নস্টালজিয়ার অক্টোপাস
এক
কতটা অতীতাশ্রয়ী হলে ভিজি আবেগের রোদে!
বোঝো, গৃহকালে যতটা জমেছে স্থাবরের মেঘ
তারচে’ অধিক কিন্তু সূর্যদীর্ণ স্মৃতি
. সাবেকের হৃদ্যঋণ
বৃথাবাক্য নয়, আমাদের পাঁজরে পাঁজরে বাজে
ইতিহাসকণা অথৈ অথৈ
ঝংকারবিহিত রাত স্ত্রী-শয্যায় ছুটে
কালেভদ্রে কিনে নেয় অথবা শরীর
দুই
আজ চোখে চোখে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন জমা হলে
তুমি খুঁজে নাও বহু আগেকার ভাষা
এই নিরুত্তাপ চাষী
জানি উত্তাপের চূর্ণে গঠনের চাষ, যাই আদিকল্পে
আদ্যোপান্ত হয়ে যায় স্মৃতির পঠন
যেহেতু আকর এক এবং স্বপ্নচিহ্নিত দিনগুলো
ক্রমে ক্রমে পরাক্রান্ত হয়ে এলে
বিস্মরণ হতে থাকে বর্তমান-ভিত
আমরা যেতেই থাকি আমাদের সূত্রে…
যাবে হে মাঝি, দিকশূন্যপুর
আমাদের নদীঘেঁষা বাড়ি ছিল স্বর্ণলতাপ্রিয়
অযথা থাকত তবু গুহামানুষের জ্বরে
পূর্বপুরুষের দল জীবনভ্রমণকালে
ভুবনবাতাস থেকে এযাবত বারবার পেয়েছিল জানি
. অশ্বক্ষুরের আওয়াজ
তথাপি তাদের প্রাণে কেন যে জাগেনি হায়
. ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা
. জয়-ইতিহাসগাথা!
দেখেছি মেলেনি ডানা একটিও মন
এত যুগে কত কত
সন্ন্যাসীর মতো গৃহী হলো বংশকাহিনীর কথা
আর মর্মে মর্মে লীন হরো বেনিয়ার ভাষা
বেনিয়া (!) নাবিকজাত, ওদের সমুদ্র ছিল
মাপত সঠিক করে গভীরতা কত
নদীর নিয়মে আজ সমুদ্র পেয়েছি
যাবে হে মাঝি, দিকশূন্যপুর!
ধানবউ
কৃষিপুর গাঁয়ে ও আমার ধানবউ, গৃহদিনে আয়
রাতজাগা শিখি, চর্চা করি পরস্পর
চাষে যদি দক্ষ হই
আগামী বছর তোতে ফলাব দেখিস
সোনারঙা ছবি
নিড়ি বেড়া পানিদান রবে অথৈ অথৈ
দিন যায় বেড়া খায় অনাবাদী পাল
ছাগল পাগল
সুরধর্মী বাঁশিয়লা নাকি মেধাবী রাখাল!?
ও আমার ধানবউ
বল তোরে খেয়ে গেল কোন টিয়াপাখি!
ডাহুকমঙ্গল
রাত্রিতে ডাহুক ডাকে…অথচ আমরা ভাবি
. জৈবমুখরতা
নেমে পড়ি কচুরির জলে
ডানা ভেঙে ধরে আনি
. লঘুডাহুকের ছানা
ডাহুকদ্রৌপদী কেঁদে মরে তত
কয়েক কৌরবভাই হয়েছি উদ্যত
জলপাই রঙ-এর নঞর্থক দিক
২. অলীক বীক্ষণ
আমি দেখি জল থেকে উঠে আসে, মাটি ভেদে উঠে আসে; যেরকম আমার অনুজ শৈশবের শীতে একরাতে দেখেছিল পাঁচটি আঙুল শ্যাওলার মতো রঙে নখের তুমুল দাঁতে নিয়ে যাবে প্রাণের পলাশ।
আমি সেই আজগুবি শীতে কাঁপি, হয়ত আমার পেছনেই ঠিক লেজুড়ের ল্যাং মেরে হাসবে সেই অজগর, রাতের আকার। তাই ‘আমাকে পাবে না কেউ…’Ñএই ডানা খুঁজি কিংবা করি গতির সন্ধান।
ওরাও উড়তে জানে, নামতে জানে প্যারাট্রুপারে এবং অহেতুক যে কারো ঘাড়েই বসে খেলতেও জানে নাকি হাড়গোড় নিয়ে।
ওই দূরে গলিটার মোড়ে একখণ্ড ছায়াবিন্দু আমাকে ডাকছে বুঝি সিভিলের বেশে।
পাখিজন্ম
যে গেল হৃদয় ছিঁড়ে পাখিজন্ম দেখা পাব তার
অথচ পাখিরা নাকি জš§বাদ নিয়ে মাথাই ঘামায় না!
. তুচ্ছ কামলীলা
আমাদের দেখা কিন্তু পাখিজন্ম হবে
. বুঝলে হৃদয়া!?
