মৃতরাত
আর কত স্বপ্ন ঢাললে মৃতরাতগুলো সব উঠবে বেঁচে
গন্তব্যহীন হেঁটে চলা জীবনে স্মৃতিরা খুঁজে পাবে স্বপ্নবিলাসী মন
আমি তো চাঁদের দাসত্ব করি না
মায়াবী রাতে পূজার মালা হাতে বসে আছি
বর্শার নির্ভুল আঘাতে ক্ষয়ে যাওয়ার আগেই জেগে উঠুক ভালো থাকার সব ইতিহাস
রঙিন সুতোয় গেঁথে রাখা প্রেম অন্ধ হয়ে গেলে
প্রগাঢ় আলিঙ্গনেও কাটে না আঁধার
তবে যাও, এবার তোমাকে মুক্তি দিলাম
আমিতো ছুঁয়ে দিয়ে সরোবরে ফুটে থাকা পদ্মের ঘুম ভাঙাতে চেয়েছি মাত্র
বর্ণহীন জীবনে আনতে চেয়েছি সবুজের ঝড়।
সব আয়োজন তোমার জন্যে
নিমগ্ন বৃষ্টির রাত
আমি তোমাতে লীন হব নিষিক্ত বীজের মতো
ঝলসানো বুকে বয়ে যাক জীবনের নওবাহার
ক্লেদাক্ত জীবনে ছড়িয়ে দাও ক্রোধের উত্তাপ।
রিমঝিম শ্রাবণে
ঝরে যাক বিবাগী রাতে কষ্টগাঁথা
তোমার বিবর্ণ ক্ষেতে সবুজের চাষ করি
তৃষ্ণার্ত ঠোঁটে ঢেলে দিই স্বর্গের অমৃত।
আষাঢ়ের ভরা বন্যায়
আমি তো ভেঙে পড়ছি পাড় ভাঙার মতো করে
তোমার বিমোহিত সৌন্দর্য়ে ডুবে যাচ্ছি গলা জলে
নিজস্ব খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছি ফিরিয়ে দেবে কী করে।
স্বপ্ন ভাঙার বিপুল উৎসব
স্মৃতির মাদুলিতে ভরে সযতনে তুলে রেখেছি গত জন্মের ইতিহাস
পৈতৃ আস্তানা ভুলে সমুদ্রগামী জাহাজে খুঁজি আমার শৈশবের হারানো নাবিক
আমিও পথিক হব তোমার মতো—নয়তো ভবঘুরে সন্ন্যাসী
অদ্ভুত জাদুবিদ্যা শিখে ফেরি করে বেড়াব সমস্ত শূন্যতা
মাঝেমধ্যে মনে হয় দলছুট পাখি হই—নীল আকাশের
সামাজিক বিধান অমান্য করে নিষিদ্ধ আহ্বানে সাড়া দেই
স্বপ্ন ভাঙার বিপুল উৎসবে ভাসিয়ে দিই বিষণ্নতার মধ্য দুপুর।
জানো, অলৌকিকতায় আমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই
যতটুকু বিশ্বাস আছে তোমার ওপর—তাতেই খুঁজে নেই শিমুল তুলোর হাসি
ভেসে যাই—ভেসে থাকা লতার মতো করে অচেনা পথে
শ্যাওলার মতো দুঃখের গলা জড়িয়ে ধরে পার হয়ে যাই কষ্টনদী
ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলো ধরে জমা করছি বুকপকেটে
স্বপ্ন ভাঙার বিপুল উৎসব হচ্ছে ফুটফুটে চাঁদের জোছনায়
যাবতীয় ঐশ্বর্য ভেসে যাচ্ছে তার বিলাসী স্রোতে।
কিছু লৌকিক কথোপকথন
নদী, শুকিয়ে যাও
লালায়িত বেশ্যার মতো পেটে ক্ষুধা নিয়ে এবার পড়ুক বালুচর
নতুন দেহতত্ত্ব নিয়ে যখন ভীষণ ব্যস্ত পীর-পুরোহিত
আমার পকেটে ঘুরছে তখন ভবের লাটিম
বুক বরাবর হেঁটে বেড়ায় উড়ন্ত সসার
শনির হাঁটে যারা বিকিয়েছে নিজস্বতা বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে তাদের।
আগুন, নিভে যাও উত্তরীয় বাতাসে
শীতের আগাম বার্তায় খুশিতে নাচলে নবদম্পতি
পারস্পরিক ওমে পবিত্র হয় তখন অনাগত পৃথিবী
এঋতু অবিছিন্ন বর্ষা কিংবা গরমের নয়
মাঝেমধ্যে অন্ধকারেও ডুবে যেতে হয় শুদ্ধ সংগীতের আশায়।
মেয়ে, উন্মাদ হও ভয়ঙ্কর সমুদ্রের মতো
পাগল প্রেমিক এসে নিভে দিয়ে যাক জলের কাম
তীব্র আক্রোশে খুন হয়ে যাক মাধুকরী রাত
এখন তো জাফরানি স্রোতে ভেসে যায় মাঘের দুপুর
আঁধারের চৌহদ্দি ঘিরে থাকে আনন্দময়ী বাতাস।
নদী বংশের ইতিকথা
একদা আমিও নদী বংশের লোক ছিলাম।সার্কাস বালিকার নদীজলে ডুব দেয়া দেখে আটকাতে পারিনি কামশ্বাস। কোমরের ভাঁজে ভাঁজে ছিল তাঁর সন্ধির প্রস্তাব- উদ্ধত বুকের ঐতিহাসিক ডাক। আমি তো দিয়েছি সাড়া—চন্দ্রকলার ক্ষিপ্র আহ্বানে থামিয়ে দিয়েছে নদীর ঢেউ। এখনো পান করি মধু মিশ্রিত সেই জল—অচল মুদ্রায় সেরে নিচ্ছি নৈশভোজ। আমি নদী বংশের লোক ছিলাম। জলের ওপর ভেসে থাকা চাঁদের পেটে ঢুকিয়ে দিয়েছি মায়াবী মাছ। আমার নথিভুক্ত সব নারী—যারা কিনা নিয়মিত লীলাখেলায় মেতে উঠত নদীর সঙ্গে—তারা এখন বিগত যৌবনা বলে সব নাম কেটে দিয়েছি- ভাদরের ভরা সময়ে।