রৌদ্রসংক্রান্তি
এই রৌদ্রের কাচ মগজে পুষে তোমাকে জানাই
বৃষ্টির ভরসা।
. আজকের ভাপ ওঠা
রাস্তার পাশে তৃষ্ণার্ত কুকুর গতকাল তোমাকে দেখেছে—
তুমি খুলবে গুমোট অন্ধকারে
. চিত্রল বিদ্যুৎ;
তার কিছু
নমুনা তোমার চুলে বয়ে গেছে অবাধ্য নদীর মতো
আর বেহায়া নাগর টিপ্পনি কেটে দেখে নেয়
রেডিওর বোতাম ঠিক আছে কিনা। যেন
তোমার মুখের চিহ্ন
হাস্নাহেনার ভিজে ওঠার আসন্ন সময় ঘোষণা করে।
এদিকে হাতেটানা রিকশার মতো
ফিরে আসছ তুমি
সন্ধ্যার কোলাহল থেকে।
. আর আমি
কিছুটা প্রশান্তি পেতে বেড়ালের নখের কাছে
লুটিয়ে থাকি যেন মাছের আড়তের মতো
উদোম হয় মাছের সুষমা
গ্রীষ্মের ভাপে রিকশাগুলো এক একটা গনগনে দুপুর
আর সন্ধ্যাবেলা পানশালায় বাজে বরফের
অফুরান সাঁতার।
শূন্যে কৃষ্ণচূড়া অথবা ফাটা কার্পাস আগুনের বৃষ্টি
রোমকূপে ঘামের শিহরণ আমাকে মড়কের চেয়ে
আরো বেশি পুড়তে দেয়, আর
হলুদ ক্যাবগুলো এক একটা অগ্নিকুণ্ডের মতো
আত্মনিবেদনে প্ররোচিত করে—
আমি আগুন পান করে আরো তাতিয়ে উঠি
. যেহেতু
তুমি আসছো বাথট্যাবের মতো
শীতল পিঠ নিয়ে; যদিও আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই
. বৃষ্টির স্বাদ
নোনা মেয়েমানুষের মতো
চামড়ায় আস্তরণ পরায় কিনা, যা দেখে
চিনে নেয়া যায় কুষ্ঠরোগীর মতো। আর হ্যাঁ
. এখন তো এপ্রিলই—
. শিশ্নগুলো ঘর্মাক্ত উলের
সাথে নিরুপায় ভিজে থাকে, আর
মহিলাদের বগলের নিচে সস্তা পাউডার
আর নিতম্বের গভীর রেখায় যে স্বেদবিন্দু
. তাকেও জানতে ইচ্ছে হয়।
যখন সান্ধ্য আলোয় সেমিজের কাফনে বাতাস আসে
আর তাপগুলো ধীরে ধীরে উঠে যায়
তখনও তুমি কেন যে বেড়ালের কথা ভাবো!
. আর
আমি ভাবছি যে অন্তর্বাস তোমাকে আরো
আমার শিরায় ছলকে পড়া গরম কফির জ্বালা ধরায়—
সেখানে হুক বা ইলাস্টিকের দাগে কেমন করে বাতাস
তালশাঁসের রস এনে শুশ্রূষা দেয়, যেহেতু
. বরফ কলে
পুরুষের ঘর্মাক্ত হাতগুলো কাজ করে
আর মাঝে মাঝে চেখে নেয়
তোমার ঠোঁট গলনালী আর দ্বৈত-স্তনের মধ্যে নেমে যাওয়া
. ঠাণ্ডার কাপন!
যারা আমাকে তারপিন পান করতে দেখে ভেবেছে
বিপন্নতা বুঝি আর কিছুতেই নেই। আমিই একমাত্র
অন্তত সূর্যের এই অঞ্চলটায়—
যেখানে মাথা পেতে নিতে পারে সেই সব পুরুষের হৃদয়
যারা স্থূল শরীরের ভেতর বীর্যের স্পন্দনও টের পায় না
আর তাদের রমণীরা ফার্নিচারের মতো ব্যবহৃত
. তাদের পক্ষে
আমার মগজে গাঁথা কাচ নিছক কাচের টুকরো, তারা
ফ্রক পরা শিশুদের শিশ্ন দিয়েও বাসনা করে
এবং কিছুটা বাৎসল্যের সাথেও—
যদিও আমাদের শিশু ব্যাঙাচির দেহের মতো
লেজ নেড়ে নেড়ে শূন্যে মিলায়!
আর এখন ভয় লাগে।
জলের দিকে পায়ের ছায়া ক্রমাগত মিলিয়ে যেতে চায়
. কাচের ইচ্ছায়—দূর থেকে মনে হয়
বাইনোকুলার হাতে আগুনের জেব্রা;
আমরা যাকে বলি সোসাইটি
তা আমাকে নেয়নি পালিশ করে। কারণ
এর বাইরেই থাকে কুষ্ঠের শরীর। কারণ
আমি কাদায় ডুবে যাওয়া এক একটা চাকা
পরিয়ে দিয়েছি মহিষের পায়!
