গ্রহণ
কত ডাক আসে ঘরে কত ডাক ফিরে যায়
চাঁদকে উল্টো করে হাতে ধরি রূপালি কয়েন
আমার ভেজার বাসনা আকাশের গায়ে যখন
লাগে দেখি মেঘের গ্রহণ—
খুব বেশি কচুপাতায় স্বপ্ন দেখি না।
যখন উঠেছে ফুটে দাদিমার নকশিকাঁথায়
এক নার্সের চোখের মতো বিড়ালের চোখ
কুয়াশার জ্যাকেটে মোড়া দাদার কবর;
তখন জেনেছি আমি—
কত ডাক আসে ঘরে কত ডাক ফিরে যায়
আকাশের গায়ে কেন লাগে না গ্রহণ!
বাদামবাগানের ফুল
কী করে হারাব এই সোনার মহর! পানির দামে কিনেছি বাদামবাগানের ফুল। ধুতুরার অরণ্যে খুঁজে পাওয়া নাকফুল সযত্নে রেখেছি। পাখিদের ফ্ল্যাটে পড়ে আছে চশমার ফ্রেম। আমাকে ডেকেছে যারা কলাপাতা প্লেটে তাদের বিদায় দিয়েছি। কলসভর্তি বিরহদিন পুঁতে রেখেছি পোড়োবাড়ির বৈঠকখানায়। আলস্য চোখের পাতায়—কী ছবি এঁকেছিলে টানা টানা রেখায়…
রঙের চতুরতায় পালকের বিনিময়ে কী ফুল কিনেছি আমি—এসে দেখে যাও আগামী শীতের বিরহদিনে…
নদীসঙ্গ
নদীতে যাব না আমি।
এই স্রোত ভাসিয়ে নেবে না
তিলকরাঙা গ্রামে
যেখানে এসে সার বেঁধে
নৌকাগুলো থামে।
উপনদীর নাভিতে জমেছে পলি
উধাও বাঁশির সুর
ভাটিয়ালি গান—
মৎস্যকুমারীর ঠোঁটে মৃদু অভিমান।
কেন তবে ডাকছো আমাকে?
বলেছি তো সঙ্গ নেব না
নদীতে যাবো না আমি—
যাব না।
শূন্যস্থান
পাক খেতে খেতে বাতাস ঘুরছে
ঘুরতে ঘুরতে ধূলি ও ঝড়—
শূন্যস্থান পূরণ করছে…
আর মহাশূন্যের দিকে ঢুকে যাচ্ছে
আমাদের ধূসর প্রকৃতি
বোধ ও বধির হাওয়ায় উড়ছে—
ফল ও ফসিল…
চাকার ঘর্ষণে অবিরাম বর্ষণে
ধস ও ধ্বংসের দরজায়—
বাতাস এসে শূন্যস্থান পূরণ করে যায়!
কৃষ্ণ বুকের চাতালে
কুয়াশার শাড়ি পরে বসে আছে দূরের সবুজ
কে এসে খুলে নেবে ঘোমটার ভাঁজ
ভেতরে অঢেল জোনাকি স্রোতের ইশকুল
নামতার মতো ফোটে মহুয়ার ফুল।
হাতের রেখার মতো জেগে আছে ঘাসপত্র
আর রেখাচিত্র আঁকা দেখো পাথরের গুহায়
প্রযত্নে সবুজ রেখে বিলি করো পাতাঝরা দিন
কৃষ্ণ বুকের চাতালে জমছে প্রণয়ের বীজ…
কে তাকে পরাবে নিষেধের বেড়ি?
শেকলে বাঁধবে তার প্রাণের তাবিজ!
রোজ এসে ফিরে যায় পাখিডাকা বিকেলের রোদ
মরাবৃক্ষে লেগে থাকে সবুজের ওম—
দোয়েলের ঠোঁটে ভাসে অবিনাশী শিস
তাক করে আছে কোন শিকারির তীর?
কুয়াশার শাড়ি পরে বসে আছে দূরের সবুজ
কপালে দিয়েছে এক ছোট লাল টিপ।
পাখি ও বিমান
পাখিদের রানওয়ে থেকে পালক ঝরছে
দুহাত পেতে কুড়িয়ে নিচ্ছি—
গুঁজে রাখছি কানের পাশে; বান্ধবীর খোঁপায়।
পেটভর্তি যাত্রী নিয়ে উড়ছে বিমান
বিমানের রানওয়েতে ঝরছে পালক
আর ঝরে ঝরে পড়ছে নিচের দিকে
সদ্য পেতে রাখা দুহাতের তালুতে…
কে জানতো পাখি ও বিমান—
একই রানওয়েতে উড়ছিল সেদিন!