রূপ নিয়ে কালোর কবরে
রূপ নিয়ে তাদের গর্ব কাল গর্ভাশয়ে প্রোথিত ভ্রূণের
মিলিত কোলাজ হতে গিয়ে যৌবনের অশেষ তেজের
অপভ্রংশ পড়ে থাকে দলিত শয্যায় কত যে মুখভঙ্গি
এরা পথে রেখে গেছে, মুগ্ধ কালোর দিকে কত যে মুখোশ
ছুড়ে রতিতীব্র হয়েছে বেহুশ, এখন পিষ্ট হতে ভালোবাসে
নগর সৌধচূড়া, খোঁপা থেকে খুলে যাওয়া নিভৃতের ফুলে।
রাত্রির আঁধারের নিচে কী করে যে প্রস্ফূটিত করে তোলে রূপ
তখন কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে পাওয়া যায়, তখন ত্থুত্থুরে
পিতামহী ঘনিষ্ঠ দাঁড়ায়, লোলচর্ম এতখানি লুকায়িত ছিল
ঐ টানটান স্নেহের প্রলেপ, ঐ তেজোদীপ্ত অহঙ্কারী গ্রীবা
ঘোরাতে ঘোরাতে তারা কবেকার, চলে যায় কালোর কবরে।
কবিতার ভীরু পিছু
পিছু পিছু যাই, দেখি কোথায় চলেছে আজ আমার কবিতা।
মানুষের সন্তপ্ত বন্দরের সীমাঘেঁষে
বাজার বসতি আর ঊর্ণনাভ লোকালয় ছেড়ে
দেখি লোকায়ত বাংলার প্রান্তর অভিমুখে চলেছে সে
কাদামাখা কৃষকের মত, এক ধ্যানী সন্তের বেশে
শব্দের ব্যর্থ চাষাবাদ ছেড়ে বীজ বপনের যাদুতে
প্রকৃত নিমগ্ন সে হতে চায়, ফলাতে চায় সেই শস্য
যা আহার জোগায় আর মানুষ বাঁচিয়ে রাখে।
জটাধারী সন্ন্যাসীর মতো ওই ধ্যানমৌন পাহাড়ের
চূড়া থেকে নেমে গৃহের নিভৃতির দিকে দেখি তার
দৃঢ় পদক্ষেপ, চিত্ত বিক্ষিপ্ত হতে হতে ওই শূন্য দর্শনের
দিক হতে মুখ ফিরিয়ে এনে সংসারের আশ্চর্য বাগানে
সে ফোটাতে চায় ফুল কলকাকলীময় শিশুদের ঘর
যেখানে প্রিয়ার একান্ত স্বর মেদুরতা ঘন বর্ষণে বাজে।
প্রসাধিত সব মুখের মেকি ভালোবাসা ছেড়ে
আলোঝলমল নগরীর উছলে ওঠা যুবতী সকাশে
ঐ পানীয়ের নিয়নের গূঢ় অভিক্ষেপে তখনো বিভ্রান্ত
মাতাল প্রেমিকের সাজসজ্জা খুলে, শিরস্ত্রাণ নামিয়ে
এক ভীরু প্রেমিকার গোপন প্রতীক্ষার দিকে স্থির পায়ে
চলেছে আমার কবিতা নিগূঢ় প্রার্থনার মতো প্রাণপণ হয়ে।
মৌলিক হতে চেয়ে আমার কবিতা হল ঈশ্বরের প্রাণময় গৃহী।
খর্বকায় কবিদের অসম্ভব চাঁদবাসনা
ওদের দীর্ঘ করে দাও অবাস্তব উপহাসে,
ঐ রমণীদের দৃষ্টিসীমার সমান্তরালে এনে দাও
. ওদের কৌতুক;
অসম্ভব চাঁদবাসনায় পেয়েছে ঐ আস্তি-নাস্তিদের,
জোৎস্নার আকণ্ঠ মদ পান করে বহুরাত্রি বেঘোর মাতাল।
খর্বকায় কবিদের মাথার ভেতর কেন এত উজ্জ্বল স্বপ্নের ফোয়ারা
. এত ডালপালা কে যে রুয়ে দেয়?
কে যে অরূপের পাত্রে পাত্রে অপরূপের এত দ্যুতি ঢালে;
কারা এসে আকাশ টাঙায় আর বুনে দেয়
. অসম্ভব রূপবান চাঁদকন্যামুখ?
বামনের সাধ্যি নেই হাতখানি মেলে ধরে চাঁদে
কল্পনায় সে কেবল পাড়ি দেয় চন্দ্রধোঁয়া পথ
আর করুণ মনোদুধে ভরে তোলে চাঁদের বাথান,
যেন এক দুধেলা গাভীর নিচে শুয়ে আছে
. তৃষ্ণার্ত তৃপ্ত শিশুদল!