
কিছুটা সে পথ;
সত্যের এই যে, ধীরলয়ে উড়ে আসা
পালকবিহীন দুটো ডানা,
মুগ্ধতায় অমলিন
ঢালুতে পাদুটো রেখে তার
সত্যযুগে বিচরণ,
চম্পক আঙুলে জানি
অনামিকা দড়, তবু
বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি মিলে পরস্পর
ঠেসে ধরে থাকে এক কবির কলম;
স্পর্ধাভরে সেই অভিমুখ-যাত্রা তার
বাল্মীকির দুঃখ শ্লোকে
ঘাটে ও অঘাটে তরী ভেড়াতে ভেড়াতে
একটু বা দেরি
হয়ে গেলো বিসম্বাদে—
অসমর্থ যেমন ত্রিশঙ্কু
পৌরাণিক রাজা এক,
সশরীরে-স্বর্গ-যাত্রাপথে
বুকে নিয়ে ব্যর্থতার কাঁটা
আজও ঝুলে আছে শূন্যতায়,
আমরা কবিরা জানি,
সত্যেরা ঝুলন্ত সেরকম
সুরেলা সত্যের খুব গোপন কথাও
লুকিয়েছে কেউ কেউ
প্রজনন প্রদেশ পথের
সেই দ্বাররক্ষী
কে-ই-বা সে?
জানি, সারভিক্সে এসে
উন্মুক্ত হয়েছে তারা সব,
বাহ্, বেশ…
কঠিন সত্যের সেই সকল কথন
জরায়ুর দেহ থেকে খসে পড়ে যায়
মৃত পিঁপড়ের মতো
বসন্তশেষের ঝরা পাপড়ি যেমন;
যেদিকে তাকাই আমি
বুভুক্ষ মানুষ,
পারদবিহীন এক আয়না হাসিতে
ফেটে পড়ে বারবার,
সত্যমিথ্যে পেনোরমা কিংবা
তার বোল-চালে
আন্দোলিত হতে থাকে
অবিনশ্বর চাঁদ
ডোরাকাটা জেব্রা এক
নিরীহ ও অসহায়;
বিমূর্ত সত্যের কাছে নতজানু মাটি
শেষ শয়ানে যখন
সত্য অবিসংবাদী
বলি, ভালোবাসি।