নস্টালজিয়া
‘এক মাথা টাক নিয়ে
রাত জাগি উকুনের ভয়ে
দিনভর বিষের আতঙ্কে থাকি, আমি কবন্ধ’
বলতো সে অস্ফুট মিড়ে—
দেখেশুনে মনে হতো, চরাচরে
সে-ই শুধু চোখে দেখে ভালো আমরাই প্রকৃত অন্ধ!
ঈষৎ লক্ষ্মীট্যারা চোখে
সোনালি আলোর আকাশটাকে দেখে
বলতো সে যতিহীন; সাবলীল সুমিত চিৎকারে
‘সেই দিন ধর্ষিতা হলো চাঁদ
যেদিন মানুষের অবাধ
প্রথম পায়ের ছাপ এঁকে দিলো চাঁদের শরীরে।’
কৃষ্ণপদ ঢালী
অথবা অরুণ গাঙ্গুলি
এমনই নাম ছিল, ঘনিষ্ঠ বন্ধু সে সকলের চে’
বছর চব্বিশ আগে
এই সব প্রলাপ বকে বকে
মরে গিয়ে আমাদের মাঝে রইলো সে বেঁচে।
রোজনামচা
সমস্ত দিন শেষে আজও কোনো সুখবর আসেনি
অথচ অসংখ্য সুখবরে ভরে উঠতে পারত হাতের আঁজলা
অধরা প্রজাপতির মতো একটা মৃত্যু
রোমশ বুকের ওপর ধেই ধেই নেচে এখন ক্লান্ত।
কিছু প্রেম, কিছু ভালোবাসা তাকে দিতে পারিনি বলে
বিকেলের পরিশ্রান্ত জলে ধুয়ে নিচ্ছি
সবটুকু লজ্জা
এখনই আমার পিঠে ঠ্যাঙাড়ে ছোঁকরারা
আরও কিছু লজ্জার পোস্টার সেঁটে দেবে
কেননা, আজও রবীন্দ্রনাথ
জীবনানন্দ অথবা অন্য কোনো বৃক্ষের নিচে
পঙ্ক্তি কুড়োতে যাইনি
এবং আমার মুঠোর মধ্যে এখনো
পূর্বপুরুষের ঋণ অস্বীকারের বেহায়া বাসনা
এ বছর অনাবৃষ্টিতে চালের মূল্য সামান্য ঊর্ধ্বমুখী বলে
মেঘেদের সাথে প্রাকসংলাপের তাগাদা দিয়েছিল
কতগুলো মধুভুক মৌমাছি
কারণহীন কিছু কারণে সেখানেও যাইনি বলে
কিছুটা লজ্জা এখন পিঁপড়ের মতো কামড়াচ্ছে
হা ঈশ্বর,
এতক্ষণ অযথাই তোমাকে দোষারোপ করে করে
বৈরাগ্যে আসক্ত হচ্ছিলাম
অথচ আজ সুখবর পাওয়ার মতো কিছুই করিনি
সারাদিন
নিষিদ্ধতায় নিমগ্ন থেকে বিশুদ্ধতার বকুনি খেয়েছি
পথ-চাওয়া
হলদি বনে ফুল ফুটেছে দুয়ার খুলে দেখি
কখন যেন মনের পটে নামটি তোমার লিখি
অনেকগুলো শ্রাবণ গেল অনেক বরষা
একফোঁটা জল পাইনি কেবল মেটাই পিপাসা
তোমার বুকে কুসুম দোলে, আমার চোখে সুখ
স্বপ্নমাখা ফাগুনবেলা আগুনলাগা দুখ্
জোনাকজ্বলা রাত পোহালে শুকতারাটি হাসে
বরই ফুলের নথ পরেছ—শুধুই মনে আসে
পথের পাশে উঠলে ফুটে হঠাৎ বুনোফুল
যতন করে কার কানেতে পরিয়ে দেব দুল?
সাতসকালে শিউলিতলে অবাক চেয়ে রই
লুটিয়ে থাকা ফুল কুড়োবে এমন মানুষ কই!
আমন ধানের গন্ধ নিয়ে আসল পুবের হাওয়া
আমার তবু হলো না শেষ পথের পানে চাওয়া।
ঈর্ষাতুর আঙুল
মৌন, আঁধার প্রবণ এই সন্ধ্যার বাতাসে
আরও একঝাঁক নৈঃশব্দ্য এসে জড়ো হলো
কুমারী, তোর চুলে তাদের চঞ্চল চলাফেরা,
নিশ্চুপ দেওদারু বন, বিস্তীর্ণ অন্ধকারজুড়ে
অবান্তর কবিতাপ্রসঙ্গ,
এতক্ষণে আরও কিছু তারা ফুটেছে বধির আকাশে
এইমাত্র এক জন্মান্ধ বাদুড় উড়ে গেল সাঁই-সাঁই,
সবাই এত বেশি প্রতিবাদহীন হলে
তুইও চুপচাপ হয়ে যাস।
কুমারী, তোর চুলে নিস্তব্ধতা খেলা করে—
আমার এই ঈর্ষাতুর আঙুলগুলো নিয়ে
আমি কী করি বলো?
বাসিন্দা
কাক, আমিও তোমার মতো
এ শহরেরই বাসিন্দা
আমারও স্বপ্ন নেই—
ঘরহীন ভাবুকের মতো
আমিও টেনশবিহীন
এবং আমিও তোমার মতো সর্বদা
থাকি লালায়িত এ শহরেরই
উচ্ছিষ্টের দিকে…