একটি বিনম্র ফ্লাইওভার ও তার মরচের আকরিকগুলো
ইস্পাতের নিরবতাগুলো তাকে বেঁধে রাখে শূন্য মাঝারে। বুকের দুদিকে দোটানা। পাঁজরের মরচের গায়ে জমে থাকে ভারবহনের স্মৃতি। শূন্যের উভয় প্রান্তে গেঁথে রেখেছে সে অহঙ্কার, ভেঙে না পড়ার অদম্য কংক্রিট।
রাতের গভীরে যখন সব চলাচল থেমে যায় রোজ, সারাদিনের কষ্ট বোঝাই পণ্যের লরিগুলো ফিরে যায় কোজাগরী টার্মিনালের দিকে, তখন তারও ঘুম পায়, মাসি-পিসি পায়। নিরুত্তর আকাশের নিচে গাঁটের ইস্পাতগুলো খুলে রাখে নস্টালজিক ব্যথা।
রেলিঙের ছায়াঘেরা শহরের দেয়ালিকাগুলো এই কষ্ট বোঝে না, কায়াকল্প বোঝে না। গনগনে ধাতুর তরল থেকে গড়ে তোলা সংযোগগুলো তাই চির নিশ্চল, আত্মপ্রোথিত, শিরা-উপশিরাহীন!
অকস্মাৎ ফুটেজের পরিণাম শেষে নিজের অজান্তে আজ সে লুটিয়ে পড়েছে মধ্যশহরে…বিকেলের হলুদের গায়ে হঠাৎ পতনসর্বস্য এই ধ্বনি…ছুটে যাচ্ছে স্ট্রেচারের কাঠ…মায়াবি ক্রেনের টানে সরে যাচ্ছে মরচের আকরিকগুলো…
একটি মা গাছ ও ছিন্নপত্রাবলির ক্লোরোফিলগুলো
একটি মা বৃক্ষের সাথে কখনো কখনো আমার দেখা হয়। খোলা চুল, দুপুরের স্নান সেরে রোদের পীঠে দাঁড়িয়ে থাকে সে। পাতায় পাতায় শতরন্ধ্র রান্নাঘর প্রখর সূর্যতাপে সয়ে যাওয়া…
গাছটিকে কখনো হাসতে দেখি না, কাঁদতেও দেখি না প্রাণ খুলে। মাথানিচু সংসারে দুপুরের দাওয়ায় যেন চিরকাল হাতপাখা নিয়ে বসে থাকে সে, পাতার অক্সিজেনগুলো বাতাসে ছড়ায়…
ঝড়ে ও বিদ্যুতে মা গাছটির কোনো রা নেই।
ডালপালা ভাঙে,শব্দ হয়, ঝড় লাগে। তার কোনো প্রতিবাদ নেই। দেনা-পাওনার সংসারে চারপাশ থেকে সে কেবল টেনে নিচ্ছে নিকষ কার্বন। মাঝে মাঝে দুরের পাখিটি আসে। মগডালে বেঁধে রেখে যায় খড়কুটো, প্রণয়ের ডিম…
গত বৈশাখে সমূলে লুটিয়ে পড়েছে যে পুরুষ বৃক্ষটি তার কাছেও কোনো অনুযোগ ছিল না কোনোদিন। বিচ্ছেদের বেদনায় ভরা ডালপালাগুলো আবার ছড়িয়ে দিয়েছে সে বৃষ্টির কাছে। বাচ্চা গাছগুলো এ নিয়েই লেপ্টে থাকে তেল চিটচিটে আঁচলের গায়ে…
শুধু সইয়ের বাড়ি থেকে যে দুরের পাখিটি আসে তার সাথে কথা বলে অচিন পাতাটি। দুজনের কত কথা হয়! পরস্পরের কাছে যে যার গল্প ঢালে। মা গাছটির বুকের কার্বনগুলো এভাবেই হালকা হয় রোজ সন্ধ্যায়। ভোরবেলা খুলে যায় ছিন্নপত্রাবলির ক্লোরোফিলগুলো…