ভাগী
আমরা বলতাম রাখাল
আসলে বাস্তুসাপ সে গৃহস্থের বাড়ি পাহারা দিতো
কালো গাইটি রাখালের মানত
রাতের বেলা চুপটি করে দুধও খেয়ে যেতো
রাখালের মাথায় ছিল সাদা বৃত্তআঁকা
এটা হয়তো দুধ-দিয়ে-অঙ্কিত চন্দ্র-সূর্য!
মাঝে মাঝে আমরাও রাখালের ভাগী হতাম।
গঙ্গা-মনসা মা
পদ্মপাতার ওপর শুয়ে আছে জগৎমাতা
ওগো ধরো, আমাকে জড়িয়ে ধরো!
পুরো সাতদিন আমি খাইনি কিছু
আমাকে আহার দাও দয়া করো
আমার ডানে হরিণী আর বামদিকে বাঘিনি
ওগো, আমাকে পথ দেখাও রক্ষা করো
আমার ঝলসানো পিঠ আর বিকৃত মুখ
ওগো গঙ্গা-মনসা, আমাকে আবার পেটের ভেতর নাও!
সংক্রান্তির রাতে
সংক্রান্তির রাতে আমি তোমাকে চাই
এখন বছর শেষ চরাচরে মহাবিষুব
তুমি অন্নপূর্ণা এসো কলার পাতার সাজে
পায়ে অলক্ত দাগ আর চোখে অঞ্জন মেখে
যখন সূর্য ডুবে যাবে পশ্চিমে আবির ছড়িয়ে
পুণ্যস্নানে চড়কগাছের নিচে তোমাকে চাই!
বউ
হলুদ বাটতে গিয়ে বউটি পাখি হয়ে গেলো।
আমি পাখিটিকে ডাকি জবাব পাই না
শুধু এ-ডাল থেকে ও-ডালে যায় আর কাঁদে
আসলে সে পাখি নয় একটি লাজেরাঙা মেয়ে
ছাতিমগাছের আড়ালে শেষ কথা হয়েছিল।
মনে রেখো
পুকুরে ভাসছে জারুল ফুল
আমি তাকে বলি, মনে রেখো!
বাতাস বন্ধ; স্থির হয়ে আছে পানি
আমি জানি এ-এক জারুলের গল্প :
একটা ঘুঘুর সাথে উড়তে গিয়ে এই দশা
এই নিশ্চল পানাভরা পুকুরে একা একা
ঘুঘুটিও উড়ে গেছে
ঘাসের ওপর পড়ে আছে একটি নরোম পালক
আমি তাকে বলি, মনে রেখো!
এই ঘন শালদুধ
এই ঘন শালদুধ এসো আবার খাই
হলদে রং আর গাইয়ের গন্ধে-ভরা
খিরের মতো এই দুধের এসো ঘ্রাণ নেই
যদি চাও সাঁতার কাটি চাও তো ভাসি
এই ঘন শালদুধ এসো আবার খাই
মাছেদের সঙ্গে আবার দুজনে খাই।
বিছা
একটা বিছা তুমি
ঘাসের ওপর গুটিগুটি হেঁটে যাও।
আমি দূর থেকে দেখি
কাছে যাওয়ার সাহস পাই না
একটা বিছা তুমি
বহুকাল তোমাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
শুয়ে আছি
শুয়ে আছি। নদীর তলায় শুয়ে আছি ঝিনুকের পাশে।
শুয়ে আছি মাছের পেটে
মাছের ভিতরে সংবিধান নেই হত্যাকাণ্ড নেই।
মায়ের পেটই ভালো ছিল গুম হওয়ার ভয় ছিল না
এখন শেয়ালের শিঙে ভর করে দৌড়াতে হয়
আর দরজায় বাতাস কড়া নাড়ে পলাতক! পলাতক!
শুয়ে আছি।
বেওয়ারিশ লাশের চোখে পোকা হয়ে আকাশ দেখছি
সাপের পাশে শুয়ে আশ্চর্য তারা-ফোটা রাত দেখছি!
কুয়া
গনগনে সূর্যের নিচে
একটি প্রাচীন কুয়া
দূরাগত আমি যেই উঁকি দিলাম
দেখি তাতে নিষ্পলক
একটি মুন্ডামেয়ের
চোখ।
কালো স্থির অতল
এবং উদ্বাস্তু।
সাদা পাথর
আমি সাদা পাথর
এসেছি পাহাড়ের গর্ভ থেকে, আমি পাষাণ।
আমি পাথর, জমাট দুঃখ-পৃথিবীর করুণ অশ্রুবিন্দু
এসেছি বোবা ও অনুভূতিহীন একা!
আমি সাদা পাথর, স্থবির মহাকাল
এসেছি মৃত্যুবীজ, মারির চিহ্ন।
আরও পড়ুন: চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের কলম থেকে