সেতার
রঙিন বেলুনবেলা
. প্রভাত আঙিনা জুড়ে সারসের ডানা—
সবুজ জোছনাগুলো কপোলে তরঙ্গ মেখে
. নদী হয়ে যায়…
দুপুর দরিয়াদিদি—ফুঁসে ওঠে মেঘে
. নন্দন ও নীপবন ঝড়ে তছনছ,
সারেঙের চোখ পোড়ে শাপলার রাগে—
হুইসেলে কেঁপে ওঠে মেঘের মুখোশ …
সায়াহ্ন মাটির ঢেলা মৃদঙ্গ বাজায়―
. গড়াতে গড়াতে ভাঙে
বুড়ো তটিনীর ঘরপোড়া পৃথিবীর বুক।
মাটির ইশারা
দোয়েলের ডাক শুনে ছোটে মুসাফির প্রত্যহ সুবহে শাম; শৈশব সৌরভে যায়—দুপুর গড়াতে গেলে বিবশ চোখের কোণে জাগে মায়ানদী, দূরের বন্দর;
শহরে সে দীর্ঘশ্বাস জমা রাখে—ইসটিশনে শপিংমলে ফুটপাতে মোড়ে; জাহাজের ভেঁপু, সাগর ও বনভূমি নিমিষে পেছনে ফেলে পাহাড়-চূড়োয়; চোখের আয়না জুড়ে অসীম আকাশ আর সাগরের ঢেউ—আঁকে সে নিজেরে নিজের কলবে—অশরীরী সুরে নাচে ময়ূখপেখম; ছায়ার পাঁচিল ভেঙে নিজেই উড়াল দেয় আয়ুর গোলক রথে।
কিছু নেই, কেউ নেই আঁধার রাতের কোলে পৃথিবী বদলে যায় মানুষ বোঝে না; হাতের দুমুঠো হতে অনায়াসে ঝরে পড়ে কবরের মাটি—অন্তিম আশ্রয়। যেতে যেতে যে পথিক নিজেকে চেনে না, দেখেও দেখে না সন্ধ্যা সমাগত—ছায়া তার ছবি আঁকে, কাঁদে অবিরত—মাটির ইশারা হাসে; বিলুপ্ত পথের মায়া শূন্যতাসুন্দর।
তটিনী
ঈশানে ধূসর ঢেউ দুই চোখ মেঘ এঁকে যায়, ছাই কুয়াশায়―অচেনা অঘ্রান রাতে চোখ পড়েছে চাঁদেতে ;
তটিনী, তোমার নাগরিক মুখ জলপাই চোখ; বেদম কবির বুকে আড়াআড়ি আনমনে হেঁটে গিয়েছিলো! প্রাত্যহিক কথামালা বেবাক বেদনাধারা এখনও কী তোমাকে আড়াল করে? নিমিষে পরখ করে হাজারও সংশয়ে!
দরাজ উঠোনে চারপাশে অন্ধকার; ভূতুড়ে বিজন বাট—জোছনা নামে না আর গুমাই বিলের অবারিত মাঠে, পরির পাহাড়ে—মুহুরি কিনারে জাগে সহজিয়া রাত।
কী এক মাতাল ঘ্রাণ চোখেমুখে মেখে এসেছিলে রোজ প্রাহ্ণে-অপরাহ্ণে; মিহিনময়ুখ জ্বেলে অকারণে ডেকে ডেকে কেঁদে কেঁদে অকূলে পালালে এক নালায়েক নাইয়রি!
মাটির মুরুলি হাতে তুমি কে? দুপুর, বেগানা রজনী, সবিতার পড়শির মতো এসে বিরহ ও বিলয়ে মিলালে শেষে…
ইশক ও আসনাই নয়, জলছায়া নয়— তুমি এক আদিমবণিক ক্রূর যাযাবর!