প্রণয়ের তীর্থ
মৃত্যুর মিছিলে হেঁটে হেঁটে আমি চলে যাবো দূরে
আত্মার বিচ্ছেদ হবে দেহ থেকে
পশ্চিম আকাশে সূর্য ডুবে যাবে পাখি নীড়ে চলে যাবে
জীবনের বাঁকে বাঁকে কবিতার কারুকাজ আঁকা রবে
এই আমি যদি ফিরে আসি ফাল্গুনের বাঁকা চাঁদ হয়ে
লেবু পাতার মতো সবুজ কোমল মন নিয়ে
সভয়ে-সলাজে।
এই আমি যদি ফিরে আসি ভোরের শিশির হয়ে
বসবো মুখোমুখি হলুদ নদীর তীরে
দুটো শাদা বক উড়ে যাবে প্রণয়ের তীর্থে।
ভালোবাসার ঝুলন্ত উদ্যান
কচি লাউয়ের ডগার মতো সবুজ-প্রকৃতি ভীষণঅসুখে
চোরকাঁটা বিঁধে আছে
হলুদ রঙের শাড়িপরা নারীর পায়ে
কুয়াশার জল কালো রঙের চুলের মধ্যে জমে আছে।
মহুয়া বনের—
মিষ্টি ঘ্রাণ নেওয়া বালকের জামার পকেটে লুকিয়ে আছে
বিষণ্ণতার রোদ।
পাহাড়ের ক্ষয়রোগে ঝরনার বুকে চলে দিন-দুপুরে
পাথরের ঠুকাঠুকি।
মুমূর্ষুর বিছানায় শুয়ে আছে বৃক্ষদেবী,
চোখে ভয় নিয়ে দৌড়ে পালায় বনের হরিণী।
মেঘরঙা পুরনো ডায়েরি খুলে দেখা হয়নি অনেকদিন
ধূলোবালি জমে ভীষণ-মলিন।
সভ্যতার অশ্লীল বাতাসে—
ভালোবাসার ঝুলন্ত উদ্যান বিনাশব্দে খসে পড়ে।
আয়না
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমি আমাকেই দেখছি,
কেবল দেখছি ছবিটি
চোখদুটো ঠিকঠাক, আমার চোখের মতো, ভাবছি
বাবুইপাখি আসে যদি।
ঠোঁট দুটো অবিকল কমলার খোয়া যেমন বলতে তুমি
কালো চুল ঘোর অমানিশা, রাত যখন নিশি
আমি হাসি। হাসিমুখ দেখি। ঠিক তোমার চারু হাসি
বাঁকা ঠোঁটের চাঁদের হাসি।
চোখে জল দেখি, ছুঁয়ে দেখি, জলে আঙুল ভেজে যদি
হৃদয় আমার দুঃখ-নদী,
কলকল ঢেউয়ে নদীর দু’কুল ভাঙে, ডোবে সমতল ভূমি
ওসব কিছুই শুনি না আমি।
মেলা থেকে কড়ি দিয়ে কেনা ঝকঝকে নতুন আয়না
বইয়ের মতো মলাটে বাঁধা
পাতা উল্টে-পাল্টে পড়ি, অক্ষর আকাশের তারা
ছবি দেখে আয়না বলে না কোনো কথা।