এখন এই মেহগনি বাগানে নিশব্দ যে পুরুষ
বাতাসের মৃদু কলরবে তোমাকে বাসনা করে
তার ঝাঁপিতে সাপ হয়ত আছে, তবে
মুকুটের লালসা নেই—গন্ধবণিকের মতো
দেখে আসে না অন্দরের ঝাড়বাতি।
আমি তো দগ্ধই ছিলাম
বনআগুনে পুড়ে যাওয়া কাঠের শরীর
পশুর কঙ্কালসহ
দীর্ঘতর দিন।
. বহু ভেবেছি আমি—
গ্রীবায় যে উষ্ণতা তুমি লালন কর
তা নিছক উত্তাপ নয়—ঘুমন্ত চুলগুলো
কিভাবে নেমে যায় পিঠ ছাপিয়ে
অস্থির নিতম্বে!
আমি বিস্ময়ে ভেবেছি এসব
তার ভেতর হয়ত গুজে দেয়া যায়
এক একটা বিদ্যুতের সাপ।
আমি পানশালায় যাদের চিনি তাদের মগজে
কোনো কাচ নেই
. রৌদ্রের তামাটে দেহ নিয়ে
ধাঁধানো মরুতে রাখেনি পা, নিত্যকার অভ্যাসের মতো
হয়ত তুমিও খুলে দাও লাল রিবনের অবকাশ—
তখন বৃষ্টিপাত হয় কিনা জানি না।
. তবে এই গলিঘিঞ্জি ভরা
নগরে কোনো কোনো নিশুতি পাখির পালক উড়ে যেতে পারে
জানি ঠিক তখনই তোমার শয্যায় ট্যালকম পাউডার
নক্ষত্র হয়ে যায়—যা উত্তপ্ত বিকেলে কিছুটা মসৃণতা দিয়েছে
ঘামাচি উঠতে চাওয়া বাঁকে বাঁকে। আর
আমার তো আলাপনের কিছু নেই।
নারীরা জেনে যায় তাদের ত্বকের মাহাত্ম্য—
মানুষের খোঁজ যেন তার চোখে প্রেতের ছায়া।
কিন্তু তোমাকে নিছক শরীর ভাবি না
তোমার দেহ বয়ে আনে
ভেজা কদমের ঘ্রাণ।
অনেকেই প্রশ্ন করে
দপদপে শিরা লাফিয়ে নামা ঘাম দেখে
কেন যত্রতত্র স্নানাগারে খুলি না
. লোনা পোশাক
আমি তাদের মতো প্রশ্নাকুল
মেঘ বা স্মৃতি চিহ্নর কাছে— কিন্তু
আমার হৃদয় ধোঁয়ার মতো কুণ্ডুলি পাকিয়ে
উঠছে আকাশে; হয়ত
ব্যাঙ শুকনো গর্ত থেকেই নিজের রক্তে পায়
জলকেলি। হ্যাঁ, তাদেরও বলি:
আমার এ অপেক্ষায়ও কোনো গূঢ়তত্ত্ব আছে
যেভাবে মুষিকের গন্ধে সতর্ক হয় বেড়াল, কিন্তু
আমাকে পাবে না সেভাবে। আমি নিজের জন্যই
নির্মাণ করি দুর্ভেদ্য শূন্যতা।
ঘুড়ির কঙ্কাল যদি ফিরে পায়
ফরফরে দেহ—আমি তবে বলতে পারি তোমার
আঁচলে ঘুমিয়ে আছে চাবির গোছা
নিদেনপক্ষে তার কাছেই তো শিখেছি নৈশব্দ।
ব্যর্থতা বলে যা আছে তা শুধুমাত্র বটফল
আমার চলার ছন্দ দেখে অনুমান নয়
নিশ্চিতভাবেই
বলতে পারো প্লেগে উজার হওয়া কোনো গ্রাম
যা ঠিকানা হয়ে আছে তোমার স্মৃতিতে। অথচ
কেন যে বারবার আমাকে নাও তোমার গ্রীবায়
আমার হাত
রাজহংসের মতো লতিয়ে উঠতে পারে যদিও
কিন্তু আমার হৃদয় চিরকালই বালুর বাঁধ
অপ্রয়োজনেও ডুবিয়ে দেই সন্ত্রাসে।
ফুটপাথে মুগ্ধ হওয়ার মতো করতলে কোনো রুমাল নেই
চাই না করতালিতে ভেঙে পড়ুক পানশালা। যদিও
তুমি বারবার লোল ভিড়
ক্লান্ত আঙুলেও মুঠো করো মুদ্রার সাফল্য।
যদিও আমি বলি না এতে আমার আপত্তি আছে
শেকল ভাঙা নয়, তাকে ডুবিয়ে দিয়েছি আগুনের জিভে।
তাই কী করে বলবে আমি বাঁধন জানি না। জানি শুধু
অহংকারে চেপে ধরতে নিজেরই গলা। কারণ
এ ছাড়া কে হতে পারে স্পর্ধিত, প্রতিদ্বন্দ্বিতায়!
