রবীন্দ্রনাথ
একটি বৃক্ষের মাথা কত উঁচু হলে পথচারী
আর আকাশ দেখে না?
এই প্রশ্ন মাঝে মাঝে নিজেকে করেছি।
একটি ক্লান্ত দুপুর কেঁপে কেঁপে ওঠে
পথিকের তৃষ্ণা বড়। পথে একা দাঁড়িয়ে আছেন
আকাশছোঁয়া রবীন্দ্রনাথ।
আমাদের বটবৃক্ষ। অফুরান ছায়া তার ডালে।
একটি সূর্যের আলো, একজোড়া রাত শেষে তিনি
একাকী সঙ্গী দিনের।
আমাদের রাতগুলো রবীন্দ্রসঙ্গীত
তৃষ্ণায় কাতর হলে পেয়ে যাই বৃক্ষের শীতল।
অলকানন্দার গান
রাত্রি বাড়ে, আঁধার বাড়ে, বাড়ে মনের ঝড়
বুকের ভেতর ভূমিকম্প ফোটায় গোলাপ ফুল
কার হৃদয়ে কে পেয়েছে পাখির মতো ঘর
হাওয়ায়-হাওয়ায় কথার ভ্রমর করছে হুলস্থুল।
আয় রে লালন, পাগলা ভোলা রাত্রি ভেসে যায়
ডুব দিয়ে দেখ জোনাক মরে অলকানন্দায়।
কিসের আশা
আর কারে তুই ভর্সা করিস ওরে পাগল মন
দিনের আলোয় চাঁদ কি হাসে ভুলে অনুক্ষণ
কিংবা তারা, রাতে যেমন জ্বলে আকাশজুড়ে
দিনের আলোয় পাস কি দেখা সারাভুবন ঘুরে?
সূর্য কি তোর সঙ্গে থাকে রাতের অন্ধকারে
তাহলে আর দিনে কেন কেন চন্দ্রমারে?
মধ্যরাতের গজল
শহরজুড়ে রাত্রি জেগে আছে
ঝুলন্ত চাঁদ মদের বোতল যেন
কিসের নেশায় বাতাসে কান পাতি?
হঠাৎ দেখি—আকাশ উল্টে দিঘি
হাজার তারায় পদ্মপাতার ঢেউ
দিঘিও নয়, আকাশও নয়, তবু
তোমার চোখে কিসের নেশা জাগে?
রাত যদি হয় শান্ত নদী
রাত যদি হয় শান্ত নদী,দিন যদি হয় ঢেউ
নৌকা যদি যায় ভাসানে প্রেমিক তবে কই
বাগানজুড়ে ভ্রমর ওড়ে ফুলের দেখা নেই
ফুল যদি হয় ঘ্রাণবিবাগী, কে কার তবে সই?
আকাশ যদি উদার না হয় মেঘ যদি হয় পরী
কাশের বনে দুলবে হাওয়ায় রাধার চুলের মেঘ
কৃষ্ণ তখন বাঁশি হাতে বাবলা গাছের ডালে
ভুলবে যত ছলাকলা, ভুলবে চলার বেগ।