মায়াজাল
এইখানে পুকুর ছিল এইখানে উঠান
এইখানে পাখিদের ছিল কলতান
এইখানে জামগাছ ওইখানে জারুল
এইখানে ঘনবনে ছিল ভিমরুল।
এই পথ মেঠোপথ ছিল আঁকাবাঁকা
ঝিমঝিম নীরবতা, হিম ছায়াঢাকা
এইখানে মক্তব এই পাঠশালা
এখানটা মুখর ছিল হলে ভোরবেলা।
এইখানে দিঘি ছিল শানবাঁধা ঘাট
এইখানে ছেলেদের ছিল খেলার মাঠ
এইখানে ডোবা ছিল এইখানে জলা
এই মোড়ে বটতলায় বৈশাখী মেলা।
এইখানে ক্ষেতভরা ছিল তিল-তিসি
এই বনে ডাহুকের ডাক দিবানিশি
এইখানে খাল ছিল, এইখানে খেয়া
এইখানে হাট ছিল, খই-মুড়ি-মোয়া।
এইখানে সুখ ছিল নির্মল বাতাস
এইখানে বলাকায় ভরা ছিল আকাশ।
এইখানে ছোট ঘর টিন দেওয়া চাল
এইখানে আমাদের ছিল মায়াজাল।
কোথাও যাবো না
আমাদের টিনের চালার ঘর
আমাদের উঠোনে জমেছে শ্যাওলা
আমাদের বাড়ির সামনে পদ্মদিঘি
পদ্মফুলে মন উছালা
আমাদের পাড়ার আঁকাবাঁকা পথ
পথের পাশে আমাদের পাঠশালা
ভোর হতেই কচিকাঁচার ভিড়ে
আমাদের পাড়া উজালা
আমাদের গাঁয়ে বুড়ো বটগাছ
আমাদের গাঁয়ে বসে হাটখোলা
আমাদের গাঁয়ের অদূরে নদী
জোয়ারে জল উতালা
আমদের গ্রামে কাঠের পুল ব্রিজ
আমাদের খালে নড়বড়ে সাঁকো
আমাদের গাঁয়ে অভাব অনটন
খুব আধুনিক নাকো
আমাদের গাঁও হিন্দু মুসলমানের
আমাদের কানে আসে আজান উলুধ্বনি
আমাদের গাঁয়ের আমরা সবাই
আপন বলে জানি
এই গাঁও ছেড়ে যাব না কোথাও
এইখানে থাকে আমার ছোটবোন, মা
এই গাঁর সাথে মিতালি গড়েছি
কোথাও যাব না…
কিছু কথা
আমার কিছু কথা
ক্লাস রুমের শেষ বেঞ্চের রঙকরা কাঠে লেখা আছে
কিছু কথা আছে কিছু টুকরো কাগজে
শরতের মেঘ জানে কিছু কথা
ধবল জ্যোৎস্না, পূর্ণিমার চাঁদ
কৃষ্ণপক্ষের ঘুটঘুটে অন্ধকারও জানে কিছু কথা
কিছু কথা হাতের তালুতে লিখেছিলাম
কিছু ভেসে গেছে বৃষ্টির জলে
চৈত্রের খরত্তাপ জানে কিছু
থই থই হ্রদের স্বচ্ছ জলে ভাসিয়ে দিয়েছি কিছু কথা
কিছু কথা চাপা পড়েছে উপন্যাস বইয়ের ফাঁকা পৃষ্ঠায়
টেবিল ক্লথেও কিছু আছে
পঞ্জিকার পাতায় পাতায়
কিছু কথা বড় অভিমান করে আছে
বিছানার চাদরের নিচে, বইয়ের মলাটে
কিছু কথা আবদ্ধ আছে
সিথানের বালিশও জানে কিছু কথা
শেষ রাত্তির জানে কিছু কথা
মধ্য দুপুর জানে কিছু কথা
নিকেল করা বিকেল জানে কিছু কথা
কিছু কথা হয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড
কিছু কথা গিয়ে চাপ খাটিয়েছে অক্সিজেনে
কিছু মিথ্যে কথা জানে কিছু লোকজন
কিছু গোছানো কথা জানে কিছু বন্ধু
ছোটবোন টুসু একা একা জেনেছে কিছু
কিছু কথা বাষ্পের বিষফল হয়েছে
কিছু কথা
এখনো কেউ জানে না…