সন্ধ্যার পর
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বেড়ে যায় শেয়ালের উপদ্রব।
হুক্কাহুয়া করে মাথায় তোলে পাড়া; এই বাড়িঘর।
রাত যত বাড়ে, শেয়ালেরা তত চৌকস হয়ে ওঠে
মুরগি ধরতে গিয়ে কামড়ে দেয় নিরীহ প্রজাপতির
পাখায়—ছাতিমগাছ তলায় করে মূত্রবিয়োগ কেউ!
এমন অনাচারে ক্রমে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ডানাকাটা চাঁদ
ডুব দেয়, পাখিরা ফেরে না নীড়ে ডেকে ডেকে আর।
ফলে বহুকাল ধরে পশ্চিমে যাওয়া সূর্যমিনার, আভা…
জলের ফসলে লাল হওয়া পাথরের টুকরো মতো সন্ধ্যা
দেখে না শিশির মাখানো ধুলোয় নির্ঘুম সন্তরণ কারো।
ডানাহীন প্রজাপতি মরে; দেহ চূর্ণ হয় কারো কোপানলে
দগ্ধ হয়ে ওঠে সম্পর্ক—মাছে মাছে গাছে গাছে; পাখায়…
যেন মরা নদী, খরা হয়ে ওঠা মাঠ—কেউ মৃত ঘাসের
শ্বাস নিতে উদগ্রীব—শ্মশানের চিতা; শেয়ালেদের দখলে
যাওয়া আখক্ষেত, ভুট্টা-স্বদেশ প্রভূত হারায় চোখের ভাষা।
সন্ধ্যার পর সমবেত শেয়ালেদের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে!
হিমশীতল অন্ধকারে
চেনা মুখগুলো আঁধারে মিশে গেলে ভাবি, এ বুঝি চোখেরই অসুখ! সংগোপনে হারাতে হারাতে সেসব প্রিয়মুখ হঠাৎ ধরে ফেলার পর, নাড়ি ও নক্ষত্র পড়ে নেওয়ার পর, হাত থেকে হাত, চোখ থেকে চোখ সরে যেতে যেতে অদ্ভুত আঁধারে কারও কারও মুখ খুঁজে পাওয়ার পর দেখি, কুয়াশার ডানায় একেকটি বিষণ্ন পাথর আমার বুকই চেপে ধরে আছে; বসে যাচ্ছে পাঁজরের হাড়ে!
শীতসংক্রান্তি
শীত ফেলেছে ধুম্রজাল; তুমিও এই বেলা
আসন্ন সন্ধ্যায় গাঢ় হয়ে ক্রমে রঙের খেলা—
হারাতে হারাতে তবু তোমাতেই ডুবে আছে
এক হাঁটুজলে। উড়ছে ঝিরি ঝিরি বাতাসে!
খিরের মতো নরম ওই কুয়াশার দাঁতগুলো
হলুদ জামার ভেতর কোনো দাঁত খুব স্থূল!
যখন কামড়ে দাও পাগলা কুকুরের মতো
যখন পোড়াতে থাকো—করো ক্ষত-বিক্ষত
তবু তোমাতেই ডুবে থাকে এই মন সারাক্ষণ
অসহ্য বেদনা সয়ে তোমাকেই করে যে বরণ!
হে পত্রপল্লবহীনা, সকরুণ আগন্তুক হে তুমি
রোদচশমায় যেন স্বাগত, স্বামিনী, স্বয়ং ভূমি
বুঝি এই এলে—কিছুটা বৈরাগ্যে, একাকিত্বে
তবু তোমাতেই ডুবে আছে মন করে ধারণ চিত্তে!