অহেতুক ব্রাত্যকথা: এক
শব্দচেতনার দিনে উদাসী সাম্পান ভরে কেউ ঠিক নিয়ে যায় আমাদের কেটে রাখা ধান। তবু তার বাক্যে শুনি উপদেশকথা ‘হাঁটু সোজা করে বসো, ঝরে যাবে ভ্রমমাল্য, নয়ত বা ঝরে যাবে যুবতী ফসল।
আমরা তো এমনিতে ঝরাফুল, বর্গাদার কিছু। শোনো জমিদার, আমরা ছেড়েছি সোহাস বহুদিন আগে। আমাদের সোহাগ এখন তোমাদের ঘরে।
কইন্যা বুদ্ধিমান
কনেকে জিজ্ঞেস করে—ঘাসের গিঁটেরা কত?
কন্যা কয়: দু’বাড়ির দূরত্বের পদ হয় যত
মাশাল্লাহ্! মাশাল্লাহ্! কইন্যা বুদ্ধিমান
প্রশ্ন আসে: তোমার মাথার চুল কত সংখ্যামান?
কন্যা কয় : আমাদের জমিখাতে ধরে যত ধান
মাশাল্লাহ্! মাশাল্লাহ্! কইন্যা বুদ্ধিমান
স্বাধীনতা
করিনি হাড়ের চাষ, মাটিতে মুণ্ডুর বীজ পুঁতেছে রাক্ষস।
গোপনে দিয়েছে জৈবসার। শস্যের বয়স অস্থি-মজ্জাভারে
কী বীভৎস উর্বর! সৌন্দর্য এখানে বরং উজ্জ্বল অহঙ্কারে
মরেছে শ্যামল রাজ্যে; মৃত্যুতন্ত্রে গর্ভঋতুতে নেমেছে ধস।
দীপান্বিতার গলার স্বর্ণচেইন, চলার ঘোষক ঘুঙুর,
মাটির ব্যাংকে জমানো কিছু মুদ্রা পড়ে আছে খনির খননে।
সংগ্রামী কোরাস জন্মে শজারুর কাঁটা হয়ে বিদ্রোহী মননে।
কান্নারুদ্ধ বুকের বলয়ে গাজলিক উৎরোলের সমুদ্দুর।
দীপান্বিতা, কোথায় কলঙ্ক তোর! জ্যোৎস্নাময় সুবর্ণের দানা
হীরাদামি ত্যাগে, ভস্মস্তূপে বস্ত্রহীন স্পৃহার দ্রৌপদী তুই,
স্তব্ধতার মেঘে চেতনামুক্তোয় চিরায়ত রঙধনুর ভুঁই,
লখিন্দরের ভাসন্ত ভেলার বেহুলা, বাংলাদেশ নামখানা।
জোতের জমিতে কঙ্কালের কবি, পাই প্রচণ্ড স্পৃহার বোধ;
আক্রোশী টঙ্কার ধমনীতে শিরায় শিরায়, চাই প্রতিশোধ।
কবিসন্তরণ
জুতার তলাকে আগেই উৎসর্গ করেছি রাস্তার নামে
ফিতা ছিঁড়ে পা ঘষছে
নাকে এসে সুখ তুলে চিট-মিঠাইয়ের ঘ্রাণ
ডাকনামে কড়া নাড়ে শৈশবের দিন
আলখাল্লা খুলে ওড়ে প্রজাপতিমন
দুয়ারে মায়ের ডাক
বড় বেশি অন্তঃক্ষরা হিমশৈলপুর
সম্মুখে প্রবল প্রাণ, গেয়ে ওঠে ধূলিমাখা অক্ষরের গান
কবি পরিচিতি:
চন্দন চৌধুরী
জন্ম: ২ ফেব্র“য়ারি ১৯৭৭, কুমিল্লা।
প্রকাশিত বই:সমূহ
কবিতা
যাবে হে মাঝি, দিকশূন্যপুর
লাল কাঁকড়ার নদী
কাকের ভাস্কর্য
হাসির দেবতা
মা-পাখি ম্যানিয়া
অক্সিজেনের গান
কন্যা কালীদহ
পাণ্ডবজন্ম
ঢাকা সিরিজছোটগল্প
আয়নাপাথরউপন্যাসিকা
নীলতোয়া জোনাকিশিশুতোষ গল্প
গোল্ডফিশ ও একটি প্রজাপতি
শহরজুড়ে বাঘ-ভালুকের মিছিল
হ্যালো ফড়িংমিয়া
দুষ্টুরা দশ মিনিট আগে
ভূতের বাচ্চাটা ক্লাসে এলে কাঁদে
সাত রঙের ভাই বোনশিশুতোষ ছড়া
লাল ফড়িঙের বৌঅনুবাদ
যাযাবব, মূল, কাহ্লিল জিবরান
গহীনে গোপনে, মূল কাহ্লিল জিবরান (যৌথ)
আরব বিশ্বের কবিতা
নতুন ডানার উড়াল, পৃথিবীর তরুণ কবিদের কবিতাসম্পাদনা
শূন্য দশকের গল্প
মুক্তিযুদ্ধের কবিতা
মুক্তিযুদ্ধের ছড়া
একুশের ছড়া
একুশের কবিতাজীবনীমূলক
বীরশ্রেষ্ঠ (ছোটদের)
মাদার তেরেসা (ছোটদের)
বিশ্বজয়ী বাংলাদেশি