স্মৃতি হয়ে থাক বর্ষার তাপ। স্মৃতি হয়ে থাক পাতার
একান্ত প্রলাপ। ঘোর লাগা রাতকে সহচরী করে
যে নক্ষত্রকে ভালোবেসেছিলাম, থাক তার স্বর্ণচূর্ণ।
কোনোদিন যারা অমাবস্যা দেখেনি—
তাদের জন্য জমা থাক আমার চন্দন বাগানের
সবটুকু ছায়া।জেগে জেগে তা কেউ বিলি করুক।
উত্তর থেকে দক্ষিণে এসে মিশেছে যে প্রলম্বিত রোদ,
আমি তার নতুন নামকরণ করে যাচ্ছি।
পূর্ব থেকে পশ্চিমে এসে বিলীন হয়ে গিয়েছে যে হাওয়া,
আমি তাকে ডাকছি অন্যনামে।
‘রদ্দি’ কিংবা ‘শুদ্ধি’ বলেই চিহ্নিত হোক এই প্রশ্বাসযুগল।
তারা নির্মাণ করুক নিজস্ব অগ্নিপথ।
আমি যে পথের পাশে দাঁড়িয়ে তোমার অপেক্ষা
করেছিলাম, আমার নামে সেখানে কোনও পথফলক
থাকবে না জানি।কবিদের নিজস্ব কোনো ছায়া থাকে না।
সুরের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী, বাতাসে বাতাসে তোলে না
ভিন্ন ক্রন্দন। শুধুমাত্র প্রাণগুলোই কাঁদে। আর জড়—
ভালোবেসে দেহ এলিয়ে দেয়।
যে দিন রাধিকা প্রথম নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল
কৃষ্ণপাহাড়ের ভেতর, আমি জানি প্রেমের উপাখ্যান
লিখিত হয়েছিল তারও লক্ষাধিক বছর আগে। একটি উড়ন্ত
পাখি, তার ঠোঁটে করেই সেই পাহাড়ে ফেলে গিয়েছিল
একটি বেদনাবীজ।
মানুষকে তাই বীজ লালন করেই যেতে হয়।
মেঘের মৈথুনে মিশিয়ে দিতে হয় ব্যাকুল চাহনি।
হাতে নিয়ে পরখ করতে হয় কালের কঙ্কাল। একদিন,
মেঘাগ্নির ভেতর—
আমিও সেই কঙ্কাল খুঁজেছিলাম সর্বময় মাটির মরমে।
আমি এখনো সেই নিখোঁজ নক্ষত্রের সন্ধান করি।
এখনো শঙ্খরহস্য ভেদ করে আমি ধ্বনি হয়ে যাই।
আমি শব্দ হয়ে যাই।
জানি, যদি আর কিছুই রেখে না যাই—
আমার অক্ষরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে এই নদীগুলো
প্রাণভরে কাঁদবে। তুমি সেই নদীতেই,
নৌকোজীবন কাটাতে কাটাতে শুনবে ধ্যানী মাঝির গান।
প্রাজ্ঞ কোনো চিত্রশিল্পীর আঁচড়ে দেখবে শুধুই আমার মুখরেখা।