ভাড়ুদত্ত কড়ি গোনে উপবাস দেয় কালকেতু
ভাড়ুদত্ত কড়ি গোনে, উপবাস দেয় কালকেতু। অর্থাভাবে তারাশঙ্কর রচনা করে মেয়ের চিতা, সুকান্ত চাঁদের শরীরে খোঁজেন রুটির ঘনিষ্ট গন্ধ। সভ্য পৃথিবীতে শুধু সততায় কেনা যায় পরিপুষ্ট দরিদ্রতা। কেননা এখানে পুকুরের গুলতিও বাটপারিয়াদের মুনাফার পণ্য। কেননা এখানে ঠগচাচা হয় যে, বাড়ি-গাড়ি করে সে। আমাদের ইতিহাসও তাই সাক্ষ্য দেয়—আদর্শলিপি দেয় ভুল পাঠ। কে না জানে, আঙুল বাঁকালোই ঘি ওঠে, ঘি উঠানো যায়। মুরারীশীল তাই পাঁজেরোতে চড়ে, মুজিবুল হক কবীর শান্তি খোঁজে কবিতায়।
রাধার মোবাইলে কল-ওয়েটিং
বাঁশি বাজে…
রাধার মোবাইলে কল-ওয়েটিং!
চোখে জড়ো হয় দীপ্র দুপুর
পুড়ে দেয় আস্থার সকল পাঠ; বিন্দু বিন্দু
. বাষ্পায়িত স্বপ্ন সব
. রচনা করে মেঘের শরীর—বজ্রপাত
যক্ষ নেই
বিরহী-প্রার্থনা নিয়ে মেঘদূত
তাই খোঁজে না আর মিলিশার ঘর
‘রাধা বিনে সাধা নেই’ বুকের পাতায় লিখে তবু
. প্রেমান্ধ ঝড়!
বাংলাসন
বাংলাসন দেখে
. চট করে বুঝতে পারি না সময়
. ঠিক কতদিন আগে বা কতটা বর্তমান?
সবকিছু কেবল ধূসর মনে হয়—
বাংলাসন মানে
. নিঝুম সন্ধ্যার বাংলাঘর, ঢিমে আলো
. পড়ার টেবিলে বুজে আসা একজোড়া চোখ
. বইয়ের হলুদাভ ছেঁড়া পৃষ্ঠা, সাদাকালো ছবি
মহাত্মা রবীন্দ্র-নজরুল, আট লাইনের সুফিয়া কামাল
. বন্দে আলী মিয়া, বড়জোড় শামসুর…
বাংলাসন মানে ভেঁজা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা
. লেবু পাতার সতেজ ঘ্রাণ
. মামার বাড়ির দুধভাত
. মা’র চুড়ির শব্দের মতো অঝোর বর্ষণ
. উঠোনের এক পেয়ালা বন্যায়
. ভাসতে ভাসতে ডুবে যাওয়া
. কাগজের নাও, শৈশব- কৈশোর!
বাংলাসন মানে
বাবার কড়ে আঙুল, স্থির নির্ভরতা
নানার কবরে হলুদ ঘাসের ছায়া
সূর্যাস্তের লাল আলো—ফিকে হয়ে আসা স্মৃতি
বাংলাসন মানে আজ ইলিশ-সকাল,
. বটমূলে পান্তা, রবীন্দ্র সংগীত
পাড়া মহল্লায় উদ্দাম কনসার্ট—মেলায় যায় রে…
ত্রস্ত পায়ে প্রশ্ন নিয়ে তাই দাঁড়াই নিজের কাছাকাছি
আমি কি তবে বাঙালিয়ানা ছেড়ে
. অন্ধকার গলিপথে এগিয়ে এসেছি?
আকাশে পূর্ণিমা
আকাশে পূর্ণিমা। নৃত্যপটিয়সী চাঁদ খলবল করে হাসে পুকুরে।
ডাকে প্রেম। তারায় তারায় গেঁথে রাখি স্মৃতিটুকুরে।
ফেরে না সে। রজনীগন্ধার ঘ্রাণে মনের উঠোনে নামে বাঘ
ক্রন্দনটুকু ভাসিয়ে দেই—দু’চোখে না হয় নদীটা-ই থাক
দু’হাতে মন্দিরা, ধূপ মাখা সন্ধ্যা, যে নেই তার জন্যেই করি ভজনা;
নৃত্যপটিয়সী চাঁদ খলবল করে হাসে—আকাশে পূর্ণিমা।