আয়না
আঙুল পোড়ে, হৃদয় পোড়ে দূরে
দৃষ্টি তবু কাচের মত কঠিন
রঙের কাছে বিকিয়ে যাওয়া কবির
শ্বাস উড়ে যায় অবিশ্বাসের সুরে।
রাতের কানায় লোভের রঙিন আলো
স্রোতের মুখে আটকে আছে কলম
চোখের ভেতর পাঁজর ভাঙা মেঘে
হঠাৎ কোথাও বিদ্যুৎ চমকালো।
বিবেক ডাকে আয়না মিথ্যে বলে
পোষ মানে না বিক্রি হওয়া কলম
জুতোর তলায় সত্তা পোতা কবির
হৃদয় ভাসে আগুন নদীর জলে।
একটি শীতের কবিতা
প্রচণ্ড শীতের ভেতর থেকে যখন
উষ্ণতা উঠে আসে,
জেনে-বুঝে ঘুম বালিশের চোখ ফাঁকি দেই।
আমার অন্ধকার অবচেতনে শিল্পীর নিপুণ তুলির টানে
ফুটে ওঠে তোমার সদ্য স্নান সেরে আসা খোলা চুলের অবয়ব।
বছর বারো আগে শেষ ঘণ্টা শুনেছি কলেজের,
সেই শব্দ যেন আরও কাছাকাছি চলে আসে
কলেজ ফেস্ট… প্রথমবার তোমার কণ্ঠে
‘আমারো পরানো যাহা চায়’…
মনে পড়ে।
ভেসে ওঠে বইয়ের ভাঁজে রঙ হারানো ঝাউপাতার মতো
স্মৃতির ক্যানভাস।
একটা চেনা সুর ভেসে যায়
নেপালের অচেনা খুপরি থেকে ক্যানিং পেরিয়ে সিলেট-চট্টগ্রাম…
প্রচণ্ড শীতেও আঙুলের উষ্ণতা মাপি—
যখন শহর কলকাতা বলে ওঠে,
শীত বোধ হয় পাহাড় থেকে নেমে এলো এবার!
আমি মুচকি হেসে শীতের চোখে তাকাই…
তোমার আঙুল শুধু এ শরীর ছুঁয়েছিল
আঙুলেও এত উষ্ণতা থাকে,
যার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে শীত!
বিষাদ
বিষাদ তো এক বৃষ্টিদিনে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপি
বিষাদ তো এক শরৎ সকাল ঘাসের ওপর তিক্ত শিশির,
মিছিলজুড়ে উপচেপড়া অনর্থ ভিড়
কিংবা কোনো কোনো মদের বোতল…
. নতুন কোনো মদ্যপায়ী
. খুলছে ছিপি…
বিষাদ তো এক অনন্ত দিন
রাত্রি ঘেরা বিরাট চাদর
বিষাদ তো এক ক্ষুধার্ত ঘুম। ভাতের ওপর
শাক মেশানো হাতের আদর।
চোখের জলেও গন্ধ থাকে
বুকই শুধু সে গন্ধ পায়।
বুকের ভেতর শুষ্ক পাহাড়
ধুঁকছে যখন
. ধুঁকছে যখন
. জলের আশায়…
কিংবা কোনো ব্যর্থ প্রেমিক
নয়তো কোনো সব পাওয়া এক
ক্লান্ত পথিক
সব হারিয়ে
নির্জনতা আগলে রাখে
তাকেই যদি বিষাদ বলি
বিষাদ তবে মুক্তো-ঝিনুক-তিস্তা নদী
সমুদ্রে রোজ হারিয়ে যাওয়া মুখ চেনা ঢেউ
লোকাল ট্রেনের ব্যস্ত হকার। কর্পোরেটের প্রথম সারি।
বিষাদ তবে আগলে রাখা চোখের পলক।
. খুব চেনা কেউ।