আস্তর
পিছুটান ছুরির নিচে
এ কাকে রেখে এলে হে মনস্তাপ?
এর চেয়ে বাগানব্যাপী
ভীরু মানুষের ছায়া লক্ষ করো, আলো জ্বালো টর্চে,
একটা বাদামি খোসার ফল বুকে ধরে
দৌড়াচ্ছে বাদুড়-বাদুড়ি, ক্ষীণতোয়া ঘাসের সাথে
পাল্লা দিচ্ছে আরও বড় ঘাস, মৃৎফুল;
এর চেয়ে জীবনব্যাপী অনুশোচনার রঙে
আস্তর ঘঁষে মেজে
আলগা করো এই টর্চার সেল!
বৃত্তকে বলে দাও ব্যাস
মৃত্যুকে বলে দাও উর্মির ঠিকানা!
বাহিরে বেরিয়ে দেখো
মেঘ ঠেলে ঠেলে বিষম খাচ্ছে চাঁদও!
প্রায়শ্চিত্ত
আমাকে স্বপ্ন থেকে তুলে আছাড় মারছে
তোমার অট্টহাসি—আর মেঘের দিকে হাত
যেন স্পর্শের কাতরতা তোমাকে বিহ্বল করে, হে মাহুত
গণ্ডি পোষণ করে হাঁপিয়ে উঠেছি ভিড়ে, গোচরে শ্যামাঙ্গিনী,
হাড় ভরা কুসুম কেতকী থাকে, নৃত্যরত, অনেক শিফন রঙে
মনস্তত্ত্ব গড়িয়ে যাচ্ছে
নিশিডাকে সাড়া দিয়ে অনেক দোদুল ছায়া
প্রাণভয়ে মুচড়ে ধরে
সাঁওতালি টগরের সাপ
আমাকে ডাল ছুড়ে দিয়ে একটি ঝড় বকমুখে উড়ে গেলো বলে
ছিন্নপাতার দিকে মৃন্ময়ে চেয়ে
নিচু হয় অশোক উদ্যান
প্রশ্নের কাছে অবনমিত যতো প্রায়শ্চিত্ত
উড়ে আসে রঙ্গ জ্বলা মেঘে, উড়ে আসে প্রপাত ফেরত হাওয়া,
প্রশ্নকে অনন্তযৌবনা মনে হয়!
রূপকথা
ঝিরি ফুল ফুটে আছে বৃত্তে
আর হাতছানি মেনে নিয়ে মেঘ
দুপুরভর্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে রূপকথা, যেন এক অন্ধের আয়ু
বাতাস থেকে লাফিয়ে মায়ার তরঙ্গে হাঁটে—
বৃষ্টিকে পল্লবিত লাগে, পানি জমে কোথাও ডুব মেরে আছে ঘূর্ণি
আমন্ত্রণ ধ্বনিত হয়, আরও আসে কূয়ার কল্লোল ভেসে, কোথাও কান্নার লিপিকে
বানান করছে দ্বিধা, একটা অন্বেষণের শুরু, সমস্ত কল্পনাকে তাড়া করছে গ্লানি!
এতখানি উজানবাঁকে এসে মৃত্যুও পিপাসার্ত না কি?
এতখানি একাকীত্ব কারও মৃতদেহ ভারী করে তোলে?
মন থেকে শুরু এক উপকূল
ঝাউবনে হেলান দিয়ে আছে—এই পথে প্রবৃত্তিও
আগাছায় পরিপূর্ণ, আড়চোখে প্রশ্নচিহ্ন এসে ভাঁজ করে রেখেছে ললাট;
করজোড়ে থাকি, মীমাংসাকে প্রতিহত লাগে!
স্পর্শও রূপকথা, যেমন স্তন্যপানের স্মৃতি; তারপর
নিমেষেই, মেঘ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে
উড়ন্ত একটা ঘুড়ি বাড়িঘরে ধাক্কা খেতে থাকে!
যাত্রাবাড়ী
তোরা যারা হেঁটে গিয়েছিলি পাহাড়ে, আমি নিচ থেকে সবাইকে নাম ধরে ডেকে দেখেছি
গোড়ালিতে জোর থাকাটা জরুরি, নিজেকে উঁচু দেখাতে কাজে দেয়—
ভাবতেছি, অথৈ অবধি পা ফেলার আগে
একবার ঘুরে যাবো পুরাটা শহর;
তিনদিকে সিঁড়ি নিয়ে হাওয়া খায় ফ্লাইওভার,
আর তাতে দাঁড়ালে নিচকার মানুষ ও জীবিকা
কতখানি তুচ্ছ দেখায়, দেখবো;
তোমাদের সুনীল ছাতায়
বৃষ্টিকে হাসিখুশি ঝরতে দেখে
চিনচিন ব্যথাও বুকে চাপা পড়ে যায়, আর সেই ব্যথার ধারে এসে
সকালেই কোনো যাত্রী
যাবে বলে ‘নছিমন-নছিমন’ ডাকে!
একিলিস
উড়ন্ত কাশফুলে ধাক্কা খেয়ে শূন্যে থামে একটি জোনাক,
তার সাথে থেমে থাকছে বাতাস, পুঁইডগা আর থমথমে
রাতারগুল; পিছনে গ্রামের গুঞ্জনকে ধাওয়া করছে চাঁদ!
অশ্রু একমাত্র ভাষা যার
সেও থাকে অবর্ণিত, পুরোধাপ্রায় হেঁশেলের মতো
চোখে তার অনলসংকেত খেলা করে;
সেও এক পুরাতন দেয়াল পেয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়,
স্পষ্ট উচ্চারণে টানে সিগারেট!
এগিয়ে এসে মলিনতাকে শোনো নিজের
আর তোমার অর্ধেক আয়ু যাকে
গুনে গুনে বুঝিয়ে দিয়েছ তার নিদ্রাতুর মুখ ভেবে দেখো
শান্ত ও শারদে পূর্ণ, তোমাকে লক্ষ করছে আকাশবিদ্ধ হাওয়া,
এই পথে ব্যাকুল ভৈরবীকে কান্না মনে হয়,
রক্তপ্রবাহকে জলোচ্ছ্বাস মনে হয় হৃদপিণ্ডে।
এই ভ্রমে বিচূর্ণ হয়ে আসে ভ্রমণেরা
এক দিন নিষ্ফলতা আসে
এক দিন তৃণের বিস্তারে ধীর মনে হয়
ঘড়ির ডায়াল, আর ঘোড়ার লাগাম ধরে ধরে
উঠতে চাইছে বিক্ষত একিলিস, এরকম ভাবো নাকি তুমি?
সকলেই একবার অস্ত গিয়ে স্বরচিত গান
আদ্রতাকে ফিরে পায় বুকের বিসর্গ!