মৃত শব্দগুচ্ছ-০১
অলস-শূন্য দুপুর। নির্জন রেস্তোরাঁ-
মনে পড়ে—মনে পড়ে, কখনো তোমার
সেসব মুহূর্ত-কথা? না কি আজ ওরা
উড়ে যাওয়া পাখি। মিথ্যে। অযথাই। তার
কোনো মূল্য নেই আর তোমার ঘড়িতে।
সকলি পুরনো দৃশ্য—নিছক অতীত
টকে যাওয়া স্মৃতিসব। আয়ুর গণিতে
হিসাব হয় না যার—ফেলে আসা শীত।
এই প্রলম্বিত রাত—তোমার কথায়
তবু কেন কেঁপে ওঠে? ভুলের মাশুল
কী এতই দীর্ঘ? কেন ঝুল-বারান্দায়
ভিড় করে বেদনার রঙে মোড়া দুল?
ভুলে যেতে চাই সব। যত স্মৃতি-মায়া।
পারি না। শরীরে এসে স্মৃতি হয় ছায়া।
মৃত শব্দগুচ্ছ-০২
তোমার জীবন থাক অদেখা, অচেনা
কত পাতার সংসার অগোচরে রয়ে
গেল। শুধু গান শুনে মনে মনে চেনা
হলো কত পাখি; সত্যি কি চিনি? সভয়ে
জানাই, না, না, চিনি না। জীবন সংসার
কেটে গেছে তবু এই অপরিচয়ের
দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। আত্মগ্লানি ছিল না। বোঝার
পরিধি সীমিত তবু—হয়নি ভয়ের
কারণ কখনো। জানো, এমন করেই
জেনেছি তোমাকে, বুকে না পেয়েও মনে
হয়েছে পেয়েছি। জ্যোৎস্না যেমন দূরেই
থাকে সমস্ত জীবন, তুমি সংগোপনে
তেমনই আমার খুব কাছের—দূরের,
ঘৃণার যতটা তত এই হৃদয়ের।
মৃত শব্দগুচ্ছ-০৩
চেয়েছিলাম আমিও দ্বিধাহীন অক্ষয় উত্তাপ
নিরন্তর শর্তহীন সম্পর্কের নিগূঢ় ব্যঞ্জন
ভ্রমরের মতো তাই গেয়ে গেয়ে সকল আলাপ
তুলে তুলে সাজিয়েছি সাধনার সব আয়োজন
ব্যর্থহীন ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ কাকে বলি?
কেউ নেই কোনো খানে। কে নেবে আমার যত ভার?
প্রজাপতি শুধু সংখ্যা, জীবনের—তাই তো কেবলই
তুমি অফ-লাইনের প্রয়োজন, শুধু দরকার
দেখো এ বুক পকেটে থরেথরে সাজানো সকল
স্মৃতি, আর চকচকে অভিমান। খরচ করিনি
কিছু, খোদার কসম! ঘষে ঘষে রেখেছি উজ্জ্বল
সবকটা অবহেলা। পুড়ে পুড়ে আগুনে, বলিনি,
ভুলে যাও মন তাকে। স্মৃতির জোয়াল নিয়ে কাঁধে
বলিনি কখনো মন, বলো তো চোখটা কেন কাঁদে।
মৃত শব্দগুচ্ছ-০৪
থাকুক না কিছু কথা উল্টানো পৃষ্ঠায়
কিছু থাকুক গোপন মনের দেয়ালে
জিঞ্জিরা প্রাসাদ দেখো ধুলোতে ঘুমায়—
আড়বাঁশি সুর তোলে আপন খেয়ালে
তোমার কারো মুখের নিপুণ জিরক্স
বাঁধাই করে রেখেছি চোখের তোরঙে
উপুড় আকাশ দেখে হাসে কসমস
কেন রাধা নেমে আসে তোর ধূপে, অঙ্গে
চলে যাবি? যা না তুই। কে রেখেছে ধরে?
শূন্য দিয়ে পূর্র্ণ যার, ভয়? নেই তার!
না থেকেও থাকবি তুই সবটুকু ভরে
চলে যাবি? যা না তুই, ছেড়ে হাহাকার
তবু তুমি, তুই শুধু আমারই তো থাকবি
অচেনা ঘামের ঘ্রাণে আমাকেই ডাকবি
মৃত শব্দগুচ্ছ-০৫
উল্টেপাল্টে দেখি দৃশ্য। তুমি নেই। নেই।
হাতের তালুতে জ্বলে বেয়াড়া আগুন
পোড়ে সুখ, যত মুখ—তবু তোমাতেই
লেগে থাকে মন। ভাবে, তোমাকে ফাগুন
মুক, মুখরতা কিংবা শত দ্বিধা-দ্বন্দ্বে
তুমি থাকো মার্জিনের কপট আড়ালে
পাবো না বলেই পাই বিচিত্রিত ছন্দে
থাক অজানা—কী হবে পরবর্তী চালে
হাস্নাহেনা ডাকে, ডাকে গোলাপ, চামেলি
মেঘফুল আজও কাঁদে সবই তুমি হয়ে
ফর্মার বাইরেও আছে অনন্ত হাভেলি
অজানা সে-কক্ষে থাকে জীবন সভয়ে
তোমার শুধরানো ভুল, শুদ্ধবাক্যে নয়
ভুল করে বলা শব্দে বাঁচে এ হৃদয়।