পরিযায়ী পাখি
পরিযায়ী পাখি
তীব্র শীত অনুভব হলে
আমার নিঝুম দ্বীপে এসো
. খড়মের খড়খড় শব্দ শুনবে না!
টাঙ্গুয়া হাওর ও বাইক্কার বিলে এসো
কোনো লুণ্ঠনকারীর ঘোড়ার খুরধ্বনিও শুনবে না!
সোনাদিয়া কিংবা পদ্মা তীরে
তীব্র শীতেও জ্বালাবো না জ্বালানি কাঠ,
. ধোঁয়ায় তোমার যদি কোনো কষ্ট হয়
. ও অতিথি পাখি!
কোনো বেয়াদব বাদ্যযন্ত্র বাজাবে না!
নিরাপত্তা যখন-তখন যেখানে-সেখানে, উধাও হয়েছে
এখানে হবে না!
নিরাপদ আশ্রয়টুকু তোমাকে দেবো
চোর ও লম্পট হওয়ার কোনো দাগ নেই, আমার ললাটে!
লালসায় দুর্বিনীত হইনি এখনো!
পরিযায়ী পাখি—
তুমি তীব্র শীতে, ঠাণ্ডা ও বরফে থাকতে পারছো না
. সাইবেরিয়ায়
. তিব্বতের হ্রদে,
মঙ্গোলিয়ায় কিংবা অন্য কোনোখানে!
গানে গানে আমার এখানে চলে এসো
উদ্দীপ্ত বিশ্বাসে,
পরিশ্রান্ত হয়ে আসার পরই—অবসাদ কেটে যাবে
. আগের মতন।
আমাদের উদার ঔদার্য ভালোবাসা
তুষারাবৃত হয়নি এখনো কিংবা হিমাঙ্কের নিচেও যায়নি!
রেলগাড়িটা
হুইসিল শুনলেই চঞ্চল হইও না!
রেলগাড়িটা কোথায় পৌঁছাতে পারবে?
রেলগাড়িটা পৌঁছে যায়—
. সেইসব পুরনো স্টেশনে!
নতুন নতুন স্থানে পৌঁছাতে পারে না—
সেই কবে হয়েছে যমুনা সেতু
তার ওপর সে চাকা রেখে নদী পার হয়!
সে নতুন লাইন না পেলে
. নতুন জায়গায় যেতে পারে না কখনো!
রেলগাড়িটা সেই পুরনো স্টেশন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়—
সপ্তাহের সাতদিন—বছরের বারোমাস!
নতুন জায়গায় যাওয়ার কোনো শক্তি নেই—
চাকা ও লাইন দুটোই নিবিড়ভাবে শৃঙ্খলিত!
রেলগাড়িটা যতই ঐতিহ্যে ঐশ্বর্যশালী
ততটাই তার সীমাবদ্ধ চলাচল,
সে হয়তো দ্রুত কিংবা ধীরে চলতে পারে—
কিন্তু কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীর চোখ নিয়ে
বনবাদাড়, গিরিখাত, পাহাড় পেরিয়ে—
বিস্ময়ব্যঞ্জক যাত্রাপথকে আলিঙ্গন করতে পারে না!
ভূগোল
যুগল যদি ভূগোল খুঁজে না পায়
. জলে—স্থলে!
তাহলে তারা কোথায় রাখবে পা?
বিচরণের জায়গাটুকু
. তাদের দেবো না?
উমেদারিতে লাঠি তুলবো
. দরোজা খুলবো না!
যুগল তবে মিলবে কোথায়?
তপ্ত হবে আগুন তাওয়ায়!
ফুটবে খই!
. আমরা দায়ী নই?
উপচে পড়ে নষ্ট হবে?
তাওয়ার আশেপাশে!
. কী সর্বনাশে!
গোলার্ধভেদী মৃত্যু
‘শোক ও সমবেদনা’ কথাটা এখন
কপি করে রেখে দেই!
. এখন তা শুধু পেস্ট করি!
নিদানকালে এতটা মৃত্যু—
এত দ্রুত কপি হচ্ছে।
আমি আর কিছুই লিখতে পারছি না!
সমব্যথী হওয়ার ধৈর্য—
. হারিয়ে ফেলছি!
শোকার্ত হওয়ার ধৈর্য—
. হারিয়ে ফেলছি!
ব্যাকুল হওয়ার ধৈর্য—
. হারিয়ে ফেলছি!
