গ্রাম ও শহর
মেয়েটি গ্রাম গাঢ় সবুজ শহর হলো ছেলে
ওরা দুজন বন্ধু হলো সোশ্যাল মিডিয়াতে
লাজুক মেয়ে লুকিয়ে থাকে সবুজ পাতা মেলে
সন্ধ্যা হলে অন্ধকারে গোপনে হাত পাতে।
কেমন আছ দূরের শহর? জানতে চায় শুধু
তুমি অমন ধূসর কেন? কেমন যেন ধু-ধু।
শব্দ করে শহর হাসে, কী সব বলো যা-তা
কত রঙের দালান দেখো, ড্রয়িং করা খাতা
ড্রয়িং করা খাতা ঠিকই, কেমন যেন তবু
শ্বেতপাথরে ডর লাগে যে, তুমি আমার হবু!
শহর বলে, চোখ বোঁজোতো, একটু বুঁজে থাকো
এবার দেখো, অথৈ নদী কিছুটা নির্বাকও।
তোমার বুকে খনন করা স্রোতের ধারা চলে
আমি কেবল কান্না শুনি খরস্রোতার জলে।
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স
বেঞ্চে, গা ঘেঁষে বসে আছে
মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স; নবায়ন কি খুব বেশি দরকার?
পশ্চিম-শহরে, হাডসনের তীরে ডিএমভির অফিস,
চিরুনির মতো সুশৃঙ্খল শহরে হেঁটে যাই; উদ্বাস্তু উকুন।
কর্তৃপক্ষের কাচে ধাক্কা দিতেই কর্পোরেট আবেগ বেজে ওঠে,
আমাকে অনুসরণ করুন।
একজোড়া নিতম্বের ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আরও একটি কাচের দরোজায়।
দুপাতা নদী, নীল তরঙ্গ; বৈঠা চালান উর্বশী নারী।
ওর চোখে ক্লান্তি, মুখে স্নিগ্ধতার লাবণ্য,
আমাকে দেখায় দূরের মোহনা।
শেষ বর্ষায় ফিরে যাওয়া মাছেদের মতো আমিও দাঁড়িয়ে পড়ি সুদীর্ঘ সারির পেছনে।
এক সময় ডাক আসে, ব্লন্ড মেয়েটির প্রসারিত করতলে তুলে দিই সবকিছু।
ও পুনরায় হাত বাড়ায়,
আমি বুক থেকে আইডি খুলে দিই ওর উষ্ণ হাতে,
এই নাও, সব দিয়ে দিলাম তোমাকে
এবার ও তাকায় আমার চোখে, নীল অতলান্তিক,
না, দাওনি
কী?
সব
দিয়েছি তো। আইডি, পাসপোর্ট, দুপাতা ফর্ম
বললে যে সব দিয়েছ!
আর কী চাও?
স্পর্শ। দেবে?
ঠোঁটে
চোখে
চুলে
চিবুকে
স্তনাগ্রচূড়োয়
গ্রীবায়
উরু
জংঘা
এবং উরুসন্ধির গোলাপে; দেবে?
তোমার স্পর্শে ফুটুক গোলাপ, এই মধ্যম্যানহাটনে
আমি বলি, তুমি খুব রোমান্টিক।
মেয়েটি খুশি হয় খুব।
হঠাৎ প্রসঙ্গ পাল্টায়,
অনুমান করো তো, আর কতদিন বাঁচবে তুমি?
আমি বলি, এই ধরো, পঞ্চাশ বছর
ও আমার হাতে নবায়িত লাইসেন্স তুলে দেয়,
মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ২০৬৬ সাল।
পুবের শহর আমার গন্তব্য
একত্রিশ স্ট্রিটে এশীয় পদছাপ আঁকতে আঁকতে ভাবি,
শিগগিরই আর ওর সঙ্গে দেখা হচ্ছে না।
প্রতীক্ষার এক জটিল ঘড়ি
শুনতে কি পাও শব্দগুলো?
ঘণ্টা বাজে দূরে কোথাও, পুরনো এক ক্যাথিড্রালে
জানি এখন রাত্রি অনেক তোমার দেশে
প্রতীক্ষাতে একলা থাকার দুঃসহ এক কষ্ট নিয়ে
হয়ত তুমি জেগেই আছ
এ প্রত্যাশায় প্রলাপ বকি বেথেলহেমের আকাশজুড়ে
শুনতে কি পাও শব্দগুলো?
এরোপ্লেনের ধাতব ডানা মেঘের সাথে যুদ্ধ করে
হয়ত তুমি ভুলেই গেছ
ক্যালেন্ডারে চোখ বুলাতে আজ সকালে
একটা কিছু ভুলবে বলেই হয়ত তুমি সমস্ত দিন
ব্যস্ত ছিলে গৃহস্থালি কাজে ভিড়ে
শুনতে কি পাও শব্দগুলো?
বুকের ভেতর জমাটবাঁধা কষ্টগুলো কি আশ্বাসে
বেরিয়ে এসে মেঘের দেশে
যাচ্ছে উড়ে স্বাধীন পাখি এরোপ্লেনের জানলা দিয়ে
রাত্রিটা কি দীর্ঘ দেখো, তোমার আমার মধ্যিখানে
হাত-পা ছেড়ে ঘুমিয়ে আছে তরঙ্গহীন নদীর মতো
হাজার কয়েক মাইল ছড়িয়ে…
শুনতে কি পাও শব্দগুলো?
বিস্মৃতির এক শহর থেকে আসছে ভেসে
পুরনো এক ক্যাথিড্রালের ঘণ্টাধ্বনি
ডুব-সাঁতারে রাতের নদী পেরিয়ে দেখ
নেকাব তোলা মুখের মতো
হঠাৎ তোমার উঠোন জুড়ে হুলুস্থুল এক উপস্থিতি
শুনতে কি পাও শব্দগুলো?
বুকের ভেতর ঘণ্টাধ্বনি?
প্রতীক্ষার এক জটিল ঘড়ি বিরতিহীন বেজেই চলে, বেজেই চলে…