বেহুলার প্রতি
জেনেছে মানুষজন্ম—ইতিহাস কখনো করে না ক্ষমা
ধোবিনের ঘাটে সব অভিমান থাকুক জমা।
সবকিছু যাবে, সবকিছু মিথ্যে হয়ে যাবে
ভাসান নদে চর জেগে উঠবে—এ কথা জেনো
নিপীড়িতের চিৎকারে ভারী হয়ে উঠবে মর্ত্যের হাওয়া
উজানের ঢেউয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বালুকণা জড়ো হবে
লাল কাঁকড়া লুকাবে বালুচরে ছুঁয়ে দেওয়ার আগেই
শামুক শাবক পাবে না শৈশব
গর্জনে-ঢেউয়ে হারাবে সোনালি রোদে
এমন সময় মানুষের প্রয়োজন বড় বেশি
অথচ মানুষ কই!
শোষকের থলে থেকে গলে পড়ে রক্ত-মাংস
আত্মারা জেগে উঠবে বলে
ছায়াদের আড়ালে ব্যস্ত সময় হারালে তোমাকে পড়ে মনে।
পুনর্জন্ম পেলে তুমি হবে স্বর্গসঙ্গী
চম্পকনগরে রাত নেমে এলে চলে এসো মায়াবি শহরে
মানুষের ভির আর ঘামের গন্ধ ঠেলে
পাহাড়ি সুড়ঙ্গ বেয়ে নেমে এসো জলের রানি
এসো সর্ষেফুল আলপথ রাঙিয়ে
নেমে এসো ঈশ্বরের রূপে ধোবিনের ঘাটে।
সান্ত্বনা
তোমার মুখে আবির দেওয়ার আগে চেয়েছিলাম ভাত তুলে দিতে
সাদা রঙ পছন্দ নয় বলে মন খারাপ করলে
রঙিন হতে যেয়ে অন্ধকারে হারালে।
উৎসব দেখে সবাই, দেখে না ক্ষত
কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল যত
সবই তার দুঃখ নয় জেনো।
প্রতি মুহূর্তে মনে হয় চাইলে ছুঁতে পারি আকাশ
আঙুল নাড়িয়ে শাসাতে পারি নিস্তব্ধ উদ্ভিদ
অথচ কিছুই করা হয় না, কিচ্ছু না
নিকষ আন্ধারে বসে থাকি
কনে দেখা আলোয় তোমাকে দেখি
সান্ত্বনার বিকাল সাজাই একলা নীরবে।
কোনো একদিন বুদ্বুদের সঙ্গে ভেসে আসবে নতুন দিন।
তুমি কি বদলাবে না একরত্তি
সজীব পাতা হলদে হয় সময়ের নিয়মে
কুয়শারা মিলিয়ে যায় সামান্য রোদ্দুরে
খরস্রোতে প্রাণ পায় হাজারো নদী-পলিমাটি
সিগন্যালের লাল বাতি নিভিয়ে দিলে গাড়ির গতি
বৃষ্টির পানি জমে শহরের রাস্তা বদলায়
বদলায় না অনুভূতি, প্রাণের আকুতি।
সরব হয় না; নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে সময়
তোমার নিয়মে বেঘুরে হাঁটে আকাঙ্ক্ষা
তুমি কি বদলাবে না একরত্তি?
বিশ্ববিদ্যালয়ের করিডোর থেকে ইমানুয়্যেলস রেস্তোরাঁ
তুমি বোঝো না অলস সময়ের মানে।
প্রত্যুষে আমিও পাড়ি দেই পথ
ক্লান্ত পায়ে, পথের সন্ধানে
হলুদ সন্ধ্যা স্বরূপে ফিরে অপরূপ হাসিতে
অথচ বলতে পারি না নদী আমার প্রিয়
আগুনমুখী মেয়ে, কত আর নিজেকে পোড়াবে বলো
চলো জোনাকী হই, অতপর জ্বলে উঠি।