বুকদুধ
ফুলের ঘ্রাণের চেয়েও ভাতের ঘ্রাণ-গন্ধ গুরুত্বপূর্ণ
কিন্তু নিরন্নকালে কোথাও ভাত নেই।
অন্ধকারের মতো অভাব, মন্বন্তর
অন্ধকারের মতো দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, মনন্তর মন্বন্তর
বায়াফ্রায়, কাম্বোডিয়ায়, ইথোপিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ।
লঙ্গরখানায় খাদ্য সংকট। শুটকির মতো মানুষগুলো
রিলিফের দিকে ছুটে যাচ্ছে ক্ষুধার্ত মৌমাছি,
মিছিলের মতো মানুষ,
মানুষের মতো মিছিল, মিছিল, মিছিল
কৃষকের স্বজন হত্যা, হত্যা, হত্যা; অতপর আত্মহত্যা
আবেদিনের কাক আর কুকুরেরা লাশ খাচ্ছে লাশ!
হাহাকারে হাভাত হাত পেতে পেয়েছে কুড়ি পাড়া ঘুরে
সানকিতে দু’ মুঠো পচাপান্তা; ভিক্ষাভাত
হাড্ডিসার বাচ্চাকে বঞ্চিত করে একজন মা
একজন অনাহারী মা চোখ থেকে আসা নোনা জলে
ভাত মেখে খায়, গোগ্রাসে
তারপর সন্তানের জন্য কাঁদে…। কেঁদে কেঁদে বলে:
‘আমার পেটে এখন পান্তার শান্তি। এই শান্তিভাত থেকে দুধ হবে
তুই সেই দুধ খাবি; বুকদুধ।’
ভাতের গল্প
চিনি বা জেলি ছাড়াই
খালি পাউরুটিই পিঁপড়াদের খুব পছন্দ।
কেউ কেউ ভাতপাগল!
ভাতের গল্প, পৃথিবীর সেরা গল্প। ভাতের আবিষ্কারককে পুরস্কৃত করা হোক!
শিফট শেষে সারি সারি পিপীলিকা ঘরে পেরে, বারে যায়
হোমসিক শাদাশব্দ ‘ব্যাকহোম এডিক্টেড’—
নারীর টানে
নাড়ির টানে মাদকতার ঘোরে নেশাখোর, ভোরহীন নিঃশব্দ।
অনাত্মীয় শহরে ছেঁড়াবেড়া দাসজীবন ছিঁড়ে থাকে বড়ই গাছে।
বাটি চালানের দীর্ঘ ট্রেন টেনে নিচ্ছে মা কিংবা মাদকতার দিকে,
…স্টেশন নেই।
রাত দিনের সীমানা নেই, সন্ধ্যা নেই, সন্ধিক্ষণ নেই
শুধু শাদাশব্দ, নৈঃশব্দে জুঁই-জুঁই ভাতফুল ছড়িয়ে থাকে—
আহ, ভাত মাখালেই বাংলাদেশ!
ক্ষুধা
মৃত্যুর ক্ষুধার মতো গরিবদের একটু বেশি ক্ষুধা,
এবং অভাবও অনেক ধারালো
চিন্তা খাদ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, সংক্ষিপ্ত।
জলপানে পেটের প্রাপ্তি মেটে না—
লালিত তীব্র অনাহারকে জানি,
যন্ত্রণাদগ্ধ অভিজ্ঞতায় নেতিয়া পড়া হাত কাঁদে
অথবা কাঁপে
অনটনে নড়বড়ে পা নড়ে অথবা পাথর।
ঘুম-ঘুম এলোমেলো, অস্থির ক্লান্তি।
মৃত্যুর খুব নৈকট্যে থাকে ক্ষুধা
অথবা প্রতিবেশী
জীবনের জানালা দিয়ে আমি তাকে দেখেছি,
মৃত্যুও আমাকে দেখেছে উঁকি দিয়ে।