বিষণ্ন সরোবর
ধেনু নয়, এটা হয়, তুমুল খুর তুলে ছুটে আসে বাজি
মুক্ত করো কর, জলেতে ভেজাও আঁখি—ভিজুক পাণি
অবনী লোচনে কষ্ট মোচনে কোকনদ উঠিছে ডাকি
তরণীর ঘরণীতে সরোজ ছেড়েছে বাটী: ক্রন্দসী অবাক
নিমিষেই ভরে গেলো পাথরের ফুলদানি: মন্থরিত সুবাস
কোমল সুদর্শনা উড়ায়েছে গোপী দালান-কোটরজুড়ি
বিলে-ঝিলে একা কাঁদে নিশিথিনী দিনমান: শোকাহত পুরী
ফুল ছিঁড়ো নাকো রূপের মালিনি, বিষাদে ডুবিবে মৃগাঙ্করজনী
নীরদ পয়োদ তায়দ হাকিবে করাৎ কি-রি-কি-রি-
চপলা চুমুতে চমকিত শৈবালিনী মৃত্যুপুরী হয়ে যায়
তরু থেকে কুঠার তোলো: বিষাদের বেগ বাতাসে ছড়ায়।
নাগরদোলা
বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনো
এটা থেমে যায়: যখন থেমে যায় নিলয় অলিন্দ।
প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস আমাদের শ্বাস নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়
চোখের পলক পড়ে, আমরা বুঝি না
ফুসফুসে অবিরত চুইংগাম ফোলে—চুপসে যায়, বুঝি না
দীর্ঘশ্বাস কোনো শ্বাস নয় তবু বোঝা যায়
প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মনে করিয়ে দেয় বেঁচে আছি।
শুধু বেঁচে থাকাটা যাপিত জীবন, জীবন নয়।
জীবন একটু আনন্দ আহ্লাদও চায়
প্রগাঢ় জিহ্বায় হাওয়াই মিঠাই হয়ে মিলিয়ে যেতে চায়
বুনো ফুলের সুবাসমাখা নক্ষত্ররাতের মাধবী হাওয়ায়
আত্মনিবেদনে ডুবে থাকা বিশুদ্ধ বিরহ চায়
একটা পরিপূর্ণ জীবন নিজের সাথে মীমাংসিত কথোপকথন।
কানের দুপাশে হাত দাও, করতলে বাতাস খেলাও
কিছু শুনতে পাও? তবে শোনো
সব সুর খেলা করে ওখানে, মনমতো তরঙ্গ খেলাও।
চোখের পাতার নিচে পৃথিবীর সব সুন্দর
বন্ধ করো আঁখি, রঙের বাজিতে মনকে পোড়াও
জীবন ওড়ে, অসীমে ওড়াও; জীবন ডোবে, অতলে ডোবাও।
জীবন ব্যবসা, মৃত্যুর নামান্তর
কত পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলাম এই ব্যবসা—
জীবন ব্যবসা। জানি না সঠিক। কেউ জানে না।
আদি অকৃত্রিম মুনাফাহীন এই ব্যবসা।
ম্যাচের কাঠি কিংবা সিগারেটের মতো জ্বলে গেছে
একদিকে। তারপর ধীরে ধীরে শেষ হয়ে আসা।
তীব্র বেগে শেষের দিকে যাচ্ছি আমরা।
ফানুস উড়িয়ে, রঙিন বাদ্যের সাথে কী উৎসব!
অথচ—একটি জন্মবার্ষিকী মানে
মৃত্যুর দিকেই এক পা এগিয়ে যাওয়া।
বিজয় ডঙ্কা বাজিয়ে, হর্ষধ্বনি দিতে দিতে
স্তুতি আর বন্দনায় বিরক্ত হয়ে অত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে
পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় মৃত্যুর শীতল দুয়ারে
আর শেষ সময়ে এসে বাঁচার জন্য কী আপ্রাণ প্রচেষ্টা!
মৃত্যুর পরের কাব্য
কী বিস্ময় জেগে ওঠে হৃদয়ে
দুঃখ তারার মেলায় একদিন হারাতে হবে
শান বাঁধানো কবরে বৃষ্টিও পড়বে না।
আমার কবরটা কাঁচা রেখ তোমরা
নাহয় কবর দিও না
মমি করতে বলবো না কখনো
ফেলে রেখেই চলে যেও যত দ্রুত পার
দুঃখ পাব না।
মৃত দেহ নিয়ে শোক রচনা করে কোনো লাভ নেই
মরণোত্তর সংবর্ধনা দিয়ে কিছু অপচয় করো না।
ব্যক্তিত্ববাদ
একাকীত্ব আনন্দময়, একাকীত্ব বেদনাজাগায়,
একাকীত্বেই মানুষ পবিত্রজলে একাকার হয়ে যায়
একাকীত্ব মানুষকে শুদ্ধ হতে শেখায়
একাকীত্বের তুমুল আমিত্বে ডুবে গিয়ে কেউ কেউ হিটলার হয়
সিদ্ধিলাভের সাধনাও হেরা গুহাতে একাই করতে হয়
একনায়করাই শ্রেষ্ঠ
ঈশ্বর একক ও একা; সংঘবদ্ধরা শয়তান।