উত্তর আমেরিকায় এপিটাফ
একটি রোদঝিল্লি বাতাসে দুলছিল উত্তর আমেরিকা
অবাক হব কি না ভাবতে ভাবতে
শিকড় উপড়ে ফেলার আনন্দ পৌঁছে দেয়—
এই নাও, তোমার গ্রিনকার্ড
যাও প্রাণ ভরে ভেসে বেড়াও
সেই কবে ঘরবাস হেচকি তুলে
কাঁদতে কাঁদতে বনে চলে গেল
সেই থেকে শুরু হলো বনবাস
বৃষ্টি ও তুষারের ব্যবধান
ঘুঁচিয়ে দিয়েছে মৌলিক অন্তর্ধান
ঠোঁটকাটা জ্যোৎস্না বিষণ্ন কণ্ঠ ছেড়ে গান গায়
উত্তরের হাওয়া লেগে হাড়ের চোয়াল হয় কঠিন
দিন মাস বছরের গোনাগুনতি শেষ হলে
ঘরে ফেরার ডাক গোপনে আমেরিকা খোঁজে
এখন এপিটাফের রঙ পালটে দিলেও
ঝিল্লি রোদে তা ধূসরই দেখাবে
বৃষ্টি বাকল
বৃষ্টি দেখব বলে তেরো হাজার কিলোমিটার দূর থেকে
উড়তে উড়তে হাঁপাতে হাঁপাতে
কেউ পৌঁছাল তার হারানো ভূমিতে দারুণ তৃষ্ণায়
ভোর রাতে সে এলো
এই সেই বৃষ্টি, চারদিক কাঁপিয়ে ভীষণ জলজ যানে
এই সেই বৃষ্টি, যার কাছে মাথা নোয়াল ধুলির আসর
এই সেই বৃষ্টি, যাকে দেখব বলে এই আগুন গ্রীষ্মে
বৃষ্টির গান আনন্দের আবহমান সুর বিছিয়ে দিলো
আমি যখন মরে যাই,গায়ের গন্ধে শুধু সেই গান লেগে থাক
পশ্চিমের খয়েরি পাখি দিনরাত একাকার ডেকে ডেকে যাক
জীবনের দুঃখসাঁতারক্ষণ বিমনা বিজন গোপনে দিয়েছি তুলে
সঙ্গীত সংকেতে। সমূহ আলাপ শেষে মিহিন কুয়াশা সুর
দাঁড়টানা সকালের ভৈরবী মহাকাল নির্জন নির্বাণ আকুল
রেখে যাক সবটুকু ভেসে আসা কোলাহল, প্রাচীন বৃষ্টি বাকল
ফেসবুক
সেইসব দুঃখ জয়ের গল্প বলতে বলতে রাত পার হয়ে গেলো
সচরাচর এমন হয় না। অকারণ বকবক, অহেতুক চ্যাটিং
কিছুই সয় না বলে নেই কোনো অন্ধভক্ত বা বাহারি স্তাবক
নেই মিছিলের মতো রাশি রাশি স্রোতমুখোর বন্ধুত্ব
আয়নাটি চৌচির টুকরো টুকরো মেঝেতে ছড়িয়ে আছে
মাতাল ঝড় এসে বদলে দিয়ে যেতে চায় সব পরিচয়
কোনো কোনো কণ্ঠস্বর, বিজন নির্জন নিঃশব্দ আপন
জানিয়ে দিয়ে যায় সভ্যতার সিঁড়িগুলো কোথায় লুকিয়ে
জয়-পরাজয় একই শব্দ একই অর্থ হয়ে চেপে আছে
কত যে অসম্ভব এখনো নিঃশব্দ অভিযানে চুপচাপ দাঁড়ায়ে
এমন কিছু খুঁজে চলছে যার নাম ভুলে গেছি সেই কবে
কাচের পৃথিবী ভেঙেচুরে নৌটঙ্কি দেখাচ্ছে খুব হেসে হেসে
রিং মাস্টার নামে
আমি পড়ছিলাম তোমার চিঠি
দেখতে পাচ্ছি একটি অজানা গোলোক ধাঁধার ছবি
এগুলো কি সত্যি সত্যি একদিন কেউ লিখেছিল
ভাবছি না, তাও ভাবনা আসছে উড়ে উড়ে
মনে নেই জানি আমাকে তেমন, তোমাকেও তাই
মাঝে মাঝে খুব বৃষ্টি এসে মনে করে দিয়ে যায়
মধ্যদিনের আলোর মাঝে কেউ একজন চাবুক হাতে
সিংহ বাঘের খেলা দেখাচ্ছে, সবার বুক খুব ধুক ধুক
কোন সিংহ কাকে যে খাবে কোনো আঁধারের মাঝে
কেউ একজন খেলা দেখাচ্ছে, রিং মাস্টার নামে
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে, চিঠি রেখে দেই খামে
মরুতীর্থ পথে
তার চেয়ে কিছুটা বড়ো থাকতে চেয়েছিলাম। প্রেমে
অসীমের গানে, উদাত্ত ক্ষমায়। আরাধ্য প্রেরণায়
যাবতীয় ধ্যানে, গোপন গভীরে
অন্য পরিক্রমায় সবকিছুতে সে-ই ক্রমে বড়ো হতে থাকে
ক্ষমা ও আনন্দে, হৃদয় ও প্রণয়ে তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার
কোনো সাধ্যি রইল না আর। অজানা বাতাসের দেশে
গল্প ও আখ্যানে সে মরুচারী বেদুঈনের উদ যন্ত্রের
উদাস উড়াল। ঝরে পড়া বেদনা কুড়িয়ে নিয়ে
হয়ে ওঠে আমার সমান। তারপর ধীরে গভীর আয়োজনে
নিঃশর্ত আলিঙ্গনে, কণ্ঠলগ্ন মগ্নতায় ভেসে ভেসে আরো
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে ওঠে
কিছুতেই পারি না তাকে পারুতে, শুধু বয়স বাড়তে থাকে
আজকাল শুনতে পাই, অপসৃত আলোর সন্ধানে সে নাকি
আমাকেই খুঁজছে মরুতীর্থ পথে