মালখানগর
আকাঙ্ক্ষা আমার বুদ্ধদেব বসুর সবুজ গ্রামটিতে ঘুরে ফেরে নির্জন বিকেলে। ধূসর সেতুটা সিমেন্ট রেলিং শীতের শুকনো খাল ঘন সবুজ দুই কিনার কঙ্কার চুলের মতো কোমল ঢেউ খেলানো। পশ্চিম আকাশে ঘড়ি দেখি কাঁটা বাঁকা হয়ে নামে জীর্ণ অট্টালিকার আড়ালে। তরুণীর কণ্ঠ ঈদানন্দে দীঘল ওড়না জাতীয় পতাকা আঁকে। ঠোঁট থেকে কামড়ের রক্ত শুষে নিয়ে স্ববর্ণে জড়িয়ে দূর থেকে দেখি যাচ্ছি আমি তার হাত ধরে পিচের সড়ক বেয়ে। কোমল পায়ের নিচে কাঁকড়ের কণা তাকে কষ্ট দিয়ে। হলুদ বিকাল আর নীরব সবুজ অলঙ্কৃত হয় মৃদু শীৎকারে। কঙ্কা আর শঙ্কা নেই। নাগরিক কবি আর কবিতা ভবন (বুদ্ধিজীবী রুদ্ধঘরে সঙ্গীহীন আর আত্মরতি সম্মোহনে দিন কাটায় না) মালখানগরে ইদানীং নাগরিক আস্বাদ জুটছে। কঙ্কারা নিঃশঙ্কে আজ যাবতীয় কোমলতা ধরে অধিবাস করে। অধরামাধুরী ফেনায়িত নাগরিক আধুনিক কবিতার ধারা ইছামতির শুকনো খাল হয়ে গেছে। বুদ্ধদেব বসু আজ দেখতে পেতেন তার প্রিয় পুরানা পল্টন মালখানগর গ্রামে।
অনন্ত উজ্জীবন
সীমিত বিস্ময়ে
ফুরিয়ে গেছে অনেক বহুদিন আগে
সেই দিন থেকে
চিনেছি নিজেকে
অথবা চিনিনি
বইয়ের পাতার ভেতর
ক্লান্ত পথিকের মতো ছায়ায় বিশ্রাম
নিয়েছি অনেক অশেষ রাত্রির মতো
ঘুমিয়েছিলাম বন্ধ চোখের ভেতর
পারতাম যদি
হাজার বছর
আমরা আরও
অন্ধকারের ছায়ার মতো কায়াহীন
অন্য এক আমি
অথবা আমিই
একটু দেখতে এপাশ ওপাশ ছুঁয়ে
পারতাম যদি এখানে থাকতে আর
বহুদূর যেতে কালের নিয়ম ভেঙে
নক্ষত্রের দেখা ঘটেছিল কৃষ্ণতায়
ভবিষ্যৎ পথে
ছুটে গেছি আমি অমাবশ্যা রাত্রিটির
ঠোঁটে চুমো খেতে
যেখানে প্রিয়ারা বলে কথা
নিচ দিকে চেয়ে
আবার আমরা সবে তাকে
করি অস্বীকার
সবুজ বাগান
আকাশে পেতেছি কান সবুজের গান
আদিগন্ত উচ্চকিত শব্দের বাগান
কল্যাণী বৈশাখী ঝড় ভেঙে দিয়ে যাক
নামকরণের প্রেমে লাভের ফারাক
পুরানো ব্যবসায় কৃত নিরুপায় দিন
ধারাপরিবর্তন রঙে ধারাবহ ঋণ
শীতল স্রোতের মতো তরল পাষাণ
প্রহরে প্রহরে চাই সুরের সমান
আদিগন্তে প্রবাহিত ঢেউ কোথা নাই কেউ
একা এক মুক্তজনে শব্দের সমাধি
নীরবতা অঙ্কুরিত আদিমতা আধি
নিয়ে যায় অন্য এক নিরাকার দেশে
অবশেষে একদিন স্বর্ণকার বেশে
সবুজ আগুনে পুড়ে পিছু পিছু এক
করে দিয়ে যায় সোনালি সন্ধ্যায় ত্যাগ
শব্দের বাগানে জীর্ণ সূর্য অস্ত ঠেলে
প্রভাতে সবুজ গান তবু হাসে খেলে
বৃত্তবদল
এ জীবনে নয়
আপন সত্যের মৃত্যু নাকি ধারণার পরাজয়
শাখার শেষের শোভা ফুল নাকি কলি
নাকি শুধু মৃত পত্রাবলি
অনুভবে নেই
স্বচ্ছতার ফড়িংয়ের ডানা সূক্ষ্মতার শিরা নিমেষেই
কাজ করে দূরবর্তী ধারণার সূত্র
অসংখ্য শূন্যটি যদি আজ অনন্ত পূর্ণতা ধরে
অথবা পূর্ণতা যদি কুৎসিত খঞ্জ রাজপুত্র
হয়েও শূন্যের মতো আপন প্রয়োজনের সীমায়
পূর্ণ হয়ে যায়
পিতার মুকুট চুরি করে
সময়ের বাধা দাঁড়ায় সমুখে অস্ত্র ধরে ধরে
আমি
প্রতীক্ষার ভেড়া গুনে গুনে
সময়ের দরজায় চুপ করে শুধু দাঁড়িয়ে থেকেছি
তুমি আছো কিনা নেই সময়ের অন্ধকার গর্তে চোখ রেখে
দেখতে পারিনি অভিজ্ঞতা অপেক্ষায়
দেখতে চাওয়ার অভিপ্রায় খুব সূক্ষ্ম হত্যাকাণ্ড
. শুধু এই টুকু আমি?
প্রতীক্ষার পালা অসমাপ্ত সারি সারি পিপীলিকা
হয়ত নতুন সংসার নিয়েছে পেতে গন্ধের আবর্তে
মৌমাছিদের আত্মাহুতির পালা প্রায় শেষ আবর্তে স্বাদের
পায়ের তলায় কিছুটা সময় ঠোঁট চেপে ভার সহ্য করে
. শুধু এইটুকু আমি?