বিচলিত হওয়ার ধৈর্য—
. হারিয়ে ফেলছি!
পরিবেদনার মধ্যে কাতরতা হারিয়ে যাচ্ছে
বিলাপধ্বনির মধ্যে শোকতাপ হারিয়ে যাচ্ছে
আর্তনাদের মধ্যে অশ্রুজল হারিয়ে যাচ্ছে
কী মর্মভেদী—গোলার্ধভেদী মৃত্যু!
মৃত্যুর কাছে মৃত্যু দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না!
মধুমাসে মইয়ের খোঁজ
মই নিয়ে তিনি গাছে উঠবেন
হ্যাঁ, আপনার মইটি নেবেন
. লিচু পেড়ে খাবেন!
এরপর এই মইটি ফেলে দেবেন
অন্য মইয়ের খোঁজে বের হবেন
. সকাল বেলায়!
আর এক মই আর একজনের কাছ থেকে নিয়ে
আমবাগানের আমগাছ থেকে
. আম পেড়ে খাবেন।
কাঁঠাল পেড়ে খাবেন না—তা কি হয়?
. সেটাও খেতে হবে!
মধুমাসে তার লোভ এতটা বাড়ে
কখন কার কাছ থেকে মই নেবেন
. কোন ফলগাছে মই তুলবেন,
কোনো বাছবিচার নেই!
সারাদিনমান থাকে মইয়ের ধান্ধায়
প্রয়োজনে চলে যায় গাইবান্ধায়!
নিজের মই বানানোর মুরোদ নেই
. পরের মইয়ে ভরসা!
মই না পেলে গাল দেবেন
যা তা বলবেন—আপনার নামে!
মই পেলে তৎক্ষনাৎ খুশি
যাকে গালি দেন—তার মইয়ে পা রাখেন!
মইয়ের জন্য তেলে ভেজাবে আপনাকে
. ছেঁকে ধরবে!
যে কোনো উঠানে—
বাম জানু জুড়ে ডান পা ছড়িয়ে উপবেশন করতে পারেন!
ঘরের চারপাশে দেখবে কার কী রকম মই আছে
সেইদিকে সর্বক্ষণ চোখ!
পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ডরায়
আমি আমার উঠানে তার ছায়া দেখে ডরাই!
মনের কুঠরিতে আঁশটে গন্ধ
ঠোঁটকাটা হও!
. ঠোকরানো কেন?
ঠোঁটফোলানো ব্যভিচারে খেমটা নাচ নাচো কেন?
গালি দিলে—
তাকে অতিক্রম করা যায় না!
তোমার মনের কুঠরিতে জন্ম নেওয়া আঁশটে গন্ধ—
. মাছের বাজারে না গিয়েও পাওয়া যায়!
সে গিয়েছে হেঁটে দু’ কিলোমিটার
তুমি যাও তিন কিলোমিটার!
সে করেছে রক্তজবার বাগান
তুমি করো তোমার পছন্দসই ঝুমকোজবার বাগান!
সে উঠেছে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গে
তুমি উঠো কাঞ্চনজঙ্ঘায়!
আমরা নিজেরা যা করতে পারি না—
অন্য কেউ তা করলে চোখ ঠাটায়—হিংসেতে জ্বলি
নিজে যে অঙ্গার হই—টের পাই না!
অবশিষ্ট থাকে ছাই—
সে ছাইয়ে ক্ষুদ্র একটা বাসনও মাজা যায় না!
মায়ের মুখ
সব মায়ের মুখ আমার মায়ের মুখ
. সব মা’য়ের ছবিও এক ও অভিন্ন!
ছিন্ন করা যায় না—এক সুতোয় বাঁধা
. নয় ছিন্ন-ভিন্ন!
মায়েরা কুঠরিতেও এক
দরদালানেও!
. ভিন্ন ভিন্ন ভূগোলেও!
মহল ও মলুকে
পাহাড় ও সমভূমিতে,
বিছিয়ে রাখে একই হৃদয়ভূমি!
সন্তান হয়ে টের পাও না তুমি?
মা তুলে দেয় মুখে পোস্তদানা
সে অনাহারে যদি বা থাকে—তা যায় না জানা!
মায়েরা কতখানে হারিয়ে যায়
. কত জায়গায় যে নিখোঁজ!
তবুও সন্তানের রাখে প্রতিনিয়ত খোঁজ!