আর সেই বালকেরা, যারা দৃশ্যত কিছু দেখে না;
টকটকে অন্ধকারে বাজিয়ে বেড়ায় নক্ষত্র।
তার হাতে আমার চোখ দিয়ে বললাম
‘আমাকেও পরাও কালীগঙ্গায় ভেসে যাওয়া
. দেহের অঞ্জন।’
কিন্তু তখনো তুমি
কিছু গোলাপের পাপড়িতে বরফ বাজিয়ে ভাবলে
এবারও বর্ষায় উপচে উঠবে নর্দমান স্বাস্থ্য।
. তার চেয়ে ঢের ভালো
কামারের হাসফাঁস। হিম ঘরে বিয়ারের ক্যান।
এসব কথা শুনে ভাবি
হয়ত মেঘের ফ্রিজে আমার দুঃখ জমে জমে
হয়ে উঠবে জীবাশ্ম। তা দেখে ভাববে
অন্য পুরুষের মতো আমিও শোণিতে
. পোড়াই তারাবাজি।
কিন্তু জামরুল ভরা এই দুপুর রসহীন
যদি না তুমি তোমার চিবুক এনে ছোঁয়াও; দ্যাখো
গাছের পাতায় পাতায় ক্লোরোফিলের দেহ
ধূলির কফিনে সমাহিত—তাকে প্রশ্ন করো
সেও পাপড়ি খুলে আছে—তাকেও দাও
পরাগের আরাম। এভাবে
এই কৃষিজ প্রকৃতি তার যোনির গহ্বর থেকে
আমাদের ঠেলে দিচ্ছে একে একে বকনা বাছুর।
আর
রমণক্লান্ত বাহুর মতো
এখন কিছুটা নত হয়ে এসেছে
. সূর্যের গ্রীবা: তাই
শিউলিতলায় নরম হয়ে ঝরছে উত্তাপ।
. জানালায়
রোদ দেখে দ্বিধা জাগে, পায়ের স্পর্শ
পেয়ে সেও হয়ত নকশাকাটা কাগজের মতো
. ওড়ায় বিকেল!
কিন্তু তুমি বিমুখ প্রান্তর ভেবে
কালো মখমলে জড়িয়ে জড়িয়ে রেখেছো নিজেকে—
যেন বীজের সুপ্ত অন্ধকার তোমাকে দিয়ে গেছে
পিঁপড়ের বিষ
অথবা হতে পারে
গভীর রাত যেভাবে ফ্রিজ থেকে ঢেলে দেয়
তরলরক্ত
তার মতোই ঝরবো আমি অনিশেষ—আর
এ সময় পানশালা ছেনাল নদীর মতো
ভাসিয়ে দিতে চাইছে, কিন্তু আমি
বিস্ময়ে দেখেছি তাদের হৃদয় এক একটা
নূহের নৌকার মতো পরিত্রাণে ভাসছে; আর
আমি ভাবছি জীবনে আমার অপচয় তো কম হলো না!
যিশু একবারই কাঁটার মুকুটে শোভিত হয়ে
পুনর্বার ঈগলের পথ পাড়ি দিয়ে
ফিরে এসেছে ক্রুশসমেত ঈশ্বর; আর
বারংবার আমি ক্রুশবিদ্ধ মানুষ ও ইতর।
আমাকে ছেড়ে যেতে পারো বা নিজেকে
কলায় ব্যস্ত রেখে—কিন্তু যে বর্শার ফলা
. পাথরে ঘষে ঘষে
নিয়েছি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার দিন;
আর ছুঁড়ে মারলেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো
দিগন্ত থেকে লাল সুরকির পথে—যেভাবে
প্রথম রজঃস্বলা হয় প্রকৃতি
. লাঙলের কৌমার্য দেখে;
তুমিও চুলখোলা ভীষণা। আর আমিও
এই দুপুরের মতো ঝরছি গুচ্ছগুচ্ছ
কৃষ্ণচূড়া আর ভাবি
আমাকেও নেয়নি কেউ আমার ইচ্ছার
দীঘল খোঁপায়!
কেননা দুধধান ফলে ওঠা সবুজ ক্ষেতে আমি
নিরাপরাধ ট্রাক্টর আর আমার হৃদয়
ছিন্নমু—কবুতরের নাচ!