কুয়াশার নৃত্যমুদ্রা
কবিতার বাগানে ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল
কুলবৃক্ষ—একা। তার ব্যপ্তিতে আমি আজও উড়ে উড়ে
যাচ্ছি সাত-সাতটি আকাশ থেকে ব্যাবিলন। এবং
মেসপটেমিয়া থেকে নীল ও ফোরাত নদীর তীর। তারপর
সেই ঝুলন্ত উদ্যানে গিয়ে দেখি ফুল ও পাতার
আড়ালে শৈল্পিক সব জোছনামাখা নারী। আর মরুর
তৃষ্ণা নিয়ে উটেরা দেখে—আবে-হায়াতের জল পান করে
আরশে মুয়াল্লার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে ভক্তবৃন্দ।মাছের
কলিজার স্বাদ লেগে আছে তাদের মুখে। আর ক্ষুধা—
তৃষ্ণাহীন অনন্ত জীবন নিয়ে—সেবাদাসীদের বুকের আয়নায়
ঊনমানুষেরা খোঁজ করছে নিজেদের মুখ!
এখানে কোনোকিছুই ট্রান্সপারেন্ট নয়। সবকিছুতেই ছায়া
পড়ে আছে। ছায়ারা স্বপ্নে ওড়া ধোঁয়া-আঁধার, কুয়াশার
নৃত্যমুদ্রা। খসখস করে কলমেরা নাচে। আর অন্ধকারে
উড়ে যায় প্রেত ও পেঁচা। ওড়ে বোরাক এবং রফরফ।
মানুষ হে—কেমন তোমার মন! কবিকে আগুনে ফেলে
কেমন করে করো জয়ধ্বনি কবিতার! শিশির বিন্দুর ভেতর
সূর্যের মতো জ্বলজ্বল করে যে মরমিয়া তার জন্যে—
কোনোকালেই বরাদ্দ থাকেনি একটি আরশ।
বৃষ্টি-বাদলের ওহি
পাথরের রঙ নিয়ে কথা বলো না। পাহাড়ের খুব কাছে যারা
তারা বলুক। দূর থেকে তোমাদের মেঘ দেখো—কেমন ঘন এবং
কালো। রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে
পার। জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। ঘন কুয়াশার আড়াল থেকে
গম্ভীর কণ্ঠ ইথারে ভাসাও। আর অপেক্ষা কর জিব্রাইলের।
নতুন কোন ওহির। যদি আসে বৃষ্টি-বাদলের সুসংবাদ। ইলিশ
পোলাও এবং চিংড়ির মালাইকারির রেসিপি লেখো। রোদ এবং
জোছনা খেলে তোমাদের পালক গজাবে না। নিজস্ব ডানা না
থাকলে আল্লাহর বাহন বোরাকও বেঁধে রাখতে হয়। সীমাবদ্ধতার
আকাশমণ্ডলি তো আছেই। তোমরা যে নক্সা আঁকছ—বুড়িগঙ্গার
বুক চিরে যদি একটি আইফেল টাওয়ার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে
যায় সে সম্ভাবনাও ধারণায় রেখ! তোমাদের মাংস কাটার ব্লেডগুলো
খুব ধারালো। সিনার হাড় কাটা পড়ে, টের পাওয়া যায় না।
চৈত্রসংক্রান্তিতে বাতাসে কাচ্চি বিরিয়ানির ঘ্রাণকে ঘুড়ি বানিয়ে
উড়ানোর দক্ষতাও নজর কেড়েছে ঢাকাবাসীর। তারচেয়ে খোলায়
ভাঁজা খইয়ের মতো মুখর হয়ে ফোট না কেন! শিশুরা কণ্ঠ মেলাক—
শাপলাফুল, কদুফুল, শাপলাফুল, কদুফুল…
মাইন্ড অব গড
নিউটনের আপেলগাছ থেকে খসে খসে পড়ছে—কাশফুল, খোলা
ধানক্ষেত, সমুদ্র সৈকত, অবসর, বিকেলের ঘুম, স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন,
জোনাকির মৃদু আলো, ভোরের কুয়াশা, আলতারাঙা ঠোঁট, সোনার
আপেলের মতো বুক এবং একজোড়া দণ্ডিত চোখ। আর আমি
জাহান্নামের মতো আকাশ হয়ে বসে আছি।
বসে আছি—হিরোশিমা-নাগাসাকি হয়ে। অথবা বসে আছি ইউক্রেন,
ফিলিস্তিন আর কুর্দি সন্ত্রাসী হয়ে। তুমি যেন—ঈশ্বরের পা হয়ে প্রবেশ
করে আছ আমার ভেতর। অনন্তকাল পোড়াতে পোড়াতে ছুড়ে মারছ
আরও একটি হাইপারসনিক মিসাইল।
আমি দূর থেকে দূরে, আরও দূরে যেতে যেতে অভিসম্পাত করে
গেলাম এই স্রষ্টাকে। অভিকর্ষজ বল টিকিয়ে রাখার জন্যে অচিরেই
পৃথিবী তোমাকে বয়কট করবে। এবং ধ্বংস হবে মাইন্ড অব গড
অথবা বিচিত্র খেয়াল নামে ঈশ্বরের বৈষম্য।