মাতাল হাওয়া
বিতর্কের কাছে দাঁড়াতে গেলে
মন কেমন করা সুগন্ধ আসে…
বাকরুদ্ধ জীবন স্থবির আয়নার মতো
এক অদ্ভুত নিলাঞ্জনায় স্কুল পালানো
শৈশব আসে…
সময়ের সাথে আজন্ম দুঃখ আমার,
এই জীবন তার তরে, আমাদের কোনো লেনাদেনা নেই
অন্ধ ফুটপাত ধরে রাতের খুনসুটি খেয়ে হেঁটে
বাড়ি ফেরা সেই মাতাল প্রেমিক
আজও ঠিকানাবিহীন নগরের বুকে খুনসুটি খায়
মেঘের কার্নিশে হৃদয়ের ওম রেখে
খুঁজে পাওয়া সেই বসন্ত দুপুর,
অনন্ত অঙ্গনে আঙুলে বাঁধি হারানোর সুর..
গোলাপের পাপড়িতে আরোপিত সন্ধ্যায়
আজ-ও মেলেনি সেই যুগন্ধর প্রেম
পরতে পরতে তুমুল অহমে ভেঙে গেছে আকাশের প্রাচীর
সাইক্লোন আসে, তুমুল বৃষ্টি আসে, ভৈরবী রাগে
মাতাল প্রেমিক জিপারের নেয়ার খুলে,
দমকা হাওয়ায় উড়ছে পথঘাট
এই বিবস্ত্র বাস্তবতায় তুমি নেই,
একদিন ঠিকই পৌঁছে যাবো তোমার ঠিকানায়…
বিজয় দিবস
অজস্র ফাটল নিয়ে দিন পার হয়
আতঙ্ক, সংশয় আর অস্থিরতা তো আছেই
যখন দেখি, চারদিকে চোখ বোলালে কেউ পাশে নেই
এক চাপা কষ্টে গুমরে ওঠে হৃদয় .
সবখানে সামঞ্জস্যহীন জীবন,
উড়ুক্কু হয়ে আমিও গোজর করি স্বরলিপি
বোকাবাক্সের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসি
যুদ্ধে জিতে যাওয়া সেই দিনের জন্য আনন্দ হয়
স্বাধীনতার স্বাদ রন্ধ্রে রন্ধ্রে না থাকায়
একটা পঙ্কিও তৈরি করতে পারিনি..
দীর্ঘ দারিদ্র্যের কষাঘাতে মেধাবী শৈশব
খয়েরি বিকেলের কারুকার্য শোভিত সময়
গলাকাটা কবুতরের মতো আকুলিবিকুলি করে
প্রেমের জন্য একটা গোলাপও জমাতে পারিনি
সেই মুমূর্ষু সময়ে হিংস্রতার লেলিহানে পুড়ছে আমার
হৃদয়,
মা সৌন্দর্য হারিয়েছে, বাবা সাহস হারিয়েছে
ভাইবোনেরা হারিয়েছি নিজস্ব সত্তা
এইসব উপাখ্যানের মধ্যে দেশ নিয়ে, মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে
একবারও ভাবার সময় হয়নি…
বিজয় দিবস মানেই সেই গৎবাঁধা অনুভব
মাইকের চিৎকারে ছুটে আসা সহস্র তীরের আঘাত
সদ্য কিশোরী বয়সের লুট হয়ে যাওয়া সম্ভ্রমে শুধু
হাহাকারের ব্যান্ড বাজে……
পুরুষ
পুরুষ বলতে তোমাকেই বুঝি
দুর্দান্ত নিষ্ঠুরতায় ভেঙে দেওয়া আদুলির মতো
ছুঁড়ে ফেলো ডাস্টবিনে,
যেখানে সদ্য জন্মানো মানব শিশুর উপদ্রব হয়,
প্রেমের বিষে নীল হওয়া কিশোরী
ওইসব স্বঘোষিত শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখে আসে…
পুরুষ এক অভিশাপের নাম,
যার আাঙলে বাজে নারী জীবন..
এইসব অগোছালো ভাবনা নিয়ে, তৃষ্ণা দৌড়ায়…
জানালার কাচ গলে ফিরে আসে বাতাসের তীব্রতা
রাতের খুনসুটি দেখতে চায়ের পেয়ালায় ঠোঁট ডুবাই
উদ্দেশ্যহীন ভাবনা নিয়ে স্ক্রল করি বৈকালি যাপন
এই অন্ধ অনুভবে উৎপল শুভ্রের মতো
কোনো বালিয়াড়ি পুকুর টুপটাপ ফোঁটায় শিশির ঝরায়।
কল্পনা
কী সব হাবিজাবি আঁকি!
বহুপাক্ষিকতার নিয়ম ঠিক এভাবেই,
প্রজন্মের আওয়াজ খেয়ে বিবাহিত নারী কলুষিত করেছে চতুষ্কোণ-
এ-ই রেখায় প্রচুর মায়া আছে
চমৎকার কোলাহল আছে
শহুরে চৌকাঠে
সেক্স ও অর্গাজমে
দুর্ঘটনায় আহত হয়,
পাখিদের নীড়ে ফেরার পথ
যদি মনে হয়, এ-ই রেখায়ই তোমার সড়ক পথ
তবে চলে এসো….
জোড়া শালিক
এইযে খুব ভোরে জানালার কাচ ধরে
আমারে ডাক দেও,
আমিও বেদনা নীল হয়ে আছি,
সঙ্গীহীন বড় বেদনার, একা এক জনমে কাটিয়ে দিয়ে
তার খোঁজ আজ-ও মেলেনি,
একা থাকা যায় বলো, সেই একাকীত্ব দূর করতে
ক্রয় করেছি পদ্মগোখরো, যার পরতে পরতে বিষ
আর এই বিষপানে খুইয়ে বসেছি আহ্লাদ।
হয়তো খুব বেশিদিন নেই শেষ নিশ্বাসের
আমি থাকবো না এই যাতনায় বিদীর্ণ হয়ে ফুলেরা ফুটবে
পাখি গান গাইবে,
এই জানালার ধারে অপরিচিত শালিকযুগল অন্য কারও ঘুম ভাঙাবে।
আরও পড়ুন: চিন্তাসূত্র সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের কলম থেকে