অনিবার্য নিয়তির সাক্ষাতে
স্বপ্নে দেখলাম আমার সমস্ত গ্লানি আর ব্যর্থতার কাছে
পরাজিত হয়ে আমি আত্মহত্যা করেছি
আমাকে ঘিরে ঘরভরতি মানুষ
কেউ বিলাপ করছে অথচ তাদের বিলাপ করার কথা নয়
কেউ আফসোস করছে সামান্য বন্ধুত্বের জন্য
কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করছে, ‘এমন করে যেতে হবে!’
মৃত মানুষের সামনে গালিমন্দ করা শোভন নয় বলে
কেউ কেউ মনে মনে সমানে গালি দিচ্ছে
মৃত্যুর কারণ খুঁজতে থাকা রহস্যঘেরা কিছু মানুষ
ভীষণ তীক্ষ্মচোখে আমাকে পরখ করছে।
মৃত মুখটায় বুজে থাকা চোখের ভেতরে
আমার গ্লানি, আমার ব্যর্থতা সব লুকিয়ে আছে!
আমার সমস্ত ব্যথা সমস্ত ক্ষোভ এক শান্ত পাথর হয়ে
শুয়ে থাকা শরীরে আশ্রয় নিয়েছে!
আমার চোখ ও শরীর কতশত ব্যর্থতা, কত গ্লানি
কতশত স্বপ্নভঙ্গ, কত ব্যথা নীরবে সয়ে গেছে; শুধু,
একটা প্রস্ফুটিত স্বপ্ন দেখবে বলে।
সে স্বপ্ন কখনোই রঙে ও আলোয় প্রস্ফুটিত হলো না
অথচ এক ব্যর্থতার ঝরে যাওয়া অনিবার্য নিয়তির দেখা পেলাম।
স্বপ্নের ভিতরে স্বপ্নের একটা শিরোনামও দিয়েছিলাম,
‘ব্যর্থতা ও গ্লানির আত্মকাহিনি’—তবু মৃত্যু! মৃত্যুই তো!
লাউয়াছড়ার সন্ধ্যা
সন্ধ্যার মত আশ্চর্য কিছু হাত
নৈঃশব্দ্যের বন পেরিয়ে আমার নিকটবর্তী হচ্ছে
সঘন এক কুয়াশার মেঘ বনের শরীরে জড়িয়ে গেলে
সমস্ত লাউয়াছড়ায় ধ্বনি প্রতিধ্বনিত করে
একসাথে ডেকে ওঠে বনমানুষের দল
সমস্বরে ঘোৎঘোৎ করে যায় বুনো শুকর যত
সময় বলে দিচ্ছে বন ছেড়ে নিরাপদে যেতে
রাত এলে বনের পথে পথে বের হয় সরীসৃপ ভয়
অথচ এক মায়াবী সুন্দরীর কোমলতার মতো
সন্ধ্যাও নারীময় হচ্ছে ধীরে ধীরে। এ কোন কুহক লাউয়াছড়ার বনে!
নারী কি সন্ধ্যার বন? কুহেলী কোনো!
আমি যেন নিশিলাগা ঘনঘোরে ঝিঁঝিডাকা মায়া!
কোথায় সরীসৃপ হিসহিস ভয়;
কোথায় বনমানুষের ডাক, বৃক্ষ শাখায় বাজে ধ্বনি-প্রতিধ্বনি?
শুধু মনে ছিল, সবুজ ঘন হলে রাত আসে অমানিশা কালো
মনের এই ভয়ে, ফিরে আসি মায়ার মাতাল ছেড়ে
একদিন লাউয়াছড়ার সন্ধ্যা, আমাকে নিয়েছিল কেড়ে।
অতলের সন্ধানে আমার আত্মজা
উত্তরের হাওয়া আসে বিরুদোলার ডাকে
অনেক ডেকেছে সে বছর ঘুরে
কন্যা আমার বেড়েছে তার বয়স নিয়ে
পূর্বপ্রাণপুরুষের শিকড়-গভীরে কী আছে তার?
সময়ের প্রাণপণে খুঁজে ফিরে সে
অতীত বলয়-বাহির, প্রশ্ন শতাধিক—
গল্পের জমা-খরচ জমিয়েছে সে, দাদা-দাদির থেকে।
উত্তরের হাওয়ায় গন্ধভাসে শীতের পিঠার টান
উত্তরের হাওয়ায় নাচে পানি ও মাছের প্রাণ।
কতদিন শোনা হয়নি কুমারের শীর্ণতোয়া দিবসের গান
কতদিন দেখা হয়নি বিরুদোলার পিদিমজ্বালা দূর নক্ষত্রঘর
আত্মীয়ের নির্জন কবরগুলো সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে
কী কথা কয় তারা অতীত ভাষায়?
আমার আত্মজা সেসব কথা জেনে নিতে
বেছে নেয় উত্তরের হাওয়ায় শীতের প্রাক্কালে।
সকালের শিশিরমায়ার ঘাসে আর নক্ষত্র আলোর রাতে
বিরুদোলায় ভাসাবে সে স্বপ্নের ডানা, সমূহ বিস্তারে—
অতলের সন্ধানে কন্যা আমার, উত্তরের বিরুদোলায় যাবে
. এই শীতের প্রাক্কালে।