স্বপ্নচাষী
স্বপ্নরাতের মধ্যরেখায় ঝুলে থাকে বারোমাস।
আকাশের নীল মানচিত্র খুঁজতে গিয়ে জেনেছি—
ঝুলে থাকা স্বপ্ন আত্মঘাতী বিস্ফোরক।
শ্রমপিপাসু কঙ্কাল সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেছে—
প্রতিটি স্বপ্ন পূরণের পেছনে কারো না কারো
দৃশ্য-অদৃশ্য
করুণা নিবেদিত থাকে মনণাগারের বারান্দায়;
ঠিক যেন ফুটপাতে ক্ষুধার্ত ভিখারীকে
ব্যাগভর্তি হাসি উপহার দেবার মতো বিষয়।
স্বপ্ন সংক্রান্ত বিশ্বাস মাঝে-মাঝে
আত্মসমর্পণের কানাগলি দিয়ে
উড়ন্ত মেঘের জমিনে অনবদ্য
স্বপ্নচাষী হতে বলে—স্বপ্ন নিয়েই নাকি মানুষ বেঁচে থাকে।
ঘুমের রঙিন ঠোঁটে সংক্রমণে কেবলই
উড়ে উড়ে আসবে নৈঃশব্দের বোবা আলো
সেই আলোয় আলোকিত হবে স্বপ্নচাষীর স্মৃতির পৃথিবী।
অভ্যর্থনা
এ কোন অভ্যর্থনার ভার কাঁধের ওপর তুলে দিলে না বুঝে।
মানুষের জ্ঞান নিয়ে তর্কে যেতে চাই না— মানুষ তো আবেগময়;
স্বপ্নের জৌলুসে ঘুম চোখে জেগে থাকে মধুভরা ফুল-বাগানে।
মধু আর মানুষের সম্পর্ক বুঝতে কখনো রাত জেগে থাকিনি
তবে কেন অভ্যর্থনার বৃষ্টিতে ভিজতে বলছো?
সেই কবেই বৃষ্টি— দুঃখী মানুষের চোখের চাতালে খুলেছে
উদারতার পাঠশালা; কখনো খয়েরি-কখনো বেগুনি।
উদারতার মহাশূন্যে উড়ন্ত মেঘ নামে ডেকো না. কিংবা
নতুন করে জ্ঞানী হতে বলো না; জ্ঞান বারবার অন্ধ হতে বলে।
যে দিন চাঁদ আর সূর্যের পার্থক্য মুখস্থ করেছি না বুঝে
সে দিন থেকে নাকি জন্মান্ধের অসুখে অসুস্থ,বড্ড বিষণ্ন
যদি তাই হয়— তাতেই বেশ আছি।
নতুন করে কোন অভ্যর্থনার গল্প বলো না— কানের দরজা তালাবদ্ধ।
বেঁচে থাকার গল্প
বাবার গ্রামীণ চেকের গামছা থেকে ফসলের গন্ধ পাই
শোকে বিবর্ণ ঘরময়
চাষমগ্ন হাত
সবুজ সবজিবাগানের সুগন্ধিযুক্ত ঘামার্ত মুখ
বারবার এই গামছা দিয়ে মুছেছে ঘামবিন্দু কণা।
গামছার জমিন জুড়ে কত অগণিত স্নেহস্মৃতির মিনার
আদর্শ সঙ্গীতের ইন্দ্রজাল বিছিয়ে দিয়েছে হৃদয় আঙিনায়।
জননী পান-সুপারি নিয়ে নিয়ে প্রহরপর্ব বরণ করে নেই
দুঃখ করে বলে—তোর বাবা বেঁচে থাকলে
গোলা ভরা ধান সুখী সংসারের মন্দিরা বাজাতো।
আজ বাবা নেই— বাবার গামছা স্মৃতিফ্রেমে বেঁধে রেখেছি
বেঁচে আছি;
আমি ও জননী।
ভারসাম্যহীন বাজপাখি ও তারতম্যহীন পৃথিবী
অরণ্যই প্রকৃতির প্রসাদ—পৃথিবীর প্রাচীনতম হিমহিম শান্ত ভাস্কর্য।
সবুজের ফিনফিনে রঙ মুগ্ধতা বিছিয়ে দেয়—গুপ্ত রহস্যের গতরে
রহস্য দ্রুততায় ঢুকে যায় অরণ্যের ভিতরে,অরণ্যই অনিন্দ্য
অরণ্যই বিচিত্র নীরবতার সাম্রজ্য।
অথচ এই অরণ্যের নীরবতা ভাঙ্গে—ভারসাম্যহীন বাজপাখি
বাজপাখি কখনো কখনো ক্ষুধার্ত
বাজপাখি কখনো কখনো অবাধ্য
নির্জন সৌন্দর্যের গর্ভদেশে সবুজের অর গিলে খেতে চায়।
গণিত বিজ্ঞানীরা সময়ের অংক কষে বলবেন নিশ্চই
অরণ্য যদি বিলুপ্তির হিমাগারে যায়—
বাজপাখির রক্তচোখে নতুন করে গড়ে ওঠবে—তারতম্যহীন পৃথিবী।
দেউলিয়া পাড়ের মনদরিয়া
কিছু স্মৃতি স্বপ্নচুরি করে নত্র হয়ে যায় দিব্যি
ভুলার সুঘ্রাণ সত্ত্বেও আবেগঘন দিঘিজলে কষ্ট ভাসায় গোপনে গোপনে
ক্রমাগত স্বপ্নচুরির ভাসান এ কূল-ও কূল ফেরি করে ভাবনার পরিধি,
কর্কটরাশির আয়ুরেখা বারবার মুছে যাবার মতো বৃথা চেষ্টায়
কতরাত নির্ঘুম কেটেছে নেতিয়ে যাওয়া দুর্ভাগ্যের দুরত্বের পরিমাপে।
আমি তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে কখন পথের শেষ সীমান্তে
বিপন্ন ভাগ্যের বারান্দায় মাতাল হয়েছি—টের পায়নি,
যখন বুঝেছি—চোখের ভূগোলজুড়ে প্রেমের মানচিত্র
ভেতরে ভেতরে লুকানো আগুনে পুড়ন্ত অভিসার।
তখন মাতাল আমার প্রেমিকমন।
তখন মাতাল ঢেউ ওঠেছে—দেউলিয়া পাড়ের মনদরিয়ায়।