ভেতরে রাখা আলমারির থাকে থাকে কতরকম কষ্ট
তারপরও পারাপারের নৌকো রাখে খেয়াঘাটে,
সন্তান যেন যেতে পারে সূর্যমুখির মাঠে!
মায়ের এক অনিঃশেষ শোভাযাত্রা
. —ও প্রভাতফেরি!
কখনো শেষ হয় না!
কতকভাবে কতরকম পাটাতন তৈরির ব্যঞ্জনা
. চিরকালীন কত আয়োজনের মাত্রা!
সব মায়েরা সবদিক থেকে
একই ধরণীতল!
. সেখানে বয়ে যায়—
অনাবুষ্টি ও খরায়
. মানবরক্ষাকারী অমিয়ধারার জল!
পায়া নেই
আপনাকে ‘হাঁটুভাঙা দ’ হয়ে ঢুকতে হবে
বানানের মধ্যে
না হলে আপনি কোনো শব্দের মধ্যে
সেখানে জায়গা পাবেন না!
সেখানে বাগান রয়েছে বলে আমরা যা ভাবি—
আসলে তা ‘রাজার চামেলি’ বলেই মানানসই,
আপনি সেখানে হতে পারেন বানানসই!
সেখানে আসবাবপত্রগুলোরও—
কোনো পায়া নেই!
. গবাদি পশুরা পর্যন্ত সেখানে
. ক্ষুরারোগে ভুগছে!
. হাঁটতে পারছে না!
আপনিও ধনক্ষমতার লোভে শক্তিশালী হয়ে
যে পালঙ্কে শোবেন—কয়েক রাত্রি!
তার পায়াও ঘুণে ধরে আছে এতটাই—
. যে-কোনো মুহূর্তেই ভেঙে পড়তে পারে!
ভেঙে পড়লে কোমর ভেঙে যাবে!
নিজেই তো নিজের হাঁটু ভেঙেছেন আগে—
কোমর ভাঙলে তখন কী করবেন?
গ্রামগুলো কৃষ্ণতিথির কোলে
আমাদের গ্রামগুলোকে—
বাঁশবাগানের চাঁদের আলোয় না রেখে
. কৃষ্ণতিথির কোলে দোল দিয়ে রাখা হচ্ছে!
দোলায়িত ফসলের বাতাসে বাতাসে
. দোয়েল ও ফিঙের নাচও ফিকে হয়ে আসছে!
স্বরবৃত্ত ছন্দে যে গ্রাম চলতো
তা এখন শুধু গদ্যের ব্রাকেটবন্দি নির্ঘণ্টের উদ্বৃতি!
একটি কংক্রিটের রাস্তা—
. গ্রামের বুকটা চিড়ে যেভাবে গিয়েছে
তাতে হয় তো যাতায়াতের কিছুটা সুবিধে হয়েছে,
সেইসাথে হুন্ডাওয়ালা গুন্ডারাও ঢুকে পড়েছে!
আমাদের গ্রামগুলোতে কৃষিজমির শ্বাস রুদ্ধ করে
যে ইটের ভাটা কার্বণ উৎকীর্ণ করছে,
তাতে অক্সিজেনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটছে
. গ্রামের গাছগুলো কেমন বিবর্ণ হয়ে গেছে!
গ্রামের সরল ও সজীব নদীটিও
. বুকে বালুভরা কষ্ট নিয়ে কাতরাচ্ছে!
গ্রামবাসীর কথা বাদই দিলাম—
মেডেল
একটা চকচকে মেডেল গলায় ঝুলানোর জন্য
কোনখানে ঝুলে পড়লে তুমি?
. —নিচুতেও নামলে
কূপ-অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার পর
কূপি জ্বালিয়ে তোমাকে খুঁজে পাওয়া গেল না!
অন্ধিসন্ধি কতখানে গেলে—
. বর্জ্যও ঘাটলে,
. কোথায় না হাঁটলে!
হাঁড়িপোড়া করে—
নিজেকে আঁচড় দিয়ে কালোবাজারেও তুলেছো,
চাঁদবদনও অমাবস্যার হয়ে গেল!
চেয়ার ও পিঁড়ি
. মঞ্চের আসন—
. তোমাকে কি রক্ষা করবে?
তপোনিধির আরাধ্য ধন—
বুড়িগঙ্গার গহীন কালো ময়লা জলে
. তলিয়ে যায় না!